এই সময়: কলকাতা থেকে এসি বাসে শিলিগুড়ি যাওয়ার ভাড়া এখনও দেড় হাজার টাকায় আটকে রয়েছে। কিন্তু ঠিক এক সপ্তাহ পরেই সেটা তিন গুণেরও বেশি বেড়ে সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজার টাকার কাছাকাছি জায়গায় পৌঁছে যেতে পারে। সৌজন্যে বড়দিনের ছুটি। দার্জিলিংয়ে এ বছর ক্রিসমাসের বাড়তি আকর্ষণ — তুষারপাতের সম্ভাবনা। বেশ কয়েক দিন ধরেই দার্জিলিংয়ের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা পাঁচ–ছ’ডিগ্রি সেলসিয়াসের মধ্যে ঘোরাঘুরি করেছে। আবহবিদরা মনে করছেন বড়দিনের সময়ে দার্জিলিংয়ে বরফ পড়ার সম্ভাবনা খুব বেশি। তাতেই ভ্রমণরসিক বাঙালি ওই সময়ে দার্জিলিংয়ে হাজির থাকার মরিয়া চেষ্টা শুরু করেছে। নিউ জলপাইগুড়ি যাওয়ার ট্রেনের টিকিট বিক্রি হয়ে গিয়েছে দু’মাস আগেই। কলকাতা থেকে বাগডোগরার ওই সময়ের ফ্লাইট ভাড়া ১৪–১৫ হাজারে পৌঁছেছে। তাই উত্তরবঙ্গ যাওয়ার শেষ ভরসা দূরপাল্লার বাসই। মওকা বুঝে সেখানেই খেলা দেখাতে শুরু করেছে ‘ডায়নামিক ফেয়ার’।
কলকাতার পার্ক স্ট্রিট, গোয়া, শিলং এবং দার্জিলিং — বড়দিনে এই জায়গাগুলোর মাহাত্ম্য একেবারে অন্য রকম। বছরের বিশেষ ওই দিনটিতে এই জায়গাগুলোয় কোনও একটায় হাজির হয়ে উৎসবের আনন্দ উপভোগ করার মজাই আলাদা। আর এ জন্য গুনতে হবে অতিরিক্ত ভাড়া। দূরপাল্লার ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে গেলেই বিমানভাড়া তুঙ্গে উঠতে শুরু করে। কলকাতা–শিলিগুড়ি রুটের বাসের মালিকরা অপেক্ষা করেন আরও কিছু দিন। ২৫ ডিসেম্বরের আগের উইকএন্ড থেকে বাড়তে শুরু করে বাসের ভাড়া। এ বছরও তার ব্যতিক্রম হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ডিসেম্বরের ১৭–১৮ তারিখ পর্যন্ত কলকাতা শিলিগুড়ির ভাড়া বছরের বাকি সময়ের মতো থাকলেও তার পর থেকে একলাফে তিন গুণ পর্যন্ত বেড়ে পৌঁছে যায় সাড়ে চার থেকে পাঁচ হাজারের ঘরে। যাত্রীর গরজ বুঝে ভাড়া বাড়িয়ে দেওয়ার এই কায়দারই পোশাকি নাম ‘ডায়নামিক ফেয়ার’।
‘এই পদ্ধতির ফলে আখেরে ক্ষতি হচ্ছে পর্যটনেরই’, বিরক্ত মন্তব্য রাজ্য ইকো ট্যুরিজ়ম বোর্ডের সদস্য রাজ বসুর। তিনি বলেন, ‘ট্রেনের টিকিট শেষ হয়ে যাওয়ার পরে যে ভাবে বিমানসংস্থাগুলো টিকিটের দাম বাড়িয়ে দেয়, তার পরে আর বাসমালিকদের উপরে সব দোষ চাপানোর কোনও মানে হয় না। কিন্তু রাজ্য ও কেন্দ্র যদি টিকিটের সর্বোচ্চ মূল্য বেঁধে না দেয়, তা হলে এমনটাই চলতে থাকবে। ফলে বেড়াতে ইচ্ছুক এমন বহু মানুষ আর দার্জিলিংয়ে আসবেন না।’ এই আশঙ্কা যে অমূলক নয়, সেটা বোঝা যায় পর্যটনব্যবসায়ী নিলাঞ্জন বসুর কথায় — ‘বড়দিনের সময়ে দার্জিলিং ও সিকিম যাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রায় অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে বরফ শুধু এই দুই জায়গাতেই সীমাবদ্ধ নেই। কলকাতা থেকে বাগডোগরা যাওয়ার বিমানভাড়ার থেকে অনেক কম ভাড়া দিয়ে অনেকেই গুয়াহাটি গিয়ে সেখান থেকে অরুণাচল প্রদেশের সাংতি ভ্যালি, তাওয়াংয়ের দিকে যাচ্ছেন। ডিসেম্বরের শেষে ওই এলাকাতেও বরফ পাওয়া যায়।’
উত্তরবঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার সমস্যা শুধু প্লেন ও বাসের ডায়নামিক ফেয়ারেই সীমাবদ্ধ নেই। সম্প্রতি পাহাড়ের গাড়িচালকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন পাহাড়ে বেড়াতে গেলে সমতলের গাড়ি নেওয়া যাবে না। পাহাড় থেকেই গাড়ি ভাড়া করতে হবে। এর ফলে পর্যটকদের উপরে খরচের চাপ আরও বেড়েছে। হিমালয়ান হসপিটালিটি অ্যান্ড ট্যুরিজ়ম ডেভেলপমেন্ট নেটওয়ার্ক–এর পক্ষ থেকে সম্রাট সান্যাল বলেন, ‘বড়দিনের জন্য ইতিমধ্যেই দার্জিলিংয়ের হোটেলগুলোর প্রায় ৬০ শতাংশ রুম বুক হয়ে গিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু বাস্তবে বেশির ভাগ রুমই বিভিন্ন ট্রাভেল এজেন্সি বুক করে রেখেছে শেষ মুহূর্তে চড়া দরে পর্যটকদের নিয়ে আসবে বলে।’ এর ফলে ২০ হাজার টাকার বাজেট গিয়ে পৌঁছচ্ছে ৫০ হাজারের কাছাকাছি জায়গায়। পর্যটনব্যবসায়ীদের মতে, ওর চেয়ে কম খরচে নেপাল বেড়ানো সম্ভব।