রণজয় সিংহ: Sir আতঙ্কে মৃত্যুর খবর প্রথম নয়। স্যর শুরুর পর থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় বহু মানুষ এই আতঙ্কে জীবন হারিয়েছেন। কেউ আত্মহত্যা করেছেন, আবার কেউ আতঙ্কে মারা গিয়েছে। ফের সেই আতঙ্কই কাড়ল এক তৃণমূল কর্মীর প্রাণ। মৃত তৃণমূল কর্মীর নাম বরকত শেখ(৩২)। হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়। বরকত শেখের মৃত্যু নতুন করে আতঙ্কের ছায়া ফেলেছে।
শুক্রবার সন্ধ্যেবেল বরকত শেখ (৩২), যিনি তৃণমূল কর্মী ছিলেন, কালিয়াচক বিডিও অফিসের বাইরে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। অভিযোগ, নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে তাঁর বাবার নাম সঠিকভাবে লেখা হয়নি। বরকত শেখের বাবার সঠিক নাম রশুল শেখ, কিন্তু ওয়েবসাইটে শুধু 'শেখ' লেখা ছিল। এই ভুল দেখার পর বরকত দ্রুত কালিয়াচক ৩নং ব্লক অফিসে যান। সেখানে তিনি নাম সংশোধন বা তালিকায় ঠিকমতো নাম ওঠার নিশ্চয়তা চাইতে গিয়েছিলেন। কিন্তু অফিসের পক্ষ থেকে তাকে কোনো সঠিক উত্তর দেওয়া হয়নি। এই অনিশ্চয়তা এবং আতঙ্কের কারণে বরকতের মধ্যে দুশ্চিন্তা বেড়ে যায়। আর এই আতঙ্কে শুক্রবার সন্ধ্যয় কালিয়াচক বিডিও অফিসের বাইরে তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হন।
বৈষ্ণবনগর বিধানসভার বিধায়ক চন্দনা সরকার এই ঘটনায় নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি অভিযোগ করেন নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে চকসেহেরদি গ্রামের বাসিন্দা বরকত শেখের বাবার নাম রশুল শেখের পরিবর্তে শুধু 'শেখ' লেখা ছিল। এই তথ্যগত ত্রুটি বরকত শেখ মারাত্মক উদ্বেগ ফেলে দেয়। যার জেরে এই ঘটনা ঘটেছে। যদিও এই ঘটনা নিয়ে তৃণমূলকে কটাক্ষ বিজেপি নেতৃত্বের।
উল্লেখ্য, বাংলায় SIR শুরু হতেই, এসআইআর আতঙ্কে শুরু হয় 'মৃত্যুমিছিল'। আগরপাড়া, কোচবিহার, ডানকুনি, দীঘা, উলুবেড়িয়া, কান্দি, বহরমপুর, ইলামবাজারের পরে সেই তালিকায় যোগ হয়েছে বীরভূমের সাঁইথিয়া, দক্ষিণ ২৪ পরগনার কুলপি ও জলপাইগুড়ির ধূপগুড়ির নামও।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের SIR শেষ। আগামী ১৬ ডিসেম্বর প্রকাশ করা হবে খসড়া ভোটার তালিকা। নির্বাচন কমিশন নিশ্চিত করেছে, খসড়া তালিকায় নাম বাদ গেলেও আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, কারণ নাম তোলার জন্য পর্যাপ্ত সময় ও সুযোগ রয়েছে। SIR-এর গুরুত্বপূর্ণ সময়সূচি- দাবি ও অভিযোগ জানানোর শেষ দিন-১৫ জানুয়ারি, হিয়ারিং (Hearing) ও নিষ্পত্তির প্রক্রিয়া- ১৬ ডিসেম্বর থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ- ১৪ ফেব্রুয়ারি।
খসড়া তালিকায় নাম আছে কি না, কীভাবে জানবেন?
এনুমারেশন ফর্ম পূরণ করার পরেও তালিকায় নাম উঠেছে কি না, তা যাচাই করার জন্য নির্বাচন কমিশন দু’টি সহজ পদ্ধতি জানিয়েছে: অনলাইন এবং অফলাইন।
১. অনলাইন পদ্ধতি (Digital Verification)
আপনি ঘরে বসেই চারটি উপায়ে অনলাইনে আপনার নাম যাচাই করতে পারবেন:
নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইট: নির্বাচন কমিশনের অফিশিয়াল ওয়েবসাইট eci.gov.in-এ যান।
সিইও পশ্চিমবঙ্গ ওয়েবসাইট: রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের (CEO) ওয়েবসাইট ceowestbengal.wb.gov.in দেখুন।
ECI Net অ্যাপ: এই অ্যাপ ব্যবহার করে নাম যাচাই করতে পারেন।
জেলা নির্বাচনী আধিকারিকের (DEO) ওয়েবসাইট: আপনার জেলার ডিইও-দের ওয়েবসাইটেও খসড়া তালিকা পাওয়া যাবে।
দ্রষ্টব্য: এই সাইট বা অ্যাপগুলিতে গিয়ে নিজের নাম এবং এপিক নম্বর (EPIC Number) দিয়ে সার্চ করলেই তালিকায় আপনার নাম রয়েছে কি না, তা জানা যাবে।
২. অফলাইন পদ্ধতি (Physical Verification)
যাঁরা অনলাইনে দেখতে সমস্যা বোধ করছেন, তাঁরা এই পদ্ধতিতে করতে পারেন:
বুথ লেভেল অফিসার (BLO): রাজ্যের সমস্ত বুথ লেভেল অফিসারদের কাছে খসড়া তালিকার হার্ড কপি দেওয়া হবে। ভোটাররা তাঁদের নিজ নিজ বুথের বিএলও-র কাছে গিয়ে নাম যাচাই করতে পারবেন। খসড়া তালিকা প্রকাশের দিন বিএলও-দের বুথে থাকার অনুরোধ করেছে কমিশন।
বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA): রাজ্যের স্বীকৃত আটটি রাজনৈতিক দলের বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA)-দের কাছেও খসড়া ভোটার তালিকার হার্ড কপি থাকবে। তাঁদের মাধ্যমেও আপনি নাম যাচাই করতে পারেন।
নাম বাদ গেলে কী করবেন? খসড়া তালিকা থেকে যদি আপনার নাম বাদ পড়ে যায়, তবে চিন্তার কিছু নেই। চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশের আগে নাম তোলার জন্য যথেষ্ট সময় ও সুযোগ দেওয়া হচ্ছে:
অভিযোগ জানান: যদি মনে হয় ভুলবশত নাম বাদ পড়েছে, তবে ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগ বা দাবি জানানো যাবে।
ফর্ম পূরণ: যাঁদের নাম বাদ যাবে, তাঁরা অনলাইনে ফর্ম ৬ ও অ্যানেক্সার ৪ পূরণ করে আবেদন করতে পারবেন।