জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ব্রিগেডে '৫ লক্ষ কণ্ঠে গীতাপাঠ' অনুষ্ঠানের দিন চিকেন প্যাটিস বিক্রেতাকে (Chicken Pattis Seller) মারধরের ঘটনায় তীব্র বিতর্ক শুরু হলে, সেই বিষয়ে মুখ খুললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (CM Mamata Bandyopadhyay)। কৃষ্ণনগরের জনসভা থেকে তিনি স্পষ্ট বার্তা দেন, বাংলায় গা-জোয়ারির রাজনীতি চলবে না, আইন নিজের পথে কাজ করবে। এই ঘটনায় ময়দান থানার পুলিস দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে তিন অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে বৃহস্পতিবার।
ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে গত রবিবার গীতাপাঠের আয়োজন করেছিল সনাতন সংস্কৃতি সংসদ। সেই ধর্মীয় অনুষ্ঠান চলাকালে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করায় খাবার বিক্রেতাকে (Pattis Seller beaten up) হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে। জানা গিয়েছে নিগ্রহের শিকার ওই ব্যক্তির নাম শেখ রিয়াজুল। দীর্ঘদিন ধরে নিরামিষ ও আমিষ দুই ধরনেরই প্যাটিস বিক্রি করেন তিনি ধর্মতলা, ইডেন গার্ডেন্স চত্বরে।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ভিডিয়োতে দেখা যাচ্ছে, মুরগির মাংসের পুর যুক্ত প্যাটিস বা পাফ বিক্রির কারণে 'রোষানলের' শিকার হতে হচ্ছে মি. রিয়াজুলকে। তাকে মারধর করা হয়, কান ধরে ওঠবস করানো হয় এবং বাক্সে থাকা খাবার মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়।
অভিযোগ, মোহম্মদ সালাউদ্দিন নামে আরেক বিক্রেতাকেও একইভাবে হেনস্থার শিকার হতে হয়েছে।
ওইদিন যারা এই বিক্রেতাদের ওপর চড়াও হন, তারা গীতা পাঠ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে এসেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় ময়দান থানায় অভিযোগ দায়ের হয়েছে। ডিসিপি সাউথ প্রিয়ব্রত রায় অভিযোগ দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করে জানিয়েছেন ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে।
অভিযুক্তরা হলেন:
সৌমিক ঘোষ (উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা)
স্বর্ণেন্দু চক্রবর্তী (অশোকনগর)
তরুণ ভট্টাচার্য (হুগলির উত্তরপাড়া)
মুখ্যমন্ত্রীর ক্ষোভ ও হুঁশিয়ারি
ঘটনার তীব্র নিন্দা করে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, 'আজ এক জন গরিব হকার তার জিনিস বিক্রি করতে গিয়েছে। তাকে ধরে মেরেছে। যারা গায়ে হাত দিয়েছে, সব ক’টাকে অ্যারেস্ট (গ্রেফতার) করেছি। এটা বাংলা, এটা ইউপি (উত্তরপ্রদেশ) নয়। এখানে তোমাদের হুকুম চলবে না, আদেশও চলবে না।'
তিনি আয়োজকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। তাঁর কটাক্ষ, 'গীতাপাঠ তো ঘরেই করা যায়। তার জন্য ব্রিগেডে পাবলিক মিটিং কেন? ঠাকুর-দেবতা মনের মধ্যে থাকেন। ধর্ম মানে মানবিকতা—হিংসা নয়।' সর্বধর্ম সমন্বয়ের বার্তা দিয়ে তিনি বলেন, 'আমি থাকতে বাংলায় ধর্মে ধর্মে, বর্ণে বর্ণে বিভেদ বরদাস্ত করব না।'
মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি বিজেপিকে নিশানা করে অভিযোগ করেন, শান্ত বাংলায় ধর্মকে হাতিয়ার করে অশান্তি ছড়ানোর চেষ্টা হচ্ছে। তিনি বিজেপিকে ‘হ্যাংলা পার্টি’ বলেও কটাক্ষ করেন।
ঠিক কী হয়েছিল ব্রিগেডে?
গত রবিবার আরএসএস ঘনিষ্ঠ সনাতন সংস্কৃতি সংসদ ব্রিগেডে এই বিশাল গীতাপাঠ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিল। যেখানে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস এবং পশ্চিমবঙ্গ বিজেপির শীর্ষস্থানীয় নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
ওইদিন মহম্মদ সালাউদ্দিন (তপসিয়ার বাসিন্দা) এবং শেখ রিয়াজুল (আরামবাগের বাসিন্দা) নামে দুই প্যাটিস বিক্রেতা ময়দান চত্বরে চিকেন প্যাটিস বিক্রি করতে যান। অভিযোগ ওঠে, অনুষ্ঠানের শামিল হওয়া কয়েকজন যুবক 'ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রি কেন?' এই প্রশ্ন তুলে তাঁদের হেনস্তা করে। প্যাটিস ফেলে দেওয়া, মারধর করা এবং একজন বিক্রেতাকে কান ধরে ওঠবস করানোরও অভিযোগ ওঠে। রিয়াজুলের প্রায় ৩ হাজার টাকার খাবার নষ্ট হয়। এই ঘটনার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। জানা যায়, ধর্মীয় অনুষ্ঠানে চিকেন প্যাটিস বিক্রি কেন? এই প্রশ্ন তুলেই হামলা চালানো হয় তাঁদের উপর।
পুলিসের দ্রুত পদক্ষেপ
ঘটনার পর গত মঙ্গলবার মহম্মদ সালাউদ্দিন ও শেখ রিয়াজুল ময়দান থানায় পৃথকভাবে অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ অভিযোগের ভিত্তিতে জোড়া এফআইআর রুজু করে এবং তদন্ত শুরু করে। সমাজমাধ্যমে ভাইরাল হওয়া ভিডিয়ো এবং ছবি দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করা হয়।
অন্য দলের প্রতিক্রিয়া
এই ঘটনায় তৃণমূল ও সিপিএম প্রথম থেকেই সরব ছিল। তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছিলেন, 'আমিষ খাবার যাঁরা খান না, তাঁদের কিনবেন না। কিন্তু বিক্রেতাকে মারধর করবে কেন?' অন্যদিকে, বাম আইনজীবী সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ও এফআইআর দায়ের করেছিলেন।