বছর ঘুরলেই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আর আসন্ন ভোটে ‘সুফল’ ঘরে তুলতে চাইছে আসাদউদ্দিন ওয়াইসি-র রাজনৈতিক দল ‘অল ইন্ডিয়া মজলিস-ই-ইত্তেহাদুল মুসলিমীন’ (মিম)। আর সেই জন্য ‘মিম’-এর টার্গেট মালদা? সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এই জেলায় ২০টির বেশি কার্যালয় খুলেছে ওয়াইসি-র দল। আর মালদায় মিম-এর এই ‘উল্কা উত্থান’ নজর এড়ায়নি রাজনৈতিক দলের। কংগ্রেস দাবি করেছে, বিজেপির সঙ্গে ‘সেটিং’ করেই রাজ্যে মিম-এর বাড়বাড়ন্ত। টার্গেট সংখ্যালঘু ভোট কেটে গেরুয়া শিবিরকে লাভ পাইয়ে দেওয়ার। যদিও বিরোধীদের দাবি উড়িয়ে দিয়েছে বিজেপি। জেলার মিম নেতাদের দাবি, তাঁরা মানুষের জন্য। ‘সেটিং তত্ত্ব’ অলীক। আর এই রাজনৈতিক শব্দ নিক্ষেপের মধ্যেই জানুয়ারিতে মালদায় পা রাখছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি, দলীয় সূত্রে খবর এমনটাই।
আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে মালদা জেলার ১২টি আসনের মধ্যে ১০টিতে প্রার্থী দিতে পারে মিম, সূত্রের খবর এমনটাই। ইতিমধ্যেই জেলায় সক্রিয় হতে দেখা যাচ্ছে ওয়াইসি-র ‘সৈনিক’-দের। ওয়াকফ নিয়ে মালদা জেলাশাসকের দপ্তরের সামনে বিক্ষোভ দেখিয়ে নজর কেড়েছেন তাঁর দলের নেতারা। মিম-এর মালদা জেলার সভাপতি রেজাউল করিম বলেন, ‘মালদা জেলায় ২০টি দলীয় কার্যালয় খোলা হয়েছে। এই মাসেই অধিকার যাত্রার কর্মসূচি রয়েছে জেলায়।’ জানুয়ারির প্রথম বা দ্বিতীয় সপ্তাহে মালদা এবং মুর্শিদাবাদে আসছেন আসাদউদ্দিন ওয়াইসি। ক'টি আসনে দল লড়বে, সেই সিদ্ধান্ত আলোচনার ভিত্তিতে হবে, জানান এই নেতা। তবে তাঁর দাবি, আট থেকে দশটি আসন টার্গেট করছে তাঁদের দল।
তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে মুর্শিদাবাদ জেলায় ‘বাবরি মসজিদ’ তৈরি নিয়ে ভরতপুরের বিধায়ক হুমায়ুন কবীরের সমালোচনায় সরব তৃণমূল-বিজেপি, সেই সময়ে এই মিম নেতা তাঁকে সমর্থন করে বলেন, ‘তিনি নিজের টাকায় মসজিদ তৈরি করছেন। এই নিয়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’
কিন্তু কেন মিম-এর টার্গেটে মালদা? রাজনৈতিক মহলের মতে, মালদা জেলায় মোট ১২টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে। এর মধ্যে গত বিধানসভা ভোটে শুধুমাত্র মালতীপুর আসনের লড়াই করেছিল মিম। অন্যদিকে, ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে হিন্দু অধ্যুষিত গাজল, ইংরেজবাজার, পুরাতন মালদা, হবিবপুর আসনগুলি যায় বিজেপির দখলে। সংখ্যালঘু অধ্যুষিত অঞ্চল হরিশ্চন্দ্রপুর, চাঁচল, মালতিপুর, সুজাপুর ও মোথাবাড়ি আসন দখল করে তৃণমূল। জনসংখ্যার বিন্যাসে হিন্দু এবং সংখ্যালঘু বিন্যাস যেখানে প্রায় অর্ধেক-অর্ধেক, সেই বৈষ্ণবনগর, মানিকচক ও রতুয়া আসনগুলি দখল করে তৃণমূল। মালদা জেলায়মোট আটটি আসন পেয়েছিল তৃণমূল। চারটি যায় বিজেপির হাতে। এ বার সংখ্যালঘু ভোটকে টার্গেট করেই মালদাকে পাখির চোখ করতে চাইছে মিম, মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
যদিও মিম-এর উত্থান নিয়ে মাথা ঘামাতে নারাজ জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি আব্দুর রহিম বক্সি। তিনি বলেন, ‘উচ্ছিষ্ট খাবার ডাস্টবিনে ফেলা হয়। পাতে দিলেও কেউ খায় না। মিমও ডাস্টবিন থেকে উঠে আসছে। এখানের মানুষ মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায়ের সঙ্গে রয়েছেন। আর সেই কারণেই মিম টিকবে না। যাঁরা পতাকা ধরছেন, তাঁরা একটা আর্থিক সাহায্য পাচ্ছেন।’
অন্যদিকে, জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি আব্দুল হান্নান তুলেছেন ‘সেটিং তত্ত্ব’। তিনি মিম-কে তোপ দেগে বলেন, ‘এরা বিজেপির থেকে টাকা নিয়ে মুসলিম ভোট কেটেছে, যা কল্পনার অতীত।’ যদিও এই সমস্ত সেটিং তত্ত্ব খারিজ করে দিয়েছেন জেলা বিজেপি নেতৃত্ব। মালদা জেলার বিজেপি নেতা অম্লান ভাদুড়ি বলেন, ‘বিজেপি নিজের ক্ষমতায় লড়ে। অন্য কারও সহায়তার প্রয়োজন হয় না। একটি ভুয়ো ন্যারেটিভ তৈরি করা হচ্ছে। যা তৈরি করছে তৃণমূল।’
(রিপোর্টিং: কৌশিক দে)