যুবকের মৃত্যুর ঘটনায় উত্তপ্ত কাঁথি, গ্রেফতার তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য, মেয়ের সঙ্গে প্রেমের জন্য হুমকি, মারধরের অভিযোগ
বর্তমান | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, কাঁথি: তৃণমূল কংগ্রেসের পঞ্চায়েত সদস্যের আপ্তসহায়ক থাকাকালীন তাঁরই মেয়ের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল গ্রামের এক যুবকের। বিষয়টি জানার পর পঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে হুমকি, মারধর ও পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর ভয় দেখান বলে অভিযোগ। তারপরই ওই যুবক গৌরশঙ্কর গিরির(২৬) মৃত্যুতে উত্তপ্ত হয়ে উঠল কাঁথি থানার বাদলপুর পঞ্চায়েতের জুনবনি গ্রাম। এক সপ্তাহ আগে তিনি বিষ খান। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার তাঁর মৃত্যু হয়। ঘটনায় ক্ষুব্ধ এলকাবাসী রাতে মৃতদেহ পঞ্চায়েত সদস্যের বাড়ির সামনে রেখে তুমুল বিক্ষোভ দেখান। শনিবার মৃতের বাবা থানায় অভিযোগ জানান। পুলিশ অভিযুক্ত তৃণমূলের পঞ্চায়েত সদস্য অনুপম বেরাকে গ্রেফতার করে। থানার আইসি প্রদীপকুমার দাঁ বলেন, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে। সবদিক খতিয়ে দেখা হচ্ছে। উত্তেজনা থাকায় এলাকায় পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দীর্ঘদিন ধরে গৌরশঙ্কর অনুপমের সঙ্গে সবসময় থাকতেন। তাঁকে বাইকে বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যেতেন। অনুপমের বাড়িতে নিয়মিত আসা-যাওয়া ছিল গৌরশঙ্করের। বছর পাঁচেক আগে তাঁর মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল গৌরশঙ্করের। ক্রমশ তাঁদের মধ্যে সম্পর্ক গভীর হয়। বেশ কিছুদিন আগে তাঁরা বিয়ের পরিকল্পনা করেন। মেয়ের সঙ্গে গৌরশঙ্করের সম্পর্কের কথা জানতে পারেন অনুপম। এরপরই ক্ষুব্ধ পঞ্চায়েত সদস্য তাঁকে কাজ থেকে ছাড়িয়ে দেন। মারধর করেন। পরিবারের লোকজনকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানোর হুমকি দেন বলে অভিযোগ। মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে নিষেধ করেন। তিনি মেয়েকে কলকাতার একটি নার্সিং কলেজে ভর্তি করেন।
গ্রামবাসীদের অভিযোগ, গৌরশঙ্কর ইদানীং কোনওভাবে প্রেমিকার সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছিলেন না। এতেই তিনি মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। গত ৪ডিসেম্বর নিজের জন্মদিনেই তিনি বিষ খেয়ে নেন। প্রথমে তাঁকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরে অবস্থার অবনতি হলে এসএসকেএম হাসপাতালে রেফার করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় শুক্রবার ভোরে মারা যান গৌরশঙ্কর। ওইদিন গভীর রাতে দেহ এলাকায় আসে। অভিযুক্ত পঞ্চায়েত সদস্য বাড়ির সামনেই দেহ রাখা হয়। পঞ্চায়েত সদস্য সহ পরিবারের সদস্যদের দায়ী করে তাঁদের উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে কয়েকশো পুরুষ-মহিলা বিক্ষোভে শামিল হন। এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। বিশাল পুলিশ বাহিনী সেখানে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করে। শেষ পর্যন্ত পুলিশ পঞ্চায়েত সদস্যকে আটক করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়। পরে দেহটি সৎকারের ব্যবস্থা করা হয়।
ঘটনার প্রেক্ষিতে মৃত যুবকের বাবা দীপক গিরি শনিবার থানায় ওই পঞ্চায়েত সদস্য, তাঁর স্ত্রী ও মেয়ের নামে অভিযোগ দায়ের করেন। তার ভিত্তিতে আটক পঞ্চায়েত সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
বিজেপির স্থানীয় শক্তিকেন্দ্র প্রমুখ সুরজিৎ বেরা বলেন, শাসকদলের পঞ্চায়েত সদস্যের জন্য একটি ছেলের জীবন চলে গেল। যে কি না একসময় তাঁর সর্বক্ষণের সঙ্গী ছিল। আমরা পুলিশকে ঘটনার তদন্ত করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ করার আর্জি জানিয়েছি। দোষীদের উপযুক্ত শাস্তি চাই।
ব্লক তৃণমূল সভাপতি সুনীত পট্টনায়ক বলেন, যে কোনও মৃত্যুই দুর্ভাগ্যজনক। আইন আইনের পথে চলবে। পুলিশ নিশ্চয়ই সবকিছু খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেবে।