• মতের বিরুদ্ধে বিয়ে ভাঙতে IC-র দ্বারস্থ কিশোরী
    এই সময় | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • এই সময়, কান্দি: বিয়ের তোড়জোড় চলছিল বাড়িতে। শনিবার ছিল সেই দিন। কিন্তু শুক্রবার রাতেই তা নিজেই রুখে দিল কিশোরী! বাড়ি থেকে বেরিয়ে সটান হাজির হলো মুর্শিদাবাদের কান্দি থানায়। আইসি মৃণাল সিনহার সঙ্গে দেখা করে নিজের বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার কথা জানায় একাদশ শ্রেণির ছাত্রী। আইসি-র মুখোমুখি হয়ে জানায়, সে পড়াশোনা করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চায়। কিন্তু মা মরা মেয়ে বলে তাকে বিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চান পরিবারের লোকজন।

    ওই কথা শুনে আইসি ষোড়শীর পড়াশোনার যাবতীয় ভার নেওয়ার কথা জানান। সেই সঙ্গে কিশোরীর মামাকে ডেকে পাঠান থানায়। মামা তাঁর ভাগ্নিকে নিজের বাড়িতে রাখার কথা জানান। সেই মতো মামার বাড়ির কাছাকাছি একটি স্কুলে তাকে ভর্তি করানোর বিষয়ে উদ্যোগ নেবেন বলেও জানান আইসি। জানা গিয়েছে, কিশোরীর বাড়ি মুর্শিদাবাদের বড়ঞা থানার অমৃতমুনি গ্রামে। বাবা নির্মল মণ্ডল পেশায় পরিযায়ী শ্রমিক হিসেবে ওডিশায় কর্মরত। আর কিশোরী আন্দি লালচাঁদ হাইস্কুলের একাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করে।

    পরিবার সূত্রের খবর, কিশোরীরা দুই বোন। কয়েক বছর আগে কীটনাশক খেয়ে মা আত্মঘাতী হন। ছোট বোন মাসির বাড়িতে কলকাতায় থাকে। বাড়িতে দাদু, জেঠু-জেঠিমা, কাকু-কাকিমা রয়েছেন। কিশোরীর বাবার অনুপস্থিতিতে অমৃতমুনি গ্রামের পাশের গ্রাম মহিষগ্রামের বাসিন্দা ৩৬ বছরের এক যুবকের সঙ্গে ১৬ বছরের কিশোরীর বিয়ে ঠিক করেন পরিবারের সদস্যরা। শুরু থেকেই বিয়েতে মত ছিল না মেয়েটির। কিন্তু তার কথায় আমল দেননি বাড়ির বড়রা। তার ইচ্ছের বিরুদ্ধে একপ্রকার জোর করেই বিয়ের বন্দোবস্ত করেন তাঁরা।

    এ দিকে মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে বাবা নির্মল মণ্ডল ওডিশা থেকে বাড়িতে হাজির হন। বাবাকে মেয়েটি সাফ জানায় তার বিয়েতে মত নেই। অভিযোগ, সে কথা শুনে ওই কিশোরীকে মারধর করেন কাকা-জেঠু। এমনকি বিয়েতে রাজি না-হলে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। এর পরে কিশোরী বাড়ি থেকে বেরিয়ে ফোন করে মামার বাড়িতে। কান্দি থানার চন্দ্রসিংহপুরের বাসিন্দা মামা পবন বিশ্বাসকে সঙ্গে নিয়ে ভাগ্নি কান্দি থানায় যায়।

    আইসি জানান, শুক্রবার রাতেই কিশোরীর বাবাকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। ১৮ বছরের আগে মেয়ের বিয়ে দিলে নাবালিকা বিবাহ আইন রোধে সাজার কথা শোনানো হয়েছে। তার পরে কিশোরীর বাবা বিয়ে ভেস্তে দেওয়ার কথা জানিয়েছেন পাত্রের বাড়িতে। ওই কিশোরীর কথায়, 'আমাকে মন দিয়ে পড়াশোনা করতে বলেছেন আইসি। সে ভাবেই পড়াশোনা করে স্বাবলম্বী হয়ে আইসি-র মুখ উজ্জ্বল করব। মামার বাড়িতে নিশ্চিন্তে পড়তে পারব।'

  • Link to this news (এই সময়)