এই সময়, ভদ্রেশ্বর: শহরের রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের টুকরো সংগ্রহ করে পুরসভার কাছে জমা দিলেই মিলবে মা ক্যান্টিনের খাবার। প্লাস্টিক মুক্ত শহর তৈরির লক্ষ্যে এই অভিনব উদ্যোগ নিয়েছে ভদ্রেশ্বর পুরসভা। প্লাস্টিকের বিনিময়ে দেওয়া হবে কুপন। সেই কুপন দেখিয়ে ভদ্রেশ্বর পালবাগানে পুরসভার মা ক্যান্টিন থেকে বিনা পয়সায় খাবার পাওয়া যাবে। ১ কেজি বর্জ্য প্লাস্টিক জমা দিলে দেওয়া হবে দু'টি কুপন। ২ কেজি প্লাস্টিক দিলে মিলবে ৫টি কুপন।
পুরসভা সূত্রের খবর, এই প্রকল্প চালু হওয়ার পর থেকে প্রতিদিন ভদ্রেশ্বর পুরসভার পালবাগান লজে মা ক্যান্টিনে বহু মানুষ প্লাস্টিক বর্জ্য জমা করতে আসছেন। তাঁদের বেশিরভাগই আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষ। ভবঘুরে এবং ভিখারিরাও রাস্তা থেকে প্লাস্টিক কুড়িয়ে নিয়ে আসছেন। পুরকর্তারা জানাচ্ছেন, প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ ১ কেজির কম হলে যে মা ক্যান্টিনের খাবারের কুপন দেওয়া হবে না, এমনটা কিন্তু নয়। সমস্ত স্তরের মানুষকেই এই কাজে সামিল হওয়ার জন্য পুরসভার তরফে আহ্বান জানানো হয়েছে।
করোনার সময় শ্রমজীবী এবং আর্থিক ভাবে পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্য মা ক্যান্টিন চালু করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। মাত্র ৫ টাকার বিনিময়ে মা ক্যান্টিনে দুপুরের খাবার পাওয়া যায়। মেনুতে থাকে ডাল, ভাত, সবজি ও ডিম। ভদ্রেশ্বর পুরসভার উদ্যোগেও মা ক্যান্টিন চালু হয়েছে। পুরসভার দেওয়া হিসেব অনুযায়ী, প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৩০০ মানুষ মা ক্যান্টিনে খাবার খান। সেই মা ক্যান্টিনকে সামনে রেখেই ভদ্রেশ্বর শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখার নতুন উপায় খুঁজে বের করেছেন পুর কর্তৃপক্ষ। চলতি মাসের গোড়ায় এই প্রকল্প চালু হওয়ার পরে মা ক্যান্টিনে খেতে আসা মানুষের সংখ্যা ৩০০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৩৩০-এর আশপাশে।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ভদ্রেশ্বর পুরসভার অধীনে স্থায়ী ও অস্থায়ী মিলিয়ে প্রায় ৫৫০ জনের মতো সাফাইকর্মী রয়েছেন। হাতে টানা গাড়ি, ভ্যান, যন্ত্রচালিত যান ও ডালা গাড়ি রয়েছে প্রায় ২০০টি। আর পাঁচটা পুরসভার মতো এখানেও সাফাইকর্মীরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে ঘুরে ঘুরে বাড়ি থেকে পচনশীল ও অপচনশীল বর্জ্য সংগ্রহ করেন। তা সত্ত্বেও শহরের আনাচে কানাচে অনেক প্লাস্টিকের টুকরো পড়ে থাকতে দেখা যায়। তার জেরে একদিকে যেমন শহরের রাস্তাঘাট অপরিচ্ছন্ন হচ্ছে, তেমনি দূষণ বাড়ছে। নিকাশি নালার মাধ্যমে রাস্তাঘাটে পড়ে থাকা প্লাস্টিকের বর্জ্য সরাসরি চলে যাচ্ছে গঙ্গায়। তাতে গঙ্গার জলও দূষিত হচ্ছে। ম্যানহোলের মুখে প্লাস্টিক জমে থাকায় বর্ষার সময় শহরের নিকাশি ব্যবস্থা ভেঙে পড়ছে। একটু বৃষ্টি হলেই রাস্তাঘাটে জল জমে যাচ্ছে। তা থেকে থেকে মুক্তির পথ খুঁজতেই প্লাস্টিকের বিনিময়ে খাবার বিলির পরিকল্পনা নিয়েছে ভদ্রেশ্বর পুরসভা।
পুরসভার এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানাচ্ছেন আম নাগরিকরাও। সুভাষ ময়দানের বাসিন্দা অনুপ দাস বলেন, 'শহরকে প্লাস্টিক মুক্ত করতে পুরসভা যে উদ্যোগ নিয়েছে, সেটা এক কথায় অনবদ্য। রাজ্যের যত পুরসভা ও পঞ্চায়েত রয়েছে, তাদেরও এই পথ অনুসরণ করা উচিত।' ভদ্রেশ্বরের পুরপ্রধান প্রলয় চক্রবর্তী বলেন, 'মূলত সচেতনতা বৃদ্ধির জন্যই আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। মা ক্যান্টিন থেকে খাবার খেতে গেলে ৫ টাকা লাগে। অনেক গরিব মানুষ আছেন, যাঁদের কাছে সেই টাকাটাও থাকে না। তাঁরা এই প্রকল্পের অংশীদার হয়ে মা ক্যান্টিন থেকে বিনা পয়সায় খাবার নিতে পারবেন। আমরা মনে করি, সবারই সমাজের প্রতি কিছু দায়বদ্ধতা রয়েছে।'
সাধারণ নাগরিকদের উদ্দেশে তাঁর পরামর্শ, 'বাড়িতে কোনও প্লাস্টিক জমে থাকলে, সেটা আপনার পাশের কোনও গরিব মানুষের হাতে তুলে দিন। তা দিয়ে তাঁরা একমুঠো খেতে পাবেন। শহরটাও পরিষ্কার থাকবে।' পরিবেশকর্মী জয়ন্ত পাঁজা বলেন, 'প্লাস্টিক মুক্ত সমাজ গঠনে অনেক উদ্যোগ নেওয়া হলেও সেগুলি খুব একটা দীর্ঘস্থায়ী হয় না। প্লাস্টিক দূর করলে খাবার মিলবে, ভদ্রেশ্বর পুরসভার এই ভাবনা নিসন্দেহে অভিনব। এতে দূষণও কমবে।'