• ইমার্জেন্সির ভয়াবহতায় বদলে গিয়েছিল ‘কেরিয়ার চয়েস’, কলকাতায় অকপট শশী থারুর
    এই সময় | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সায়নী জোয়ারদার

    ডিসেম্বরের কলকাতায় নির্ভেজাল আড্ডায় সাংসদ শশী থারুর। সঙ্গে তাঁর দুই বোন লেখিকা শোভা থারুর শ্রীনিবাসন এবং স্মিতা থারুর। জিডি বিড়লা সভাঘরে বসলো সেই আড্ডার আসর। দুঁদে রাজনীতিক, বাগ্মী সাংসদের পরিচয়ের আড়ালে শশী থারুরের মধ্যে থাকা স্নেহশীল এক ভাইয়ের ছবিও ধরা পড়ল এ দিনের আড্ডায়।

    ছোট থেকেই পরিবার চাইত তিনি যেন আইএএস পরীক্ষায় বসেন। বিষয়টি নিয়ে ভেবেওছিলেন তিনি। কিন্তু আমেরিকায় পড়াশোনা করতে গিয়ে বদলে যায় তাঁর ধারণা। কেন? কলকাতার আড্ডায় সেটাই বললেন কংগ্রেস সাংসদ। তিনি যখন আমেরিকায় পড়াশোনা করছেন, তখন ভারতে জরুরি অবস্থা চলছে। শশী স্মৃতিচারণে জানালেন, আমেরিকায় তাঁর রুমমেট ছিলেন এক সাংবাদিক। তাঁর দৌলতে সেই সময়ে ভারতের একাধিক খবর তিনি পড়েছিলেন। জেনেছিলেন ইমার্জেন্সির ভয়াবহতার কথা। তখনই তাঁর স্বপ্নভঙ্গ হয়। ওই ভয়াবহতা দেখেই তিনি সরকারি আমলা হতে চাননি, অন্য খাতে বয়ে যায় তাঁর কেরিয়ার।

    অনুষ্ঠানে এক দর্শক প্রশ্ন করেছিলেন, Procrastination অর্থাৎ কোনও কাজকে প্রলম্বিত করার অভ্যেস কী ভাবে ত্যাগ করা যায়। প্রশ্নের উত্তরে, শশী থারুর বলেন, ‘সব প্রজন্মই এই সমস্যায় ভুগেছে।’ এই সমস্যা পেরোনোর উপায়ও বাতলে দেন তিনি। শশীর মতে, ‘ডু দেম হোয়েন ইউ ক্যান, ব়্যাদার দ্যান হোয়েন ইউ মাস্ট।’ নিজের একটি অভ্যাসের কথাও তুলে ধরেন তিনি। কোনও কাজ করার কথা থাকলে, যদি সুযোগ পাওয়া যায়, তা হলে নির্ধারিত সময়ের আগেই সেটা সেরে ফেলা উচিত বলেই মত কংগ্রেস সাংসদের।

    কলকাতায় আলোচনা সভায় প্রসঙ্গ উঠেছে বৈবাহিক ধর্ষণেরও। সারা বিশ্বে হাতেগোনা কিছু গণতান্ত্রিক দেশের মধ্যে ভারতও পড়ে, যেখানে বৈবাহিক ধর্ষণকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হয় না, এই বিষয়টি ঘোরতর সমালোচনা করেছেন থারুর। তাঁর মতে, ‘বৈবাহিক ধর্ষণ আদতে হিংসা।’ এটিকে অপরাধ হিসেবেই গণ্য করা উচিত বলে মনে করেন তিনি। বিষয়টি নিয়ে সরব হওয়ার সময়ও এসেছে বলে মত শশী থারুরের।

    সম্প্রতি আমেরিকা ও ইউরোপের বিভিন্ন দেশে জাতিবিদ্বেষের শিকার হচ্ছেন ভারতীয়রা। এ দিনের আলোচনায় সেই প্রসঙ্গও উঠেছে। শশী থারুরের মতে, অনেকসময়েই ভিনদেশে নানা সমস্যায় পড়তে হয়। যখনই সম্পদের টানাটানি হয়, তখনই মনে করা হয়, কাদের জন্য এই অভাব হচ্ছে। তখনই কোপ এসে পড়ে সেই দেশে আসা ভিনদেশের ব্যক্তিদের উপর। চামড়ার রংও এই বিদ্বেষের কারণ হিসেবে কাজ করে। যাঁরা বিদেশে যাওয়ার স্বপ্ন দেখেন, তাঁদের জন্য থারুরের পরামর্শ, ‘যদি কেউ বিদেশের কোনও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনার সুযোগ পান, সেখানে অবশ্যই যাওয়া উচিত। শিক্ষার মান, দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সেটা প্রয়োজন। সেখানে কিছুদিন কাজও করা যেতে পারে। তারপরে ভারতে ফিরে আসুন তাঁরা। এখানে তাঁদের স্কিল ব্যবহার করা যাবে। এখানে তাঁদের বিদ্বেষের শিকারও হতে হবে না।’

    কলকাতার অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে দুই বোনের জন্য গানও গাইলেন শশী। একই স্টেজে বসেছিলেন বোন স্মিতা ও শোভা থারুর।

  • Link to this news (এই সময়)