• শাহের চোখ যেন দুর্যোধন, দুঃশাসন! তোপ মমতার
    এই সময় | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়: সংসদে নির্বাচনী সংস্কার নিয়ে বিতর্কে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ বুধবার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, চলতি স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশনের (সার) বিরোধিতা করলে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সাফ হয়ে যাবে। বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীদের তৃণমূল রক্ষা করতে চাইলে ২০২৬–এর ভোটে জোড়াফুলের পরাজয় নিশ্চিত বলেও তোপ দেগেছেন শাহ। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংসদে দাঁড়িয়ে সরাসরি বাংলার শাসকদল তৃণমূলকে টার্গেট করায় বৃহস্পতিবার পাল্টা আক্রমণ শানালেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নদিয়ার কৃষ্ণনগরে দলীয় জনসভা থেকে নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ— দু’জনকেই তুলোধোনা করেছেন তৃণমূলনেত্রী।

    পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা তকমা দিয়ে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ দেওয়ার ছক শাহই তৈরি করেছেন বলে দাবি মমতার। তাঁর প্রশ্ন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ‘দাঙ্গাবাজ’দের কাছে কেন নাগরিকত্বের প্রমাণ দিতে হবে? এরপরেই শাহকে বিঁধে মমতার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য, ‘এখানে একজন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আছেন, তিনি করতে পারেন না, এমন কোনও কাজ নেই। তাঁর দু’চোখ দেখলেই মনে হয়— ভয়ঙ্কর দুর্যোগের বার্তা, দুরভিসন্ধি। এক চোখে তাঁর দুর্যোধন, আর এক চোখে তাঁর দুঃশাসন। তিনি বলে দেন, এদের (বাংলার মানুষ) সবাইকে বাংলাদেশি, রোহিঙ্গা বলে বাদ দিয়ে দাও।’

    কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিশানা করে মমতার বক্তব্যকে অবশ্য গুরুত্বই দিতে রাজি নয় বিজেপি। রাজ্য বিজেপির সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া, ‘উনি এ সব আবোলতাবোল কত কথাই তো বলেন। বাংলার মানুষের কাছে তার কোনও গুরুত্ব নেই।’

    মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এনিউমারেশন প্রক্রিয়া শুরুর সময়েই ঘোষণা করেছিলেন, বাংলার একজন বৈধ ভোটারের নামও বাদ দেওয়া হলে বড় আন্দোলন গড়ে তোলা হবে। আগামী ১৬ ডিসেম্বর খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত হতে চলেছে। এই প্রেক্ষাপটে জনতার উদ্দেশে মমতার স্পষ্ট বার্তা, ‘মা বোনেরা, নাম কাটলে বাড়িতে সব জিনিসপত্র আছে তো? যেগুলো দিয়ে রান্না করেন। নাম কাটলে ধরবেন তো? ছেড়ে দেবেন না তো? মেয়েরা সামনে লড়াই করবে আর ছেলেরা পিছনে থাকবে। আমি দেখতে চাই, মা–বোনদের শক্তি বড় নাকি বিজেপির শক্তি বড়। বাংলাও দেখতে চায়।’

    মমতা যেখানে ভোটার তালিকা থেকে নাম বাদ গেলে জনতাকে আন্দোলনে নামা, ধর্নায় বসার পরামর্শ দিয়েছেন, সেখানে বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ভুয়ো ভোটার চিহ্নিত করতে জনতার কাছে আবেদন করেছেন। হাওড়ার আমতায় বিজেপির সভায় শুভেন্দু বলেন, ‘মোটামুটি ৬০ লক্ষ নাম বাদ গিয়েছে। খসড়া তালিকা প্রকাশের পরে এক কোটির বেশি লোক নোটিস পাবে। আমরা বাংলাদেশি মুসলিম ও রোহিঙ্গাদের রাখব না। খসড়া ভোটার তালিকা দেখে একটিও ভুয়ো নাম থাকলে ৭ নম্বর ফর্ম জমা দিন। আপনারা জাগ্রত সৈনিকের ভূমিকা পালন করুন।’

    খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশের আগে শুভেন্দু এই ভবিষ্যৎদ্বাণী করলেও তৃণমূল নেতৃত্বের অভিযোগ, বিজেপির ইন্ধনেই এই নাম কাটার ছক চলছে। মমতার কথায়, ‘কেন বিজেপির অভিযোগে কাজ হবে? বিজেপি চিঠি দিলেই সেটা রামায়ণ–মহাভারত? বিজেপি চিঠি দিলেই নাম কাটতে হবে? বিজেপির আইটি সেল আপনাদের ভোটার লিস্ট তৈরি করে দেবে? এটা তো পরিকল্পনা?’ রাজ্যের রাজবংশী থেকে মতুয়া, সংখ্যালঘু থেকে কামতাপুরী সম্প্রদায়ের কোনও মানুষের ভোটাধিকার তৃণমূল খর্ব করতে দেবে না বলেও আশ্বাস দিয়েছেন তৃণমূলনেত্রী।

    ২০২৬–এর ভোটের দিকে তাকিয়ে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ‘দাঙ্গাকারী’দের পশ্চিমবঙ্গের জেলায় জেলায় পাঠানো হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেছেন মমতা। একইসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মোদী থেকে বিজেপির প্রথম সারির নেতারা সংসদে বাঙালি মনীষীদের নাম উচ্চারণ করতে গিয়ে বারবার হোঁচট খেয়েছেন বলে অভিযোগ তুলে মমতা বলেন, ‘বাংলার মনীষীদের অপমান করছেন, লজ্জা করে না? কারও দুটো কান থাকলে, একটি কান কাটার ভয় থাকে। যার দুটো কান নেই, তার কী করে কান কাটার ভয় থাকবে বলুন? এদের তো দুটো কান নেই।...বাংলা জানে না, বাংলা দখল করবে!’

  • Link to this news (এই সময়)