অর্কদীপ্ত মুখোপাধ্যায়: আবাসনে বুথ তৈরি নিয়ে কমিশনের কড়া অবস্থান, তৃণমূলের আপত্তি সত্ত্বেও জেলাশাসকদের নতুন করে সমীক্ষার নির্দেশ। শহর কলকাতা থেকে শুরু করে গোটা রাজ্যে এবার হাইরাইজ আবাসনে হতে চলেছে আসন্ন ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের (West Bengal Assembly Election 2026) বুথ। নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী দুইবার অকৃতকার্য হওয়ার পর নির্বাচন কমিশন বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়ালের (Manoj Kumar Agarwal) কাছে এই বিষয়ে সবিস্তারে জানতে চায়। কেন হল না কোন বুথ শহরের হাইরাইজ আবাসনগুলোয়? বৃহস্পতিবার মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ কুমার আগরওয়াল জানিয়েছেন রাজ্যের সব ডিইওদের থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠানো হয়েছে গোটা রাজ্যে কোথায় কত হাইরাইজ আবাসন রয়েছে। অর্থাৎ রাজ্যে থাকা সব হাইরাইজ আবাসনের তালিকা তৈরি করে এবার পাঠানো হতে চলেছে নির্বাচন কমিশনে আর তারপরেই নির্বাচন কমিশন নিজের ক্ষমতা বলে সেই সব আবাসন গুলোই আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের বুথ তৈরীর নির্দেশিকা প্রকাশ (Booth in Highrise) করবে।
পশ্চিমবঙ্গের বহুতল আবাসনগুলিতে (Highrise Society of West Bengal) ভোটকেন্দ্র (Booth) তৈরি করার পরিকল্পনা নিয়ে রাজ্য সরকারের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (Chief Election Commissioner) এবং জেলাশাসকদের (DMs) রিপোর্টে তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছে ভারতের নির্বাচন কমিশন (ECI)। নতুন ভোটকেন্দ্র তৈরির জন্য রাজ্যে মাত্র দু’টি আবেদন জমা পড়ায় কমিশন ডিইও-দের এই কাজে উদসীনতা ও সমীক্ষার অভাব থাকার অভিযোগ তুলেছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের আপত্তি সত্ত্বেও কমিশন তার সিদ্ধান্তে অনড় রয়েছে এবং আগামী ২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের জন্য আবাসনে বুথ তৈরির লক্ষ্যে জেলাশাসকদের কাছে ফের চিঠি পাঠিয়েছে।
কমিশনের কড়া হুঁশিয়ারি: ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে রিপোর্ট
বুধবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক (সিইও) মনোজকুমার আগরওয়ালকে চিঠি পাঠিয়ে কমিশন জানিয়েছে, এই বিষয়টি খুবই গুরুতর এবং আইন মোতাবেক ডিইও-রা কমিশনের নির্দেশ মানতে বাধ্য।
কমিশনের নির্দেশ:
নতুন করে সমীক্ষা: ডিইও-দের নতুন করে সমীক্ষা করতে হবে এবং ২৫০টি বাড়ি অথবা ৫০০ জন ভোটার রয়েছেন এমন বহুতল ভবন, গ্রুপ হাউজিং সোসাইটি, কলোনি, বস্তি এলাকা এবং গেটেড সোসাইটিতে ভোটকেন্দ্র তৈরির প্রস্তাবিত তালিকা জমা দিতে হবে।
সময়সীমা: আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে এই কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
দায়বদ্ধতা: কমিশন হুঁশিয়ারি দিয়েছে যে নির্দেশ অমান্য হলে কড়া অবস্থান নেওয়া হবে এবং প্রয়োজনীয় জায়গায় বুথ না হলে তার দায় জেলা ডিইও-দের নিতে হবে।
কমিশন আরও জানিয়েছে, রাজ্যের বিধানসভা ভিত্তিক খসড়া তালিকা প্রকাশের পরেও এই আবাসনগুলিতে বুথ নিয়ে নতুন করে সমীক্ষা করতে হবে।
তৃণমূলের আপত্তি সত্ত্বেও কমিশনের অনড় মনোভাব
আবাসনগুলিতে পৃথক ভোটকেন্দ্র তৈরির কমিশনের এই ভাবনার বিরোধিতা করেছিল তৃণমূল কংগ্রেস। গত মাসে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দেশের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার জ্ঞানেশ কুমারকে জোড়া চিঠি লিখেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্ন তুলেছিলেন, 'বুথ সব সময়েই সরকারি বা আধা-সরকারি জায়গায় হয়ে থাকে। আবাসনে বুথ তৈরি হয় কী ভাবে?'
মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তির পর কমিশন একবার তাদের সিদ্ধান্ত থেকে কিছুটা পিছিয়ে গেলেও, এবার কমিশনের পক্ষ থেকে স্পষ্টভাবে জানানো হয়েছে যে, এই সিদ্ধান্ত জাতীয় নির্বাচন কমিশনের এবং সিইও এই সিদ্ধান্ত বদলাতে পারেন না।
বহুতলবাসীদের উপর ‘চাপ’-এর অভিযোগ
এদিকে, বহুতলগুলিতে ভোট গ্রহণ কেন্দ্র রুখতে আবাসিকদের উপর রাজনৈতিক চাপ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে চাপানউতোর শুরু হয়েছে এবং বিজেপি তৃণমূলের দিকে আঙুল তুলেছে।
অন্যদিকে, এই চাপানউতোরের মধ্যেই কলকাতা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অভিজাত বহুতলবাসীদের সঙ্গে সরাসরি কথা বলার জন্য আজ মেয়র বহুতলের আবাসিক কমিটির প্রতিনিধিদের নিয়ে বৈঠক করছেন। ক্ষুদিরাম অনুশীলন কেন্দ্রে এই বৈঠকে ১৪৪ জন কাউন্সিলরকেও উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে।
রাজনৈতিক দলগুলির হিসাব অনুযায়ী, কলকাতার ক্ষেত্রে এই বহুতলবাসীরা মোট ভোটের ৮-১০ শতাংশ। অনেক অভিজাত বহুতলবাসী ভোটের দিনে নিরাপত্তার কারণে ভোটকেন্দ্রে যান না বলে অভিযোগ রয়েছে। এই পরিস্থিতিতে, আবাসনের অভ্যন্তরে বুথ তৈরি হলে ভোটারদের উপস্থিতি বাড়বে বলে কমিশন মনে করছে।