জি ২৪ ঘন্টা ডিজিটাল ব্যুরো: ঐতিহ্যবাহী শান্তিনিকেতনের পৌষমেলা আগামী ২৩ ডিসেম্বর থেকে ২৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত পূর্বপল্লির মাঠে অনুষ্ঠিত হবে। এবারের মেলাকে দুর্নীতিমুক্ত ও দূষণমুক্ত করতে বিশ্বভারতী কর্তৃপক্ষ এবং জেলা প্রশাসন একাধিক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। প্লট বুকিং নিয়ে প্রতি বছর দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে৷ সেটা রুখতেই এ বার পদক্ষেপ করা হচ্ছে। যাঁরা প্লট বুক করেছেন, তাঁরাই পেয়েছেন কি না সেটা ২২ ডিসেম্বর সরজমিনে দেখবে কমিটি৷
বৃহস্পতিবার বিশ্বভারতীর কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সভাকক্ষে এক উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে এই সিদ্ধান্তগুলি নেওয়া হয়েছে।
স্টল বুকিংয়ে স্বচ্ছতা: দুর্নীতির পথ বন্ধ
প্রতি বছর মেলার মাঠে স্টল বুকিং নিয়ে যে 'কালোবাজারি' ও দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, তা রুখতে এবার পুরো বুকিং প্রক্রিয়াটি সম্পূর্ণ অনলাইনে করা হবে।
অনলাইন বুকিংয়ের সময়সূচি:
অগ্রাধিকার: ২০২৪ সালের মেলায় যাঁরা স্টল দিয়েছিলেন, তাঁরা ১৫ ও ১৬ ডিসেম্বর প্লট বুক করতে পারবেন।
সকলের জন্য উন্মুক্ত: ১৭ ডিসেম্বর থেকে সকলের জন্য অনলাইন বুকিং সাইট খুলে দেওয়া হবে।
ফি: প্লট বুকিংয়ের ফি গত বছরের মতোই থাকছে।
বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষ বলেছেন, 'কোনোরকম কালোবাজারি চলবে না। অনলাইনে বুকিং হবে।'
কমিটি গঠন ও নিরাপত্তা জোরদার
প্লট বুকিংয়ের দুর্নীতি রুখতে বিশ্বভারতী একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি ২২ ডিসেম্বর থেকে মাঠে প্রদক্ষিণ করবে এবং খতিয়ে দেখবে—যাঁরা প্লট বুক করেছেন, তাঁরাই স্টল দিয়েছেন কি না। এর মাধ্যমে একাধিক প্লট বুক করে চড়া দামে তা বিক্রি করে দেওয়ার অভিযোগ বন্ধ করা যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা: গত বছর চুরি ও অন্যান্য ঘটনার অভিযোগ ওঠায়, এবার নিরাপত্তায় আরও কড়াকড়ি আনা হচ্ছে। অতিরিক্ত বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার রানা মুখোপাধ্যায় জানিয়েছেন, "মেলায় সর্বক্ষণের পুলিশ ক্যাম্প থাকবে। নিরাপত্তার জন্য সাদা পোশাকের পুলিশ, মহিলা পুলিশ, সিসি ক্যামেরা, ওয়াচ টাওয়ার এবং সার্ভিল্যান্স টিম মোতায়েন থাকবে। ট্রাফিকের দিকেও বিশেষ নজর দেওয়া হবে।"
পরিবেশ দূষণ রোধে কঠোরতা
২০১৬ সালে পরিবেশ কর্মী সুভাষ দত্তের একটি মামলার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিবেশ আদালত পৌষমেলার জন্য বেশ কিছু দূষণবিধি বেঁধে দিয়েছিল। সেই রায় মেনে এবার পরিবেশ দূষণ রুখতে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। গঠিত কমিটি এই বিষয়টিও খতিয়ে দেখবে এবং প্রয়োজনমতো ব্যবস্থা নেবে।
বৈঠকে প্রশাসন ও বিশ্বভারতী
বিশ্বভারতীর উপাচার্য প্রবীরকুমার ঘোষের তত্ত্বাবধানে অনুষ্ঠিত এই বৈঠকে রাজ্যের কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি ফায়জুল হক (কাজল শেখ), বোলপুর মহকুমাশাসক অনিমেষকান্তি মান্না, বোলপুর পুরসভার চেয়ারপার্সন পর্ণা ঘোষ সহ শান্তিনিকেতন ট্রাস্ট ও অন্যান্য সরকারি দপ্তরের আধিকারিকেরা উপস্থিত ছিলেন। বীরভূমের জেলাশাসক ধবল জৈন ও জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ সিং ভার্চুয়ালি বৈঠকে যোগ দেন।
কারামন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ বলেন, 'বীরভূম জেলা প্রশাসন সুষ্ঠুভাবে পৌষমেলা করতে সবরকম সহযোগিতা করবে।'
পৌষমেলার ইতিহাস সংক্ষেপে
১৮৪৩ সালের ২১ ডিসেম্বর (৭ পৌষ) মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর ব্রহ্মধর্মে দীক্ষিত হন। এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৮৪৫ সালে তিনি উপাসনা ও ব্রহ্ম মন্ত্রপাঠের ব্যবস্থা করেন, যা পৌষ মেলার সূচনা বলে ধরা হয়। ১৮৯৪ সাল থেকে ব্রহ্মমন্দির সংলগ্ন মাঠে এই মেলার সূচনা হয়। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রনাথের মহাপ্রয়াণ এবং ১৯৪৩ সালে মন্বন্তরের কারণে মেলা প্রভাবিত হলেও ১৯৪৪ সাল থেকে আবার সমাবর্তন সহ নিয়মিত হতে থাকে। ১৯৫২ সাল থেকে মেলা ব্রহ্মমন্দির সংলগ্ন মাঠ থেকে পূর্বপল্লির মাঠে স্থানান্তরিত হয়। কোভিডের সময় কয়েক বছর বন্ধ থাকার পর, ২০২৪ সাল থেকে বিশ্বভারতীর তত্ত্বাবধানে আবার মেলা শুরু হয়েছে।