মমতা কেন্দ্রের শাসকদল বিজেপি-কে নিশানা করে বলেন, ‘দিল্লি থেকে বিজেপির লোক পাঠানো হচ্ছে ডিএমদের মাথার উপর খবরদারি করতে। বলা হচ্ছে, দেড় কোটি মানুষের নাম বাদ দিতে হবে। ওরা জানে না, বাংলা কোনওদিন কারও কাছে ভিক্ষে চায় না। নাম বাদ দিলে, নাম-তোলার জন্য আমি বসে থাকব ধরনায়, যতক্ষণ না উঠছে, ততক্ষণ সরে যাব না।’ বিরোধীদের উদ্দেশে তাঁর কটাক্ষ, ‘ভালো করে মনে রাখবেন, সুস্থ বাঘের চেয়ে আহত বাঘ অনেক বেশি ভয়ঙ্কর।’
সভায় নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়েও তীব্র অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, ভোট ঘোষণার আগেই জেলাশাসকদের অযথা ভয় দেখানো হচ্ছে। কমিশনের ‘অতিসক্রিয়তা’ নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘ইলেকশন এখনও ঘোষণা হয়নি। ডিএমদের ভয় দেখাচ্ছো কেন? মানুষকে কি বন্ডেড লেবার বানাতে চাইছো?’ এসআইআর প্রক্রিয়া নিয়ে তাড়াহুড়ো নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করে তাঁর প্রশ্ন, ‘আমরা তো বলেছিলাম, সময় নিয়ে করো। এত তাড়াহুড়ো কেন? হোয়াই সো হাঙ্গরি?’
মমতার অভিযোগ, বেছে বেছে সংখ্যালঘু এবং বিরোধী সমর্থকদের নাম কাটার চেষ্টা চলছে। তিনি বলেন, কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন আছে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হয়েও নির্বাচন কমিশন কেন একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের হয়ে কাজ করবে, সেই প্রশ্নও তোলেন মুখ্যমন্ত্রী।
তিনি আধার কার্ড নিয়ে কেন্দ্রের নীতি নিয়েও ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাঁর বক্তব্য, ‘ব্যাঙ্কে আধার লাগবে? হ্যাঁ স্যার। প্যান কার্ডে লাগবে? হ্যাঁ স্যার। কিন্তু ভোট দিতে বা নাগরিকত্ব প্রমাণে চলবে না কেন?’ তাঁর মতে, এই নিয়ম সাধারণ মানুষের প্রতি বঞ্চনার শামিল।
এদিন মমতা তাঁর আক্রমণাত্মক বক্তব্যের মাঝে ‘চামচাগিরি’ ও ‘দালালি’ শব্দ প্রয়োগ করলেও পরে প্রশাসনিক সৌজন্যের খাতিরে তা প্রত্যাহার করে নেন। তবু তাঁর সুর ছিল কড়া। তিনি বলেন, ‘সারা দেশটাকে বিজেপির দেশে পরিণত করার চেষ্টা চলছে। আর কমিশন সেই কাজে সহায়তা করছে।’
রাজনৈতিক মহলের মতে, নদিয়া জেলা তৃণমূলের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মতুয়া অধ্যুষিত এই এলাকায় সিএএ-এনআরসি প্রশ্ন বরাবরই কেন্দ্রীয় বিষয়। তাই কৃষ্ণনগরের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রীর এমন অভিযোগ ও ‘আহত বাঘ’-এর তুলনা—দলীয় কর্মীদের আগাম সতর্ক ও উজ্জীবিত করার কৌশল বলেই মনে করা হচ্ছে।