আজকাল ওয়েবডেস্ক: শনিবার রাতে কলকাতা বিমানবন্দরের সামনে যখন অধীর আগ্রহে ফুটবলের 'রাজপুত্র' লিওনেল মেসিকে একটু চোখের দেখা দেখতে ভিড় করেছেন ফুটবলপ্রেমীরা ঠিক সেই রাতেই একটি বিশেষ কাজে 'সেঞ্চুরি' করে ফেলল মুর্শিদাবাদ পুলিশ।
আর এক রাতে পুলিশের এই 'সেঞ্চুরি' ঘিরে শোরগোল পড়ে গিয়েছে গোটা জেলায়। কীভাবে এই সেঞ্চুরি হল এবং পুলিশকে এই সেঞ্চুরি করতে দেওয়ার পেছনে কারা দায়ী তার খোঁজ শুরু করে দিয়েছেন পুলিশ কর্তারাই।
রাজ্যে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য রেখে ইতিমধ্যেই মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার তরফ থেকে বিভিন্ন থানা এলাকায় বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র গুলি এবং বোমা উদ্ধারের জন্য বিশেষ অভিযান চালু করা হয়েছে।
এর পাশাপাশি পুলিশ জেলার তরফ থেকে একটি বিশেষ ফোন নম্বরও চালু করা হয়েছে। যেখানে ফোন করে যেকোনও ব্যক্তি মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার যেকোনও প্রান্তে লুকিয়ে রাখা বোমা বা বিস্ফোরকের খবর পুলিশকে জানাতে পারেন।
তার বিনিময়ে পরিচয় গোপন রেখে সেই ব্যক্তিকে পুলিশের তরফ থেকে পুরস্কৃত করাও শুরু হয়েছে। পুলিশের এই উদ্যোগের ফলও মিলেছে হাতেনাতে। ইতিমধ্যে কয়েক দফায় হাজার খানেক বোমা, প্রচুর বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার অন্তর্গত জলঙ্গি ,বেলডাঙ্গা এবং সালার থানার আধিকারিকরা তিনটি পৃথক জায়গায় অভিযান চালিয়ে উদ্ধার করলেন মোট ১০৪টি তাজা বোমা।
এক রাতে পুলিশের এই বোমা উদ্ধারের 'সেঞ্চুরি' হওয়ায় সাধারণ মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জেগেছে ভোটের আগে এত বোমা কোথায় তৈরি হচ্ছে এবং কারা এই বোমা তৈরি করাচ্ছে!
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, শুক্রবার গভীর রাতে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে জলঙ্গি থানার পুলিশ বুধগাড়ি-সিশাম বাগান এলাকায় অভিযান চালায়। সেখানে একটি হলুদ নাইলনের ব্যাগের মধ্য থেকে উদ্ধার হয় দশটি তাজা সকেট বোমা।
প্রায় একই সময়ে বেলডাঙ্গা থানার অন্তর্গত কাজীশাহ এলাকায় অভিযান চালিয়ে ৮৯টি সকেট বোমা উদ্ধার করে পুলিশ। বোমাগুলি দু'টি প্লাস্টিকের ড্রামের মধ্যে ঢুকিয়ে মাটির তলায় চাপা দিয়ে রাখা ছিল।
শুক্রবার রাতেই সালার থানার কান্দ্রা এলাকায় রাজ্য সড়কের পাশে একটি ঝোপের মধ্যে থেকে পুলিশ ৫টি সকেট বোমা উদ্ধার করেছে। কারা এই বোমা মজুত করে রেখেছিল তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
জেলা পুলিশের তরফ থেকে ইতিমধ্যে 'বম্ব ডিসপোজাল ইউনিট'কে খবর দেওয়া হয়েছে উদ্ধার হওয়া বোমাগুলোকে নিষ্ক্রিয় করার জন্য।
জেলা পুলিশের এক আধিকারিক জানান, নভেম্বর মাসের প্রথম সপ্তাহে বেলডাঙ্গা থানার অন্তর্গত কাপাসডাঙ্গা এলাকায় ১৩১টি এবং মির্জাপুর এলাকায় ৮০টি সকেট বোমা একসঙ্গে উদ্ধার করা হয়েছিল।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মুর্শিদাবাদ জেলায় গত এক মাসে হাজারখানেক বোমা নিষ্ক্রিয় করার পরও নতুন করে বোমা উদ্ধারের ঘটনায় যথেষ্টই উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
কাজীশাহ গ্রামের এক বাসিন্দা নাম না প্রকাশের শর্তে বলেন, 'রাতের অন্ধকারে কোথায় এই বোমা তৈরি হচ্ছে এবং কারা এই বোমা তৈরির পেছনে যুক্ত, এই বোমা-বারুদ কোথা থেকে আসছে তা আমরা বুঝতে পারছি না। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচনের আগে বারে বারে বেলডাঙ্গা থানা এলাকার বিভিন্ন গ্রামে একসঙ্গে বিপুল পরিমাণে বোমা উদ্ধার হওয়ায় আমরা যথেষ্ট উদ্বেগের মধ্যে রয়েছি।'
মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার এক আধিকারিক জানান, জেলার বিভিন্ন থানা এলাকায় বোমা তৈরির জন্য বারুদ এবং আনুষঙ্গিক মশলার যোগান কোথা থেকে আসছে তা আমরা খতিয়ে দেখছি। এর পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় বোমাবাজি এবং অন্যান্য অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের একটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। আগামী বছরের বিধানসভা নির্বাচন শান্তিপূর্ণ করার জন্য মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলার তরফ থেকে সমস্ত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।