নিজস্ব প্রতিনিধি, নয়াদিল্লি: ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’ বনাম ‘ন্যাশনাল সং’। জনগণমন বনাম বন্দেমাতরম। রাজ্যসভার আলোচনায় কক্ষের নেতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী জে পি নাড্ডার ভাষণে বৃহস্পতিবার ‘মুখোমুখি’ হতে হল এই দুই ‘প্রতিদ্বন্দ্বী’কে। নিজের ভাষণে নাড্ডা বলেন, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরু বন্দেমাতরম নিয়ে উদাসীন ছিলেন। কিন্তু ‘ন্যাশনাল অ্যান্থেম’ এবং ‘ন্যাশনাল ফ্ল্যাগে’র সঙ্গেই একাসনে বসা উচিত বন্দেমাতরম গীতের। এর জেরে জেপি নাড্ডার বিরুদ্ধে দফায় দফায় জনগণমনকে অপমানের অভিযোগ তুলেছে কংগ্রেস। এমনকি, রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা তথা কংগ্রেস সাংসদ মল্লিকার্জুন খাড়্গে প্রশ্ন করেন, ‘আলোচনা কি বন্দেমাতরম নিয়ে হচ্ছে? নাকি পণ্ডিত নেহরুকে নিয়ে? নাড্ডাজি আগে তা স্পষ্ট করুন। বিকৃত তথ্য পেশ করা হচ্ছে।’
মঙ্গলবার থেকে রাজ্যসভায় বন্দেমাতরম গীতের ১৫০ বর্ষপূর্তি নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছিল। বুধবার আলোচনায় অংশ নিয়ে কংগ্রেস সাংসদ জয়রাম রমেশ অভিযোগ করেছিলেন, শুধুমাত্র পণ্ডিত নেহরুকে অপমান করার উদ্দেশেই এই আলোচনা চালাচ্ছে মোদি সরকার। বৃহস্পতিবার ওই আলোচনার শেষ বক্তা হিসেবে রাজ্যসভার নেতা নাড্ডা বলেন, পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুকে আক্রমণের কোনও উদ্দেশ্য নেই। আমরা শুধু প্রকৃত তথ্য সামনে আনতে চাই। যদিও এরপর নিজের ভাষণের প্রায় পুরো অংশজুড়েই নেহরু এবং কংগ্রেসের বিরুদ্ধে তোপ দেগেছেন কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী। আর তেড়েফুঁড়ে উঠেছেন কংগ্রেস সাংসদরা। নাড্ডা বলেন, জনগণমনর প্রতি আমার কোনও বৈরিতা নেই। এর জন্য গোটা জীবন উৎসর্গ করতে প্রস্তুত। আমি শুধুমাত্র গোটা প্রক্রিয়ার উল্লেখ করছি মাত্র। মহম্মদ আলি জিন্না বন্দেমাতরমের বিরুদ্ধে ফতোয়া জারি করেছিলেন। এর বিরোধিতা না করে পণ্ডিত নেহরু বরং বন্দেমাতরম নিয়ে তদন্ত করিয়েছিলেন। এমনকি নেতাজি সুভাষচন্দ্র বসুকে চিঠিতে লিখেছিলেন, বন্দেমাতরম নিয়ে মুসলিম সমাজের মধ্যে বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। আসলে কংগ্রেস শুধুমাত্র ঠেকায় পড়লে নেতাজি কিংবা কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গ টেনে আনে। যদিও বন্দেমাতরম গীতের ১৫০ বর্ষপূর্তির আলোচনায় এদিন নাড্ডা নিজেই টেনে এনেছেন সাভারকর এবং শ্রীঅরবিন্দের প্রসঙ্গও।
চলতি সপ্তাহে বারংবার নাম বিভ্রাটে জড়িয়েছে বিজেপি। স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী এবং কেন্দ্রীয় তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী রয়েছেন এই তালিকা। সেই বিভ্রাটে এদিন নাম জড়াল নাড্ডারও। বন্দেমাতরমের পরিবর্তে দু’বার ‘বন্দে ভারত’ বলে ফেলেছেন তিনি। মুহূর্তে অবশ্য সামলেও নিয়েছেন। সঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণভাবে বলেছেন, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় পরিচিত ‘বঙ্কিমবাবু’ হিসেবেই। টার্গেট কি প্রধানমন্ত্রী? জোর জল্পনা রাজনৈতিক মহলে।