• প্যাটি বিতর্কে সরব মমতা, পাল্টা খোঁচা গেরুয়া–শিবিরের
    এই সময় | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: ব্রিগেডে গীতা পাঠের অনুষ্ঠানে প্যাটি বিক্রেতা শেখ রিয়াজুলকে মারধর করার ঘটনায় বুধবার রাতে তিন জনকে গ্রেপ্তার করে ময়দান থানা। তবে বৃহস্পতিবার ধৃত সৌমিক গোলদার, তরুণ ভট্টাচার্য এবং স্বর্ণেন্দু চক্রবর্তীকে এক হাজার টাকার ব্যক্তিগত বন্ডে জামিন দিয়েছেন ব্যাঙ্কশাল কোর্টের চিফ মেট্রোপলিটান ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) অতনু মণ্ডল। তিন জন জামিন পেলেও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এ দিন স্পষ্ট করে দিয়েছেন, এই ধরনের ঘটনা ঘটলে তাঁর সরকার অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেবে।

    ধৃতদের মধ্যে সৌমিক ও স্বর্ণেন্দু যথাক্রমে উত্তর ২৪ পরগনার গোবরডাঙা ও অশোকনগরের বাসিন্দা, তরুণের বাড়ি হুগলির উত্তরপাড়ায়। এ দিন কোর্টে অভিযুক্তদের আইনজীবী জানান, পুলিশের দায়ের করা মামলায় একটি (ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত করে কুকথা বলা/বিএনএস ২৯৯) ছাড়া সব ধারাই জামিনযোগ্য। তাঁর প্রশ্ন, ‘ভিড়ের মধ্যে অভিযুক্তরা ছিলেন। এফআইআর–এও কারও নাম ছিল না। এত লোকের মধ্যে কী ভাবে তিন জনকে শনাক্ত করা হলো?’ সরকারি কৌঁসুলি অভিজিৎ চট্টোপাধ্যায় ভিডিয়ো ফুটেজের কথা জানালে সেই ফুটেজ ঠিক করে খতিয়ে দেখা হয়েছে কি না, তা জানতে চান অভিযুক্তদের আইনজীবী। তিনি আরও জানান, অভিযুক্তদের একজন ক্যান্সার আক্রান্ত, বিশেষ ভাবে সক্ষমও। সওয়াল–জবাব শেষে ধৃতদের জামিন মঞ্জুর করেন বিচারক।

    যদিও এ দিন নদিয়ার কৃষ্ণনগরে তৃণমূলের জনসভায় প্যাটি বিক্রেতার নিগ্রহ প্রসঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘এক গরিব হকার, তাঁর জিনিস বিক্রি করতে গিয়েছেন। সব মিটিংয়ে কেউ না কেউ, কিছু না কিছু বিক্রি করতে আসেন। কেউ চা, কেউ শিঙ্গাড়া, কেউ ঝালমুড়ি, কেউ বিস্কুট বিক্রি করেন। তিনি তাঁর মতো বিক্রি করতে গিয়েছেন। তখন তাঁর মাথায় থাকেন না, এটা বিক্রি করব না ওটা বিক্রি করব। তাঁকে ধরে মেরেছ। যাঁরা গায়ে হাত দিয়েছে, সবক’টাকে গ্রেপ্তার করেছি। এটা বাংলা, উত্তরপ্রদেশ নয়।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, ‘আপনি অ্যারেস্ট করানোর কে?’

    ব্রিগেডে গত রবিবার গীতাপাঠের অনুষ্ঠানে আরামবাগের ফেরিওয়ালা শেখ রিয়াজুলকে গেরুয়া–শিবিরের কর্মীরা বেধড়ক মারধরে করেন বলে অভিযোগ। রিয়াজুলের সব প্যাটি মাটিতে ফেলে দেওয়া হয়। কলকাতায় রিপন স্ট্রিটে একটি বেকারিতে কাজ করেন রিয়াজুল। কর্মসূত্রে ধর্মতলা ও ময়দান চত্বরে প্যাটি বিক্রি করেন। কিছু দিন পরপর আরামবাগের পূর্ব কেশবপুরে গ্রামের বাড়িতেও যান।

