আজ বহরমপুরে সিনার্জি, লগ্নির প্রস্তাবের দিকে তাকিয়ে জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরা
বর্তমান | ১২ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, বহরমপুর: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশের এক সপ্তাহের মধ্যেই মুর্শিদাবাদ জেলাতে সিনার্জি হতে চলেছে। আজ, শুক্রবার বহরমপুরের পঞ্চাননতলায় জেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে হবে এই শিল্প সম্মেলন। অংশ নেবেন জেলার ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোগপতিরা। উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক নীতিন সিংহানিয়া, মন্ত্রী আখরুজ্জামান, জেলা পরিষদের সভাধিপতি রুবিয়া সুলতানা থেকে শুরু করে রাজ্যের বিভিন্ন দপ্তরের সচিব ও বিধায়করা। সিনার্জিতে লগ্নির প্রস্তাবের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন জেলার পরিযায়ী শ্রমিকরাও।
মুর্শিদাবাদ জেলায় প্রচুর শিল্প সম্ভাবনা রয়েছে। সম্প্রতি তিনদিনের সফরে এসে সেই বার্তা দিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। শুধু বার্তা দিয়েই থেমে থাকেননি তিনি। জেলায় শিল্পের বিকাশ নিয়ে প্রশাসনের আধিকারিক থেকে শুরু করে একাধিক উদ্যোগপতিদের সঙ্গে কথাও বলেন। তারপরই জেলায় একটি সিনার্জির আয়োজন করার নির্দেশ দেন জেলাশাসককে। সেই মতো শুরু হয়ে যায় প্রশাসনিক তৎপরতা। সূত্রের খবর, হাতে সময় কম নিয়েও জেলার সিংহভাগ উদ্যোগপতিকে সিনার্জিতে আমন্ত্রণ জানিয়েছে ডিএম অফিস। ফলে, জেলার প্রথম সিনার্জিতে শিল্পবিকাশে ইতিবাচক বার্তা দিতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। সেই সঙ্গে বিভিন্ন ক্ষেত্রে লগ্নির প্রস্তাবও আসতে পারে বলে আশাবাদী প্রশাসনের কর্তারা।
বহরমপুরের শিল্পতালুক এখন বেশ জমজমাট। একইভাবে রেজিনগরের শিল্প তালুককও চালু করতে চাইছে জেলা প্রশাসন। ইতিমধ্যেই শিল্পতালুকের বিভিন্ন জায়গা পরিদর্শন করেন জেলাশাসক সহ ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের প্রতিনিধিরা। ছোট ছোট অনেক ব্যবসায়ী সেখানে জমি নেওয়ার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। এরই মধ্যে এদিনের সিনার্জি যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে ব্যবসায়ী মহল। সিনার্জির প্রস্তুতি নিয়ে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসনের দপ্তরে একটি বৈঠক হয়।
সম্প্রতি, বোলপুরে আয়োজিত সিনার্জিতে যোগ দিয়েছিল মুর্শিদাবাদ। সামগ্রিকভাবে জেলার জন্য এমএসএমই ও টেক্সটাইল দফতরের আয়োজনে ‘সিনার্জি অ্যান্ড বিজনেস ফেসিলিটেশন কনক্লেভ’-এর আয়োজন করা হয়েছে জেলা পরিষদের প্রেক্ষাগৃহে। একসময় রেশম, শাঁখ, পিতল-কাঁসা শিল্পে অগ্রণী ভূমিকা ছিল মুর্শিদাবাদের। এখন অর্থনীতিতে অন্যতম পিছিয়ে পড়া জেলা এটি। বেকারের সংখ্যা হু হু করে বেড়েছে। বাধ্য হয়ে পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ভিনরাজ্যে কাজে যাচ্ছেন জেলার যুবকরা। যথাযথ স্কিল বা প্রশিক্ষণ নেই তাঁদের। ফলে, নানা ঝুঁকি নিয়ে বিভিন্ন দেশে কাজ করতে হচ্ছে তাঁদের। অনেক সময় তাঁরা বিদেশে গিয়ে বিপদেও পড়ছেন। তাঁদেরও দাবি, বড় ও মাঝারি শিল্পের মাধ্যমে জেলায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হোক। তা হলে স্বাভাবিকভাবেই জেলায় পরিযায়ী শ্রমিকের সংখ্যা কমবে।
জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পরেই আমরা জেলা পর্যায়ে একটি সিনার্জি আয়োজন করার প্রস্তুতি শুরু করি। সর্বসম্মতিক্রমে শুক্রবার সেটা হবে। আশা করি, জেলার সবস্তরের শিল্পপতি, উদ্যোগপতি ও ব্যবসায়ীদের একসঙ্গে বসিয়ে তাঁদের সুবিধা-অসুবিধা শোনা হবে। মুর্শিদাবাদে আরও কি কি শিল্প তৈরি করা যায়, সে ব্যাপারেও আলোচনা হবে। ডিস্ট্রিক্ট চেম্বার অফ কমার্সের সাধারণ সম্পাদক স্বপন ভট্টাচার্য বলেন, ‘বীরভূমের সিনার্জিতে আমরা কিছু সমস্যা ও দাবির কথা জানিয়েছিলাম। সেখানে আমাদের জেলার আধিকারিকরাও ছিলেন। এবার এখানে সিনার্জি হওয়ায় আমাদের সুবিধা হল। জেলার বিভিন্ন শিল্পক্ষেত্রে পৃথক পৃথক কিছু সমস্যা রয়েছে। সেইসব নিয়ে খোলামেলা আলোচনার একটা প্ল্যাটফর্ম হয়ে উঠবে এই সিনার্জি।
সভাধিপতি বলেন, জেলার যে শিল্প সম্ভাবনা রয়েছে, সেগুলি কাজে লাগিয়ে জেলার শিল্পপতি এবং বাইরের জেলা থেকে আগত শিল্পপতিরা এখানে বিনিয়োগ করবেন। জেলাশাসক আপ্রাণ চেষ্টা করছেন যাতে এই জেলায় কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয় এবং উৎপাদন বাড়ে। সিনার্জিতে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী মহলের দাবি এবং আশার কথা শুনব আমরা।