'বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের নামে বিশ্ববিদ্যালয় বানানো হোক', দাবি সাহিত্য সম্রাটের পরিবারের
আজ তক | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
সম্প্রতি কথা সাহিত্যিক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়কে নিয়ে লোকসভায় আলোচনা হয়েছে। 'বন্দে মাতরম' নিয়ে সেই আলোচনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী 'বঙ্কিমদা' বলায় বিতর্কও হয়। তবে সেই সবকিছুর ঊর্ধ্বে উঠে লেখকের কাজকে স্মরণ করা দরকার বলে মনে করেন বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্য়ায়ের পরিবারের সদস্যরা। অ্যাজেন্ডা আজতকের মঞ্চে এসেছিলেন 'রাজসিংহ'-র রচয়িতার পরিবারের দুই সদস্য।
'বন্দে মাতরম' নিয়ে অনেক অজানা গল্প শোনান লেখকের পরিবারের দুই সদস্য সজল চট্রোপাধ্য়ায় ও জয়দীপ চট্টোপাধ্য়ায়। এই গানটি লেখার পর বঙ্কিমবাবু নাকি তাঁর বড় মেয়েকে দেখিয়েছিলেন। তিনি গানটিকে তেমন কার্যকর মনে করেননি। এমনকী 'আনন্দমঠ' উপন্যাসে না রাখারও পরামর্শ দিয়েছিলেন। তবে লেখক গানটি রাখার পক্ষে ছিলেন। তিনি নাকি বলেছিলেন, 'আমরা যখন থাকব না, চলে যাব তখবন এই গানটি নিয়ে আলোচনা হবে।'
জয়দীপ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'আমরা ছোটবেলায় এই গানের অনেক গল্প শুনেছি। এই গানের প্রশংসা শুনে বড় হয়েছি। একবার ভাবুন, বঙ্কিমবাবু আমাদের শিখিয়েছিলেন, দেশের চেয়ে বড় আর কিছুই নয়। দেশ আমাদের অস্তিত্বের সারমর্ম। এই গানের শক্তি কল্পনা করুন, ফাঁসিতে ঝুলন্ত ব্যক্তির মুখে কোনও দুঃখ নেই, তাঁর ঠোঁটে কেবল বন্দে মাতরম। এটি কেবল গান নয়, মন্ত্র। বঙ্কিমচন্দ্র আমাদের দেশকে মা হিসাবে বিবেচনা করতে শিখিয়েছিলেন। তাই তাঁর নামে একটি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়া প্রয়োজন। ভারতের প্রতিটি কোণে, প্রতিটি রাজ্যে বঙ্কিম ভবন গবেষণা কেন্দ্র এবং বন্দে মাতরম ভবন চাই। যাতে মানুষ কখনও বন্দে মাতরম ভুলে না যায়।'
জয়দীপ আরও দাবি করেন, বঙ্কিমচন্দ্রের নামে নির্মিত গবেষণা কেন্দ্র পেশাদার শিক্ষা থেকে আলাদা করে ভারতের সাংস্কৃতিক শিক্ষাগত ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখার জন্য কাজ করতে পারে। তিনি বলেন, 'ছোটোবেলায় আমরা বাড়িতে শুনতাম, বঙ্কিমচন্দ্রবাবু যখন প্রশাসনিক চাকরিতে থাকতেন এবং বাড়ি থেকে দূরে যেতেন তখন তিনি কাচের বোতলে বাবা-মায়ের পায়ের জল সঙ্গে করে নিয়ে যেতেন। তিনি বাবা-মাকে নিজেই ঈশ্বর বলে মনে করতেন। অতএব, শিক্ষা ব্যবস্থার এমন একটি প্রজন্ম এবং সমাজ তৈরি করা উচিত যা আমাদের ঐতিহ্যকে বাঁচিয়ে রাখে।'
মঞ্চে উপস্থিত কবি কুমার বিশ্বাস বলেন, 'বন্দে মাতরম ভারতের মূল চেতনার মন্ত্র। এই গান কেবল কোনও হিন্দুদেবী বা দুর্গার পূজা নয়। এই গানে দেশকে বলা হচ্ছে যে তুমিই দুর্গা, তুমিই লক্ষ্মী, তুমিই সরস্বতী এবং তুমিই কালী। অন্য কথায়, আমাদের কাছে সবকিছুই দে। এই অনুভূতি হঠাৎ বা রাতারাতি উদ্ভূত হয়নি। আমাদের কাছে সবকিছুই দেশ। তিনি বলেন যে এই অনুভূতি হঠাৎ বা রাতারাতি উদ্ভূত হয়নি, বরং আমাদের মা হল পৃথিবী আর আমরা তার পুত্র।'
বঙ্কিমচন্দ্রের পরিবারের সদস্যদের দাবি, স্বাধীন ভারতে কেউ ভারত মাতার পুজোর বিরোধিতা করেনি। তবে সরকার প্রশ্ন তুলেছে। তাতে সন্দেহ নেই। 'আজ প্রতিটি রাস্তায় বন্দে মাতরম প্রতিধ্বনিত হওয়া উচিত ছিল। কিন্তু তা হয়নি। রাজনৈতিক নেতারা একে অপরের দোষ ধরতে ব্যস্ত।বন্দে মাতরম আমাদের পূর্বপুরুষের লেখা মহান মন্ত্র। কেউ আমাদের এর থেকে আলাদা করতে পারবে না।'