• বাড়ি বিক্রি করে ‘লাভগুরু’কে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা তুলে দেন বর্ধমানের প্রেমিকা
    বর্তমান | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: শুধু চার প্রেমিকার কাছ থেকেই প্রায় দেড় কোটি টাকা হাতিয়েছে ম্যাট্রিমনি অ্যাপের ‘লাভগুরু’ সাহিদ, জামির। বিপুল পরিমাণ সোনার গয়না নিয়েও তারা চম্পট দিয়েছিল। বর্ধমানের এক ‘প্রেমিকা’ বাড়ি বিক্রি করে প্রেমিক সাহিদ আফ্রিদির হাতে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা তুলে দেন। পরে তিনি জানতে পারেন, তাঁর প্রেমিকের নাম অনুপম রায় নয়। সে আদতে সাহিদ আফ্রিদি। অনুপম পরিচয় দিয়ে সে ম্যাট্রিমনি অ্যাপে ভাব জমিয়েছিল। ‘ধোঁকা’ খাওয়ার পরও তিনি প্রেমিকের ক্ষতি চাননি। বিষয়টি জানাজানি হয়ে গেলে পুলিশ প্রেমিককে জেলে পাঠাতে পারে। সেই কারণে প্রতারিত হওয়ার পরও তিনি চুপ থেকে যান। কিন্তু প্রেমিক ‘অনুপম’ ওরফে সাহিদের শেষরক্ষা হয়নি। সে হুগলির এক মহিলাকেও একই কায়দায় প্রতারণা করেছিল। তিনি থানায় অভিযোগ করেন। পুলিশ তদন্তে নেমে সাহিদের সন্ধান পায়। 

    সাহিদকে গ্রেফতার করার পর তার মোবাইল থেকে বিভিন্ন মহিলা ও যুবতীকে প্রতারণা করার বিষয়ে জানতে পারে পুলিশ। বর্ধমানের ওই মহিলার নম্বরও পুলিশ তার মোবাইল থেকে পায়। এরপরই পুলিশ আগ বাড়িয়ে তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করে। ধৃতদের কাছ থেকে উদ্ধার হওয়া নগদ টাকা ও সোনার গয়না ওই মহিলাকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

    পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একাকীত্বে ভুগতে থাকা মহিলারা সাহিদ, জামিরদের জালে জড়াতেন। তারা বিভিন্ন অ্যাপে অ্যাকাউন্ট খুলেছিল। তবে, নিজের আসল নাম কোথাও ব্যবহার করত না। সাহিদ কোথাও ‘অনুপম’ সাজত, আবার কোনও অ্যাপে জামির নিজেকে ‘রাজ’ বলে পরিচয় দিত। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে ফোন নম্বর আদান প্রদান হত। তারা নিজেদের বড় ব্যবসায়ী পরিচয় দিয়ে মহিলাদের সঙ্গে ভাব জমাত। তবে, কখনই সামনে আসত না। ‘প্রেমিকা’র বাড়ির লোকজনদের সঙ্গেও ওই দু’জন কথা বলত। বিয়ের পর তাদের কী পরিকল্পনা রয়েছে, সেসব কিছু বাড়ির লোকজনদের জানাত। যেসব মহিলা আর্থিকভাবে সমৃদ্ধশালী নন, তাঁদের সঙ্গে তারা বেশি দিন সম্পর্ক রাখত না। কয়েকদিন কথা বলার পর সম্পর্ক ছিন্ন করত। তবে, কোনও মহিলা সমৃদ্ধশালী জানতে পারলে সম্পর্ক এগিয়ে নিয়ে যেত। তারপর কখনও তারা জানাত, ব্যবসায় লোকসান হয়েছে। কখনও বলত, আয়কর দপ্তর হানা দিয়েছে। তাই কিছু টাকার দরকার। তাদের জালে জড়িয়ে যাওয়া মহিলারা সেই কথা বিশ্বাস করে টাকা পাঠিয়ে দিতেন। টাকা নেওয়ার পর আর সাহিদদের পাত্তা পাওয়া যেত না।

    এক পুলিশ আধিকারিক বলেন, এখন বহু মহিলা একাকীত্বে ভুগছেন। বিয়ে করার পর অনেক সময় সম্পর্ক বেশিদিন টিকছে না। তাঁরাই আবার পরে অন্য সম্পর্কে জড়াতে চাইছেন। তখনই সাহিদ বা জামিররা অনুপম কিংবা রাজ পরিচয়ে অবতীর্ণ হয়। কথার জালে ফাঁসিয়ে তাঁদের মন জয় করে। কিছুদিনের মধ্যেই বিশ্বাস অর্জন করে টাকা, সোনার গয়না হাতিয়ে নেয়। তবে, তারা কখনোই সামনে আসত না। ‘ক্যারিয়ার’দের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করত। অল্প কিছু টাকা অনলাইনে নিত। (চলবে)
  • Link to this news (বর্তমান)