• ৮০ কোটি দেশবাসীকে বিনামূল্যে রেশন দেওয়া মন্ত্রী ৭০ লাখি গাড়ি চেপে সংসদে
    বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: ‘রুটি নেই তো কী হয়েছে? কেক খাও!’ ফরাসি বিপ্লবের প্রাক্কালে দরিদ্র অনাহারে থাকা প্রজাদের একথা বলেছিলেন ফ্রান্সের সম্রাট ষোড়শ লুইয়ের স্ত্রী রানি মারি আঁতোয়ানেত। আজকাল মোদি সরকারের মন্ত্রীদের একের পর এক আচরণ সেই উক্তিকেই স্মরণ করাচ্ছে। এর সবথেকে ভালো উদাহরণ—দূষণ কমাতে কিংবা পেট্রোল-ডিজেলের দাম কমাতে ব্যর্থ কেন্দ্র। অথচ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীরা দেশবাসীকে পরামর্শ দিচ্ছেন দূষণহীন বিদেশি গাড়ি ক্রয় করতে! কারণ একটাই, জ্বালানি সস্তা হবে। অথচ সেই কোভিডকাল থেকে এখনও ৮০ কোটি দেশবাসীকে বিনামূল্যে রেশন দিয়েই যেতে হচ্ছে মোদি সরকারকে। তাদের জন্য বিদেশি গাড়ি... ছেঁড়া কাথায় শুয়ে লাখ টাকার খোয়াব মাত্র!

    সম্প্রতি কেন্দ্রের সড়ক পরিবহণমন্ত্রী নীতিন গাদকারি সওয়ার হয়েছিলেন টয়োটা ইনোভা হা‌ইক্রস ফ্লেক্স ফুয়েল গাড়িতে, যা দূষণহীন এবং প্রায় ৮৫ শতাংশ ইথানলে চলতে পারে। অতএব জ্বালানি ব্যয় অনেক কম। সেই গাড়ির দাম হতে চলেছে অন্তত ৩৫ লক্ষ টাকা। গাদকারি বলেছিলেন, এরকম গাড়ি আগামী দিনে ভারতে আরও বেশি করে চালু হওয়া দরকার। বৃহস্পতিবার সেই সুর বজায় রাখলেন মোদি সরকারের রিনিউয়েবল এনার্জি মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশীও। নিজে ড্রাইভ করে ঝকঝকে নীল রঙের এক অত্যাধুনিক হা‌ইড্রোজেন ফুয়েল সেল ইলেকট্রিক গাড়িতে উপস্থিত হলেন সংসদ ভবনে। এবং সেই বিলাসবহুল যান থেকে নেমেই জানিয়ে দিলেন, ‘এই গাড়ির নাম টয়োটা মিরাই। জাপানি ভাষায় মিরাই শব্দের অর্থ ভবিষ্যৎ। এই দূষণহীন আধুনিক গাড়ি হল আগামী বিশ্বের ভবিষ্যৎ।’

    প্রহ্লাদ যোশী কি শুধুই রিনিউয়েবল এনার্জি মন্ত্রকের মন্ত্রী? মোটেই না। তাঁর হাতে রয়েছে কেন্দ্রীয় সরকারের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্ত্রক, খাদ্য ও ভোগপণ্য‌ বিপণন। এই মন্ত্রকই চালায় গরিব কল্যাণ যোজনা। অর্থাৎ মোদি সরকারের বহু প্রচারিত ৮০ কোটি গরিব মানুষে বিনামূল্যে চাল-গম প্রদান।  প্রধানমন্ত্রী মোদি বিগত এক বছর ধরেই বলেন, ২৫ কোটি গরিব মানুষ দারিদ্র্যসীমার উপরে উঠে এসেছে। কিন্তু সরকার এটা জানায় না যে, তাহলে এখনও সেই ৮০ কোটি দেশবাসীকে কেন বিনামূল্যে রেশন দেওয়া হচ্ছে? এই সংখ্যাও তো ২৫ কোটি কমে যাওয়ার কথা! এহেন এক মন্ত্রকের মন্ত্রী যে হাইড্রোজেন কারের জয়গান করে দেশের ভবিষ্যৎ আখ্যা দিচ্ছেন, সেই গাড়ির দাম কত হতে চলেছে? জানা যাচ্ছে, এক্স শোরুম প্রাইস ৬০ থেকে ৭০ লক্ষ টাকা।

    বৃহস্পতিবারই ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব সোলার এনার্জির সঙ্গে চুক্তি হয়েছে টয়োটার। ওই সংস্থার মিরাই গাড়িটি ভারতের আবহাওয়া, ধুলো, যানজট, রাস্তাঘাট ইত্যাদি ক্ষেত্রে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে, আপাতত সেই পরীক্ষা করা হবে। তারপর আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হবে বিক্রি। যদিও সংসদ ভবনে গাড়ি চালিয়ে এসে প্রহ্লাদ যোশী জানিয়ে দিয়েছেন যে, হাইড্রোজেন গাড়ি ভারতের জন্য আদর্শ। অর্থাৎ সকলের কেনা উচিত! দূষণ তো কী হয়েছে? পেট্রোল-ডিজেলের এত দাম তো কী হয়েছে? ৪০ অথবা ৭০ লক্ষ টাকার বিকল্প জ্বালানির গাড়ি কিনলেই হয়! মারি আঁতোয়ানেত সিনড্রোম! 
  • Link to this news (বর্তমান)