সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: দেশজুড়ে এনআরসি কার্যকরের পথ প্রশস্ত হল। শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে আসন্ন সেন্সাসের জন্য যে অর্থবরাদ্দ হয়েছে, সেখানে পৃথকভাবে ন্যাশনাল পপুলেশন রেজিস্টারের (এনপিআর) কোনও উল্লেখ করেনি সরকার। এর অর্থ একটাই—দেশজুড়ে এনআরসি হতে চলেছে সেন্সাসের পরই। আর সেই কারণে শুরু হয়েছে প্রবল জল্পনা। বাজেট বরাদ্দেও এনপিআর খাতে কিছু নেই, যা ২০১৯ সালে করা হয়েছিল। সেন্সাসের পর সেই রিপোর্টের পাশাপাশি একটি সামগ্রিক জনসংখ্যা ও নাগরিকত্বের ডেটাবেস তৈরি করা হয়। সেটিই এনপিআর। ২০১০ সাল থেকেই তা তৈরি হয়েছিল। কিন্তু ২০২৭ সালের সেন্সাস থেকে সবার অলক্ষ্যে এনপিআর প্রক্রিয়াকে বাতিল করা হয়েছে।
২০১৯ সালে যখন এনপিআর ঘোষণা করা হয়েছিল, সেই সময় প্রবল প্রতিবাদ করে বিরোধীরা। ‘কাগজ দেখাবো না’ আন্দোলন সেই ইস্যুতেই শুরু। এবার এনপিআর প্রক্রিয়াকে বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকেই স্পষ্ট, সেন্সাসের রিপোর্ট প্রকাশিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সরকারি এনআরসি হবে। আর সেটা অসমের ধাঁচে। কারণ, এনপিআর ছাড়া জনসংখ্যা ও নাগরিকত্ব ডেটাবেসের একমাত্র মাধ্যম এনআরসিই। সেই ডেটাবেস ব্যবহার করা হয় সরকারি প্রকল্প নিয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ, অর্থবরাদ্দ এবং বাজেট তৈরির জন্য।
সরকারি সূত্রের খবর, ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এসআইআরের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ। এপ্রিল থেকেই শুরু সেন্সাসের প্রথম ধাপ। অর্থাৎ গৃহগণনা। ২০২৭ সালের মার্চ মাসে জনগণনা শেষ হবে। তারপর এনআরসি। এই ধাঁচেই পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। ২০২৭ সালের মার্চ মাসের মধ্যে সেন্সাস সমাপ্ত হলেও রিপোর্ট প্রকাশ হবে সম্ভবত ২০২৮ সালে। এবং সেই সেই রিপোর্টের ভিত্তিতে হবে ডিলিমিটেশন। ২০২৯ সালের লোকসভা ভোটের আগে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ওই ডিলিমিটেশনের ভিত্তিতেই হবে লোকসভা ও বিধানসভার আসন পুনর্বিন্যাস।
অসমের এনআরসি প্রক্রিয়ার পরই বিজেপি এবং মোদি সরকার বারবার ঘোষণা করেছে যে, এরপর দেশজুড়ে এনআরসি হবে। তবে পরবর্তীতে লোকসভা অথবা রাজ্যসভায় যখনই এই সংক্রান্ত প্রশ্ন করা হয়েছে, তখনই কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বলেছে, এখনও সিদ্ধান্ত হয়নি। যখন সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, তখন জানানো হবে। অর্থাৎ সরকার কখনওই সংসদে একথা বলেনি যে, এনআরসি হবেই না। বরং বলেছে, কবে হবে সেটা সিদ্ধান্ত হয়নি। সেই সূত্র ধরেই মনে করা হচ্ছে এবার সেন্সাস, এনআরসি, ডিলিমিটেশন সূচি তৈরি হয়েছে। ২০১৯ সালে যখন জনগণনার সূচি ও বাজেট ঘোষণা হয়, সেই সময় সেন্সাসের জন্য বরাদ্দ করা হয়েছিল ৮,৭৫৪ কোটি টাকা। আর এনপিআরের জন্য ৩,৯৪১ কোটি টাকা। করোনার কারণে সেন্সাস ওই বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ে অর্থাৎ ২০২১ সালে হতে পারেনি। ২০১০ সালে ভারতে শেষবার হওয়া এনপিআর অনুযায়ী নাগরিকত্ব ও জনসংখ্যা ছিল ১১৯ কোটি। ২০২৭ সালের সেন্সাসে অনুমান করা হচ্ছে তা হবে ১৪৬ কোটি।