প্রায় ৩ কোটি রহস্যময় অ্যাকাউন্ট থেকে কাটা হয়েছে টিকিট, সংসদে ঘুরিয়ে ‘স্বীকার’ রেলের
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
দিব্যেন্দু বিশ্বাস, নয়াদিল্লি: রেলের টিকিটে বেনজির ডিজিটাল দালালরাজ। ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাসের আগে দেশজুড়ে অনলাইনে ট্রেনের টিকিট কাটা হয়েছে কোটি কোটি ‘রহস্যময়’ ইউজার আইডি ব্যবহার করে। ঘুরিয়ে এহেন তথ্য সংসদে দিয়েছে রেল বোর্ডই। তারা জানিয়েছে, গত জানুয়ারি থেকে সারা দেশে তিন কোটিরও বেশি ‘রহস্যজনক’ ইউজার আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। রেল বিশেষজ্ঞ মহলের মতে, এর অর্থ একটিই। তা হল, নিষ্ক্রিয় করার আগে আইআরসিটিসির এসব ইউজার আইডি থেকেই হাজার হাজার ট্রেনের টিকিট বুকিং হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের আশঙ্কা, সংশ্লিষ্ট ট্রেন টিকিটগুলির একটি বড় অংশই ‘অবৈধ’ হয়ে থাকতে পারে। যা অত্যন্ত ইঙ্গিতপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। তবে রেল যতই ইউজার আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়ার দাবি করুক না কেন, দূরপাল্লার মেল-এক্সপ্রেসে ‘কনফার্মড’ টিকিট পেতে সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি অব্যাহত।
রেলের টিকিট বুকিংয়ের বন্দোবস্ত নিয়ে লোকসভায় লিখিত প্রশ্ন করেছিলেন তৃণমূল সাংসদ সায়নী ঘোষ এবং বিজেপি এমপি সম্বিত পাত্র। এরই লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী অশ্বিনী বৈষ্ণব যে পরিসংখ্যান পেশ করেছেন, তা রীতিমতো চাঞ্চল্যকর। রেলমন্ত্রী লিখিতভাবে জানিয়েছেন, ২০২৫ সালের জানুয়ারি মাস থেকে সারা দেশে প্রায় ৩ কোটি ২ লক্ষ ‘সন্দেহজনক’ ইউজার আইডি নিষ্ক্রিয় করে দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি ডিজিটাল দালালরাজ রোখার উদ্দেশে ট্রেনের টিকিট বুকিংয়ে আধার যাচাই এবং ওটিপি ভেরিফিকেশনের মতো ব্যবস্থার উল্লেখও করেছেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী। এই প্রসঙ্গে তিনি জানিয়েছেন, তৎকাল ই-টিকিট বুকিংয়ে আধারভিত্তিক ওটিপি যাচাইয়ের প্রক্রিয়া ধাপে ধাপে কার্যকর হচ্ছে। গত ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত মোট ৩২২টি ট্রেনে এই পদ্ধতি কার্যকর হয়েছে। এর ফলে সংশ্লিষ্ট ট্রেনগুলিতে কনফার্মড তৎকাল টিকিট প্রাপ্তির হার প্রায় ৬৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
অন্যদিকে, গত ৩ ডিসেম্বর রেলমন্ত্রক আরও এক সরকারি বিবৃতিতে জানিয়েছিল, স্টেশনের রিজার্ভেশন কাউন্টার থেকে ট্রেনের তৎকাল টিকিট বুকিংয়ের সময় ওটিপি যাচাইয়ের প্রক্রিয়াও শীঘ্রই শুরু হবে। ওটিপি যাচাই না হলে তৎকাল টিকিট মিলবেই না। লোকসভায় লিখিত জবাবে রেলমন্ত্রী জানিয়েছেন, ৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত দেশের মোট ২১১টি ট্রেনে এই ব্যবস্থা কার্যকর হয়েছে। রেলের দাবি, এই পদ্ধতিতে ৯৬টি ট্রেনে কনফার্মড তৎকাল টিকিট প্রাপ্তির হার প্রায় ৯৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। অর্থাৎ, কোথাও কোনও যাত্রী দুর্ভোগই নেই! যদিও বাস্তব চিত্রটা সম্পূর্ণ বিপরীত।