• রেলমন্ত্রীর বচন শুনে হাসছেন নিত্যযাত্রীরা, ৮০ শতাংশ পাংচুয়ালিটি! আকাশ কুসুম কল্পনা
    এই সময় | ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, হাওড়া: কয়েক দিন আগে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব রাজ্যসভায় দাবি করেছেন, সামগ্রিক ভাবে ভারতীয় রেলের পাংচুয়ালিটি (সময়ে ট্রেন চলাচল) বেড়ে ৮০ শতাংশে পৌঁছে গিয়েছে, যা নাকি ইউরোপের অনেক দেশের থেকেও ভালো। রেলমন্ত্রীর এই বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের অভিজ্ঞতাকে কিছুতেই মেলাতে পারছেন না হাও়ডা–খড়্গপুর শাখার নিত্যযাত্রীরা। এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করার পাশাপাশি সোশ্যাল মিডিয়ায় রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন অনেকে। তা নিয়ে রীতিমতো ‘ট্রোলড’ হতে হচ্ছে রেলমন্ত্রীকে।

    হাওড়া–খড়্গপুর শাখায় অনিয়মিত ট্রেন চলাচলের জন্য দীর্ঘদিন ধরেই ক্ষোভে ফুঁসছেন নিত্যযাত্রীরা। বিশেষ করে যাঁরা লোকাল ট্রেনে যাতায়াত করেন, তাঁদেরকে রোজই ভোগান্তির মুখে পড়তে হচ্ছে। যাত্রীদের একটা বড় অংশের অভিযোগ, সিগন্যালিংয়ের সমস্যা, ট্র্যাক মেরামত, রেলের আধুনিকীকরণের নামে হাওড়া–খড়্গপুর শাখায় দীর্ঘদিন ধরেই ট্রেন বিভ্রাট লেগেই রয়েছে। অধিকাংশ দিনই সমস্ত শাখার লোকাল ট্রেন দেরিতে চলছে। খড়্গপুর, মেছেদা, পাঁশকুড়া, মেদিনীপুর, হলদিয়া, আমতা–সহ সমস্ত সেকশনের লোকাল ও প্যাসেঞ্জার ট্রেন গড়ে এক থেকে দেড় ঘণ্টা দেরিতে হাও়ডায় ঢুকছে। কখনও সেটা দু’–আড়াই ঘণ্টা পার হয়ে যাচ্ছে। শুধু টিকিয়াপাড়া থেকে হাও়ডা স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে পৌঁছতে কখনও ৩০–৪০ মিনিট সময় লাগছে। তাই রেলমন্ত্রীর বক্তব্য শুনে কিছুটা অবাকই হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা।

    দক্ষিণ–পূর্ব রেলের হাওড়া–জকপুর প্যাসেঞ্জার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অজয় দলুইয়ের কথায়, ‘হাওড়া–খড়্গপুর শাখায় সময়ে ট্রেন চলে শুনলে লোকে হাসবে। রেলমন্ত্রী যে পাংচুয়ালিটির গল্প শোনাচ্ছেন, এই কথাটাই যদি উনি হাওড়া–খড়্গপুর শাখার যাত্রীদের কাছে এসে বলেন, তা হলে হয়তো বিক্ষোভের মুখে পড়বেন। এখানে ১৫০ জোড়ার বেশি লোকাল চলে। তার অধিকাংশই গড়ে দেড় থেকে আড়াই ঘণ্টা লেটে চলে।’ তাঁর দাবি, গত সোম ও মঙ্গলবার হাওড়া থেকে খড়্গপুর লোকাল ১ ঘণ্টা ২০ মিনিট এবং দেড় ঘণ্টা লেট করে ছেড়েছে এবং নির্ধারিত সময়ের অনেক পরে গন্তব্যে পৌঁছেছে।

    হাওড়া–খড়্গপুর শাখার নিত্যযাত্রী অমল ভৌমিক বলেন, ‘কিছুদিন আগে এক মিটিংয়ে রেলের কর্তারা বলেছিলেন, ২২ শতাংশ পাংচুয়াল হয়েছে। এখন মন্ত্রী বলছেন ৮০ শতাংশ। কোনটা ঠিক, সেটাই বুঝতে পারছি না। আমাদের যা অভিজ্ঞতা, তাতে বলতে পারি, দক্ষিণ-পূর্ব রেলের ক্ষেত্রে এই পরিসংখ্যান একদমই প্রযোজ্য নয়। আমরা প্রতিদিনই ট্রেন লেটের যন্ত্রণা ভোগ করি।’

    বুধবার হাওড়া স্টেশনে ট্রেন ধরার জন্য অপেক্ষা করছিলেন সঞ্জয় পাল। কথায় কথায় তিনি জানালেন, ‘মন্ত্রীর কথা শুনে যে কোনও লোকেরই ভালো লাগবে। কিন্তু বাস্তব ছবিটা সম্পূর্ণ আলাদা। হাওড়া–খড়্গপুর শাখায় অফিস টাইমে লোকাল ট্রেন ৩০-৪০ মিনিট লেটটাই নরমাল।’

    উলুবেড়িয়া থেকে লোকাল ট্রেন ধরে প্রতিদিন অফিস যাওয়া আসা করেন আরতি মণ্ডল। তিনি বলেন, ‘ট্রেন লেট করলেই ভিড় এতটাই বেড়ে যায়, যে মহিলাদের পক্ষে ট্রেনে ওঠাই দায় হয়ে পড়ে। মাঝে অনেক দিন বাসে করে হাওড়া যেতে হয়েছে। বহু ডেইলি প্যাসেঞ্জার ট্রেনের বদলে এখন বাসে যাতায়াত করছেন।’ বাগনানের রতন ঘোষের অভিজ্ঞতাও মোটের উপরে একই রকম। বলেন, ‘একটা ট্রেন লেট করলে অফিসের হাজিরা খাতায় লেটমার্ক পড়ে যায়। গোটা দিনটাই নষ্ট হয়ে যায়। এই যন্ত্রণাটা রেলমন্ত্রী বুঝবেন না।’

  • Link to this news (এই সময়)