এ যেন কেঁচো খুঁড়তে কেউটে। গোয়ার নাইটক্লাবে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ২৫ জনের মৃত্যুর পরেই লুথরা ভাইদের ‘রোমিও লেন রেস্তোরাঁ ও ক্লাব’ চেইনের বিরুদ্ধে শুরু হয়েছে তদন্ত। দেখা যাচ্ছে, তাদের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ আগে থেকেই রয়েছে। এমনকী মামলা পর্যন্ত হয়েছে। জরিমানাও করা হয়েছে একাধিক বার।
সৌরভ এবং গৌরব লুথরা মূলত দিল্লির ব্যবসায়ী। তবে গোয়া, দিল্লি, হরিয়ানা, উত্তরপ্রদেশ, মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড জুড়ে ছড়িয়ে রয়েছে তাঁদের ব্যবসা। এমনকী দুবাইতেও একটি হোটেল রয়েছে তাঁদের। কমপক্ষে ২৩টি প্রিমিয়াম রেস্তোরাঁ, বার এবং রিসর্টের মালিক তাঁরা। চলতি বছরেই মুসৌরিতে পরিবেশ বিধি ভঙ্গ করে রিসর্ট করায় তাঁদের ৮ লক্ষ টাকা জরিমানা করেছিল উত্তরাখণ্ড দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ড।
লুথরা ভাইরা মোট চারটি ব্র্যান্ডের মালিক। Romeo Lane, Birch, Mama’s Buoi এবং Caha। সৌরভ নিজে কম্পিউটার সায়েন্সে স্নাতক। তবে হসপিটালিটি ইন্ডাস্ট্রিতে জাঁকিয়ে বসতে তাঁর সময় লাগেনি। দিল্লির হাডসন লেনে Mama’s Buoi ও Dramebaaz দিয়ে তাঁর ব্যবসায় হাতেখড়ি হয়। পরে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন গৌরবও।
গোয়ার Birch by Romeo Lane নাইটক্লাবের বিরুদ্ধেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে। ২০২৩ সালে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলাও হয়েছিল। গোয়া বিধানসভার তথ্য অনুযায়ী, লুথরা ভাইদের অস্থায়ী নির্মাণের অনুমতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে স্থায়ী কাঠামো তৈরি করেন। কিন্তু তার পরেও গত দুই বছর ধরে রমরমিয়ে চলছিল নাইটক্লাব। কী ভাবে?
লুথরা ভাইদের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন গোয়ার পরিবেশকর্মী সাগরদীপ সিরসাইকর। তাঁর অভিযোগ, ‘বম্বে হাইকোর্টে কাঠামো ভেঙে দেওয়ার মিথ্যা দাবি করে করেছিলেন নাইটক্লাব কর্তৃপক্ষ। কনটেম্পট পিটিশন করার পর শুধু প্রবেশদ্বারটুকু ভেঙে দেখায়।’ লুথরা ভাইরা রাজনৈতিক প্রভাব খাটিয়ে বাকি অংশ রক্ষা করেছিলেন বলে দাবি তাঁর।
গোয়া স্টেট বায়োডাইভারসিটি বোর্ড পরে ওই আউটলেটকে ১১ লাখ টাকা জরিমানা করে। ৬ ডিসেম্বর আগুন লাগার পরে নাইটক্লাবের বেশ কিছু অংশ ভেঙে ফেলা হয়েছে।
আগুন লাগার খবর পাওয়ার দেড় ঘণ্টার মধ্যে দেশ ছেড়ে পালান লুথরা ভাইরা। শনিবার রাত ১১.৪৫ মিনিটে আগুন লাগার পরে ১.১৭ মিনিটে মেকমাইট্রিপ থেকে থাইল্যান্ড যাওয়ার টিকিট কেটেছিলেন তাঁরা। তার পরেই চলে যান বিমানবন্দরে। ভোর সাড়ে ৫টায় ইন্ডিগোর 6E 1073 ফ্লাইটে থাইল্যান্ড পাড়ি দেন। অর্থাৎ মাত্র দেড় ঘণ্টার মধ্যে লুথরা ভাইদের ব্যাগ গুছিয়ে পালান।
বুধবার তাঁদের পাসপোর্ট স্থগিত করে দেয় গোয়া পুলিশ। তার পরে এ দিন সকালে লুথরা ভাইদের আটক করা হয় ফুকেটে। আপাতত দুই ভাই থাইল্যান্ড সরকারের হেফাজতে রয়েছেন। তাঁদের ব্যাঙ্কক আনা হবে। এ দিন রাতেই ব্যাঙ্কক উড়ে যাচ্ছে গোয়া পুলিশের একটি দলও।
উল্লেখ্য, গত শনিবার ভোরে গোয়ার বার্চ রোমিও লেন নাইটক্লাবে পার্টি চলছিল। ডান্স ফ্লোরে নাচছিলেন নর্তকী। আনন্দে মেতে ছিলেন সবাই। আচমকাই ডান্স ফ্লোরের ছাদে আগুন ধরে যায়। সেই মুহূর্তের ভিডিয়ো সামনে এসেছে। বেশিরভাগ কাঠামো কাঠের হওয়ায় দ্রুত তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো নাইটক্লাবে। আতঙ্কে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়। কেউ কেউ গিয়ে আশ্রয় নেন বেসমেন্টে। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে যায় গোটা ক্লাব। দমবন্ধ হয়ে মৃত্যু হয় ২৫ জনের। গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন প্রায় ৭ জন।