দেড় কোটি ভোটার বাদ দিতে জেলাশাসকদের চাপ: মমতা, এসআইআর নিয়ে বিজেপি-কমিশনকে আক্রমণ
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কৃষ্ণনগর: ইনিউমারেশন পর্ব শেষ। এসআইআরে নাম বাদ যাওয়া নিয়ে আতঙ্কের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে রাজ্যজুড়েই। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে। ইতিমধ্যেই ‘অনুপ্রবেশকারী এবং রোহিঙ্গা’ জিগির তুলে দেড় কোটি নাম বাদ যাওয়ার দাবি করা হয়েছে গেরুয়া শিবিরের তরফে। তা নিয়ে ‘দিল্লি’ থেকে জেলাশাসকদের উপর রীতিমতো চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে বৃহস্পতিবার গর্জে উঠলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কৃষ্ণনগরে সভামঞ্চে দাঁড়িয়ে এসআইআর নিয়ে একযোগে আক্রমণ করলেন বিজেপি এবং নির্বাচন কমিশনকে। সরাসরি অভিযোগ তুললেন, ‘দিল্লি থেকে বিজেপি মার্কা কিছু লোকজনকে পাঠানো হচ্ছে জেলাশাসকদের উপর খবরদারি করার জন্য। ডিএমদের পাশে একজন করে কেন্দ্রের বিজেপির লোককে বসিয়ে রাখা হবে। এটা দেখার জন্য যে, ডিএমরা ঠিকমতো কাজ করছে কি না!’ তিনি এও বলেন, ‘বিজেপি সবার নামে অভিযোগ দিয়েছে। মানে বিজেপি ছাড়া সবার নাম বাদ। বিজেপির অভিযোগে কেন কাজ হবে? বিজেপির আইটি সেল ভোটার লিস্ট যে করে দেবে আর সেই ভোটার তালিকা অনুযায়ী ভোট হবে? এটাই তো পরিকল্পনা?’ বিহারের প্রসঙ্গ টেনে নেত্রীর হুঁশিয়ারি, ‘মনে রাখবেন বিহার পারেনি। কিন্তু বাংলা পারবে।’
গত লোকসভা ভোটেও কৃষ্ণনগরে অনুপ্রবেশ ইস্যুকে হাতিয়ার করেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। এরপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গ নিয়ে তাঁর বক্তব্যে ঘুরে ফিরে এসেছে অনুপ্রবেশকারী, রোহিঙ্গার মতো শব্দ। আর তার জেরেই নাকি ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের আগেই এসআইআর আয়োজন। তড়িঘড়ি শেষ করা সেই প্রক্রিয়াকে ভোটার তালিকা থেকে নাগরিকদের নাম বাদ দেওয়ার চক্রান্ত বলেই অভিহিত করেছেন মমতা। তবে একইসঙ্গে সীমান্ত জেলার বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করে তিনি বলেন, ‘নিশ্চিন্তে থাকুন। কাউকে ঘর ছাড়া হতে হবে না। এসআইআরে নাম লেখান ভালো করে। কারও নাম বাদ দিলে ধরনা দিয়ে বসে থাকব। যতক্ষণ না নাম তুলবে ততক্ষণ ধরনা চলবে।’
এদিন মুখ্যমন্ত্রী গত কয়েকদিনের থেকেও বেশি কড়া ছিলেন অমিত শাহের প্রসঙ্গে। তাঁর নামে বাছা বাছা বিশেষণ প্রয়োগ করে বলেছেন, ‘দেশে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন। তিনি করতে পারেন না এমন কোনও কাজ নেই। তার দু’চোখ ভয়ঙ্কর! দেখলে মনে হয় দুর্যোগের বার্তা, দুরভিসন্ধি। এক চোখে তার দুর্যোধন। আর এক চোখে দুঃশাসন। তিনি বলে দেন, এদের বাংলাদেশি বলে বাদ দিয়ে দাও। এদের রোহিঙ্গা বলে বাদ দিয়ে দাও।’ ভিড়ে ঠাসা জনসভায় শাহকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে মমতার হুংকার— ‘বাংলায় ডিটেনশন ক্যাম্প হবে না। যতদিন আমি থাকব, করতে দেব না।’
মানুষের ভোট কেটে এসআইআর করে বিজেপিকে বাংলায় জিতিয়ে দেওয়ার চক্রান্তের কথাও এদিন উপস্থিত জনতাকে জলের মতো বুঝিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা কোথা থেকে এল? আর রোহিঙ্গা যদি তাহলে তো তাঁরা মণিপুর, মিজোরাম, নাগাল্যান্ড হয়ে আসবে। সেখানে এসআইআর হচ্ছে না কেন? যেখানে নির্বাচন আছে। যেখানে বিরোধী দল আছে, সেখানে এসআইআর হচ্ছে দু’মাসের মধ্যে। কেন আসামে এসআইআর হবে না? বিজেপির রাজ্য বলে? এসআইআরের নাম করে মা-বোনদের অধিকার কাড়বে। নির্বাচনে দিল্লির পুলিশ নিয়ে এসে মা-বোনদের ভয় দেখাবে।’ তাই এসআইআর বিরোধী লড়াইয়ে মেয়েদের এগিয়ে আসার আহ্বান করেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর সাফ কথা, ‘বাংলা থেকে কাউকে তাড়াতে দেব না। আর তাড়ালে তাঁদের কী ভাবে ফিরিয়ে আনতে হয়, আমরা জানি!’