পেটের ভালো করতে গিয়ে উলটো ফল! প্রোবায়োটিক, প্রিবায়োটিক উপকার করতে পারে মারণ ব্যাকটেরিয়ারই
বর্তমান | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
বিশ্বজিৎ দাস, কলকাতা: ডায়ারিয়া হোক বা পেটের ছোটো-মাঝারি সমস্যা, ‘গাট হেলথ’ বা পেটের স্বাস্থ্যোদ্ধারে ইদানীং প্রোবায়োটিক (উপকারী ব্যাকটেরিয়া) অথবা প্রিবায়োটিক খাদ্য, সাপ্লিমেন্ট বা ড্রিঙ্কস (উপকারী ব্যাকটেরিয়ার খাদ্য) গ্রহণের ধুম পড়েছে। পেটের সমস্যায় চিকিৎসকদের গড়পড়তা প্রেসক্রিপশনেও এখন জায়গা করে নিয়েছে প্রোবায়োটিক।
সেই প্রোবায়োটিক নিয়ে এইবার সাবধানবাণী শোনালেন বিজ্ঞানীরা। টাইফয়েড, ডায়ারিয়া সহ পেটের একাধিক সংক্রমণের কারণ হল সালমোনেল্লা ব্যাকটেরিয়া। সমীক্ষায় জানা গিয়েছে, বছরে প্রায় ১০০ কোটি গ্যাসট্রোএনটেরেটাইটিস বা পেটের সংক্রমণ ঘটায় এই ব্যাকটেরিয়া। এহেন সালমোনেল্লা নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে দেশের শীর্ষ বিজ্ঞান গবেষণা কেন্দ্র বেঙ্গালুরুর ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থা (আইআইএসসি)-এর বিজ্ঞানীরা দেখেছেন, পেটের মধ্যে ফরমেট নামে এক ধরনের রাসায়নিক থাকে। এটি এক ধরনের সর্ট চেইন ফ্যাটি অ্যাসিড। পেটের উপকারী ব্যাকটেরিয়া গৃহীত খাদ্যের পচন ঘটালে উৎপন্ন হয় এই ফরমেট। সালমোনেল্লার মতো বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়া এই ফরমেটকে চিহ্নিত করতে পারলেই ঘটে এক মারাত্মক কাণ্ড! তৎক্ষণাৎ পেটের মধ্যে ঘুরে বেড়াতে থাকা সালমোনেল্লা আরও বিপজ্জনক হয়ে উঠে কোষ ভেদ করে ভিতরে প্রবেশ করতে শুরু করে।
বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, সালমোনেল্লার এমনিতেই অভিযোজন ক্ষমতা মারাত্মক। তার আশপাশের পরিবেশে কী ঘটছে, তাও সে সহজেই বুঝে নিতে পারে। এভাবেই সে যখনই উপকারী ব্যাকটেরিয়ার ফরমেটকে চিহ্নিত করে, আরও আগ্রাসী হয়ে ওঠে। তার নিজের শরীরেও তৈরি হয় ফরমেট। অর্থাৎ, ‘উপকারী ব্যাকটেরিয়া’ যে মানুষের পৌষ্টিকতন্ত্রের সব সময়ের বন্ধু, এমন নয়। সেটাই প্রমাণ করল এই গবেষণা।
আইআইএসসি’র ইউজি শাখার অ্যাসোসিয়েট ডিন এবং দেশের অন্যতম সেরা বিজ্ঞানী ডঃ দীপশিখা চক্রবর্তীর অধীনে গবেষণাটি হয়। সেপ্টেম্বর মাসে প্লস প্যাথোজেন নামক জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে গবেষণাপত্রটি। সেখানে অংশগ্রহণকারী পাঁচ বিজ্ঞানী-গবেষকের তিনজনই বাঙালি। তাঁদের অন্যতম আইআইএসসি’র গবেষক দেবপ্রিয়া মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আমাদের গবেষণা থেকে এটি স্পষ্ট যে প্রোবায়োটিক বা উপকারী ব্যাকটেরিয়াকে ওষুধ হিসেবে বাজারজাত করার আগে দশবার ভাবা উচিত নির্মাতাদের। এই ওষুধ আনার উদ্দেশ্য হল ডায়ারিয়া বা পেটের অসুখে জখম পৌষ্টিকতন্ত্রের সুস্বাস্থ্য ফেরানো। তার বদলে সে যদি বিপজ্জনক ব্যাকটেরিয়াকে সংক্রমণে আরও উৎসাহিত করে, তা মানবজাতির জন্য মোটেই কল্যাণকর হতে পারে না।’
প্রসঙ্গত, ভারতে প্রোবায়োটিক ওষুধ এবং প্রিবায়োটিক খাদ্য-সাপ্লিমেন্টের বাজার প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার কোটি টাকার। অনুমান, ২০৩৩ সালের মধ্যে যা বেড়ে প্রায় ৯-১০ হাজার কোটি টাকা হতে পারে।