ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: খেয়ালি আবহাওয়ায় একদিকে চায়ের উৎপাদন কমছে। অন্যদিকে, চায়ে মিলছে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ। এই জোড়া ফলায় চরম সংকটে উত্তরের চা শিল্প। মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন চায়ের বড় ক্রেতারা। তাঁরা অনেকেই উত্তরবঙ্গের সিটিসির বদলে কিনছেন অসমের চা। এদিকে, সিটিসিতে বিশেষ করে বটলিফের চায়ে যে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ মিলছে, সেব্যাপারে ইতিমধ্যেই সতর্ক করেছে টি বোর্ড।
উত্তরবঙ্গজুড়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা প্রায় ২৭৫টি বটলিফ ফ্যাক্টরি কর্তৃপক্ষ অবশ্য এনিয়ে নিজেদের ঘাড়ে দায় নিতে নারাজ। তাদের দাবি, বটলিফে চা তৈরির সময় কোনও কেমিক্যাল মেশানো হয় না। তাছাড়া যখন তারা কাঁচা চা পাতা কিনে থাকে, তখন সেই পাতায় নিষিদ্ধ কীটনাশক কতটা মাত্রায় রয়েছে তা পরীক্ষা করার মতো কোনও যন্ত্র তাদের কাছে নেই। ফলে যদি চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ধরা পড়ে, সেক্ষেত্রে যারা কাঁচা চা পাতা দিচ্ছে, তাদেরকেই এর দায় নিতে হবে। তবে চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ ধরা পড়ায় অনেক সংস্থাই যে বটলিফের চা কেনা বন্ধ করে দিয়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন নর্থবেঙ্গল টি প্রোডিউসার ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সঞ্জয় ধানুটি। তাঁর দাবি, প্রচুর চা পড়ে থাকছে। বাধ্য হয়ে ৯০ টাকা কেজি দরে চা বিক্রি করতে হয়েছে। নিলামে অংশগ্রহণকারী ক্রেতারা জানাচ্ছেন চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশক প্রয়োগ বন্ধ করতে হবে। এ ব্যাপারে আমাদের যাঁরা কাঁচা পাতা দেন অর্থাৎ ক্ষুদ্র চা চাষিদেরই বিষয়টি দেখতে হবে।
নিরাপদ চা উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রচার চললেও যে পুরোপুরি তা সম্ভব হচ্ছে না, এ ব্যাপারে স্বীকার করে নিয়েছেন জলপাইগুড়ি জেলা ক্ষুদ্র চা চাষি সমিতির সাধারণ সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, এটা ঠিক যে, চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশকের অবশিষ্টাংশ মেলায় বেশকিছু বড় সংস্থা এবছর উত্তরবঙ্গ থেকে বটলিফের চা কেনেনি। তারা অসম থেকে চা কিনছে। এটা চা শিল্পের জন্য বড় অশনি সংকেত। আমরা বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনকে চিঠি দিয়েছি।
চায়ের উৎপাদন কমে যাওয়া নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বিজয়গোপাল। তিনি বলেন, জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত বাগানে ভালো চা পাতা পাওয়ার সময়। কিন্তু খামখেয়ালি আবহাওয়ার জেরে উৎপাদন কমছে। কখনও বৃষ্টি নেই আবার কখনও টানা কয়েকদিন ভারী বৃষ্টি, এরই জেরে চা পাতার উৎপাদন মার খাচ্ছে বলে দাবি তাঁর।
খেয়ালি আবহাওয়ার জেরে চা বাগানে পোকার আক্রমণ মারাত্মকভাবে বেড়ে গিয়েছে বলে দাবি ইন্ডিয়ান টি প্ল্যান্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের মুখ্য উপদেষ্টা অমিতাংশু চক্রবর্তীর। তিনি বলেন, পোকার দাপট ঠেকাতেই কোনও কোনও চা চাষি মারাত্মক হারে কীটনাশক প্রয়োগ করে ফেলছেন। কেউ আবার হয়তো নিষিদ্ধ কীটনাশক ব্যবহার করছেন। ফলে চায়ের অবশিষ্টাংশের মধ্যে সেই কীটনাশকের প্রভাব থেকে যাচ্ছে। তবে শেড গার্ডেনে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে না, যা হচ্ছে সবই ক্ষুদ্র চা বাগানে। এমনটাই তোপ তাঁর।
টি বোর্ডের শিলিগুড়ির ডেপুটি ডিরেক্টর কমলচন্দ্র বৈশ্য বলেন, গত কয়েকমাসে আমরা বিভিন্ন টি ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় সাড়ে তিনশো চায়ের নমুনা সংগ্রহ করেছি। সেগুলি পরীক্ষা করা হয়েছে। দেখা গিয়েছে, বেশকিছু চায়ে নিষিদ্ধ কীটনাশকের প্রভাব রয়েছে। এনিয়ে সতর্ক করা হয়েছে সংশ্লিষ্ট বটলিফগুলিকে।