নিজস্ব প্রতিনিধি, জামুড়িয়া: বালিবোঝাই লরির চাকায় পিষ্ট হয়ে এক গ্রামবাসীর মৃত্যুর ঘটনায় অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠল জামুড়িয়া থানার চিচুড়িয়া ডাঙালপাড়া। পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম শশাঙ্ক গোপ ওরফে পাগল(৪৫)। অভিযোগ, শুক্রবার রাতে গ্রামের রাস্তা পার হওয়ার সময় একটি বালির গাড়ি তাঁকে পিষে দেয়। গ্রামবাসীরা মৃতদেহ রাস্তায় রেখে বালির গাড়ি আটকে দেন। দেহ সরিয়ে অবরোধ তুলতে গেলে উত্তেজিত জনতা পুলিশের উপর চড়াও হয়। পুলিশ কর্মীদের মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। ভাঙচুর চালানো হয় বালিবোঝাই একটি লরিতেও। এরপর বিশাল পুলিশ বাহিনী এসে লাঠিচার্জ করে। উত্তেজিত জনতা ছত্রভঙ্গ হয়। রাস্তায় মৃতদেহ আগলে বসেছিলেন মৃতের স্ত্রী দুর্গা গোপ। অভিযোগ, এক পুরুষ পুলিশকর্মী তাঁর মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তাঁর মাথা ফেটে যায়। এছাড়াও বাড়িতে গিয়ে বেশ কয়েকজনকে পুলিশ লাঠিপেটা করে। মৃতের দাদা কল্যাণ গোপ সহ ছ’জনকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
এসিপি বিমানকুমার মির্ধা বলেন, দুষ্কৃতীরা পুলিশকে মারধর ও গাড়ি ভাঙচুর করেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশকে লাঠিচার্জ করতে হয়। ছ’জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। মৃতের স্ত্রী সহ কোনও মহিলাকে মারধর করা হয়নি।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শুক্রবার রাতে ওই গ্রামে এক মহিলার মৃত্যু হয়। বাসিন্দারা তাঁকে নিয়ে শ্মশানের উদ্দেশে রওনা দেন। শশাঙ্কবাবু পরে শ্মশান যাওয়ার জন্য বাড়ি থেকে বের হন। তখনই গ্রামের রাস্তায় একটি বালির লরি তাঁকে পিষে দেয় বলে অভিযোগ। একমাস পরেই তাঁর মেয়ে বর্ষার বিয়ে। বাড়ির কর্তার মৃত্যুতে গোপ পরিবারের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। এলাকায় যথেষ্ট জনপ্রিয় শশাঙ্কবাবুর এহেন মৃত্যুর বিচার চাইতে ও ক্ষতিপূরণের দাবিতে গ্রামবাসীরা রাস্তা অবরোধ করেন। তারপরই ওই এলাকা কার্যত রণক্ষেত্রের চেহারা নেয়।
শনিবার সকালে দেখা যায়, পুরো গ্রামজুড়ে আতঙ্কের পরিবেশ। মৃতের বাড়ির সামনে মহিলাদের জটলা। মৃতের স্ত্রী দুর্গাদেবী বলেন, স্বামীর মৃতদেহ কোলে নিয়ে যখন বসেছিলাম, সেই সময় পুলিশ মাথায় লাঠি দিয়ে আঘাত করে। তারপর যে যেদিকে পেরেছে ছুটেছে। আমাদের বাড়িতে এসেও পুলিশ মারধর করেছে। মৃতের ভাগ্নে ভুবন গোপ বলেন, আমার পায়ে পুলিশ লাঠির আঘাত করেছে। মৃতকে নিজেদের কর্মী বলে দাবি করে বিজেপি জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্যের নেতৃত্বে নেতা-কর্মীরা ঘটনাস্থলে আসেন। তাঁরা মৃতের বাড়ি গিয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তাঁদের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে ঘটনার প্রতিবাদে চিচুড়িয়া মোড়ে ৬০নম্বর জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন। রানিগঞ্জ থেকে সিউড়ি অভিমুখে যাওয়ার গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা অবরুদ্ধ হয়ে পড়ায় সাধারণ যাত্রীদের হয়রানি হয়। বিজেপির দাবি, মাফিয়াদের নির্দেশে গ্রামের ভিতর দিয়ে অবৈধ বালিবোঝাই গাড়ি চলাচল করছে। তা বন্ধ করতে হবে। মাফিয়াদের গ্রেফতার করতে হবে। মৃতের পরিবারের সদস্য সহ ছ’জনকে মুক্তি দিতে হবে। প্রায় একঘণ্টা পর পুলিশি তদন্তের আশ্বাসে অবরোধ ওঠে।
বিজেপি জেলা সভাপতি দেবতনু ভট্টাচার্য বলেন, ঘটনার পরই পুলিশ কেন বালির গাড়ি যাতায়াত স্বাভাবিক করতে অতিসক্রিয় হল? মৃত্যুর পর ক্ষোভ তো স্বাভাবিক। উল্টে, পুলিশ মৃতের পরিবারের লোকজনকে মারধর ও গ্রেফতার করেছে। আমরা বৃহত্তর আন্দোলন করব।
শনিবার বিকেলে মৃতের স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন জাতীয় মহিলা কমিশনের সদস্য অর্চনা মজুমদার। তিনি বলেন, পুলিশের এই কাজ অমানবিক। কোন আইনের বলে তারা একাজ করেছে, আমি জানতে চাইব।