    রিয়াজুলকে মারধর করায় সিপিএমের আইনজীবী নেতা সায়ন বন্দ্যোপাধ্যায় ময়দান থানায় সোমবার লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। গেরুয়া শিবিরও পাল্টা রিয়াজুলের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেছে। এমন ঘটনায় রাজ্য সরকার কড়া অবস্থান নেবে বলে মমতা বার্তা দিলেও শুভেন্দু এ দিন বলেছেন, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক চোখ বন্ধ বলে ওঁদের গ্রেপ্তার করেছেন। এঁরা কি জঙ্গি? মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পুলিশের উচিত যিনি ওখানে (ব্রিগেডে) নন–ভেজ প্যাটি বিক্রি করতে গিয়েছিলেন, পরিচয় আড়াল করে ঢুকেছিলেন, তাঁকেও গ্রেপ্তার করা। তাঁর বিরুদ্ধেও তো এফআইআর হয়েছে।’

    এ দিন পুলিশ ধৃতেদর আদালতে নিয়ে যাওয়ার সময়ে গেরুয়া শিবিরে কিছু কর্মী ময়দান থানার সামনে বিক্ষোভ দেখান। এই গ্রেপ্তারির জন্য সিপিএমকে–ও নিশানা করেছে গেরুয়া শিবির। কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, ‘সিপিএমের যে আইনজীবী মামলা করেছেন, তিনি তো সন্ধে হলে ঢুকুঢুকু করেন। আমার কাছে খবর আছে। হিন্দু বলেই এঁদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।’ জবাবে সোশ্যাল মিডিয়ায় সায়ন তাঁর পোস্টে বলেছেন, ‘কোনও সভ্য সমাজে গণপিটুনির মতো ঘৃণ্য কাজ হতে পারে না। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুকান্ত মজুমদার আমাকে ব্যক্তি আক্রমণের পথ বেছে নিয়েছেন। আমি স্বাগত জানালাম।’ তবে গ্রেপ্তারের ১২ ঘণ্টা পরেই কী করে জামিন হলো, তা নিয়ে পুলিশের ভূমিকায় প্রশ্ন তুলেছে সিপিএম।

    শুভেন্দু–সুকান্তদের প্রশ্ন, কেন ব্রিগেডে প্যাটি নিয়ে ঢুকেছিলেন রিয়াজুল? আর মমতার পাল্টা প্রশ্ন, গীতা পাঠের জন্য জনসভার কী প্রয়োজন? কৃষ্ণনগরের সভায় তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘গীতা তো আমরা সবাই বাড়িতে পড়ি। যাঁর যখন প্রয়োজন হয়। তার জন্য পাবলিক মিটিং করার কী দরকার? ঠাকুর–দেবতা তো হৃদয়ে থাকেন। যিনি আল্লার কাছে দুয়া চান, তিনি তো মনে মনে চান। রমজ়ান বা নমাজ়ের সময়ে একসঙ্গে নমাজ়ে যান, দুর্গাপুজো আমরা মিলেমিশে করি।’

    ব্রিগেডে বিজেপি নেতাদের হাতে গীতা নিয়ে পাঠ করতে দেখা গিয়েছে। মমতা এ দিন হাতে গীতা না–নিয়েও শ্রীকৃষ্ণের উপদেশের কথা স্মরণ করিয়ে দেন, ‘শ্রীকৃষ্ণ কী উপদেশ দিয়েছিলেন? তিনি বলেছিলেন ধর্ম মানে হচ্ছে ধারণ করা। কোনটা ধারণ করা? ধর্ম মানে পবিত্রতা, মানবতা, মনুষ্যত্ব, শান্তি। হিংসা নয়। ভেদাভেদ নয়। ভাগাভাগি নয়। বিজেপির বন্ধুরা যাঁরা গীতা পাঠ করছেন আশা করি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন। এর উত্তর দেবেন? রামকৃষ্ণ, বিবেকানন্দ, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কখনও বলেননি হিন্দু– মুসলিম ভাগাভাগি করো।’

    এ দিন ধৃতদের দু’জনকে নিয়ে নিজ়াম প্যালেসে সাংবাদিক বৈঠক করেন শুভেন্জু। সেখানে তাঁকে গেরুয়া উত্তরীয়, মালা পরানো হয়। শুভেন্দু বলেন, ‘এঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এঁদের উপরে হামলা হতে পারে। আমি তো এখনও মন্ত্রী নই। পুলিশ প্রোটেকশন দিতে পারব না। তবে ওঁরা রাজি থাকলে প্রাইভেট সিকিউরিটি ও সিসিটিভি ক্যামেরা বসাব।’

  • Link to this news (এই সময়)