বেলুড়ে অনলাইন সাট্টা-লটারি অ্যাপ তৈরির অফিসে হানা ডিইও’র, চাঞ্চল্য
বর্তমান | ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: অনলাইনে বেআইনি লটারি ও সাট্টা চালানোর জন্য অ্যাপ ও ওয়েবসাইট তৈরি হচ্ছে হাওড়ার বেলুড়ে। ইউটিউব ও সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে এই কাজ করছিলেন এক সফ্টওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার। শুক্রবার রাতে তাঁর বাড়িতেই তল্লাশি চালান ডিরেক্টরেট অব ইকোনমিক অফেন্সেস (ডিইও)-এর গোয়েন্দারা। বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে ল্যাপটপ, ভাউচার সহ বিভিন্ন সামগ্রী। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ওই সফ্টওয়্যার ডেভেলপারকে নোটিশ পাঠিয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।
ডিইও’র কাছে ক্রমাগত খবর আসছিল, রাজ্যে একাধিক বেআইনি লটারি ও সাট্টার কারবার চলছে অনলাইনে। এ সংক্রান্ত বেশ কিছু অ্যাপের সন্ধানও মেলে। গুগল প্লে স্টোর থেকে এই অ্যাপ ডাউনলোড করা যায়। এসব দেখার পর হাওড়া থানায় এফআইআর রুজু করে তদন্তে নামে ডিইও। তদন্তে উঠে আসে, বসিরহাট, পূর্ব মেদিনীপুর, নদীয়া, বারাসাত সহ গোটা রাজ্যেই রমরমিয়ে চলছে এই বেআইনি ব্যবসা। তার ভিত্তিতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতারও করা হয়। বন্ধ করে দেওয়া হয় একাধিক ওয়েবসাইট। কিন্তু তদন্তকারীরা এই কারবারের শিকড়ে পৌঁছোতে চাইছিলেন। এই ওয়েবসাইট বা অ্যাপ কারা তৈরি করছে, সেই খোঁজ চালাচ্ছিলেন তাঁরা। সেই সূত্রেই তাঁরা জানতে পারেন, হাওড়ার বেলুড় এলাকায় এক সফ্টওয়্যার ডেভেলপার রয়েছেন। তাঁর একটি ইউটিউব চ্যানেলও আছে। সেই সঙ্গে একাধিক সোশ্যাল মিডিয়ায় রয়েছে অ্যাকাউন্ট। সেখানে রীতিমতো বিজ্ঞাপন দিয়ে বলা হচ্ছে, অনলাইন লটারি, সাট্টা বা গেমিং সাইট চালানোর জন্য অ্যাপ ও ওয়েবসাইট ‘ডেভেলপ’ করে দেওয়া হয়। কোন ‘প্যাকেজ’-এর জন্য কত খরচ, তাও বিজ্ঞাপনগুলিতে বলে দিচ্ছেন তিনি। যেমন, এই ধরনের ওয়েবসাইট তৈরির জন্য খরচ ১০ হাজার টাকা, অ্যাপ তৈরি করলে গুণতে হবে ৫৫ হাজার টাকা। অন্যান্য গেমিং অ্যাপের জন্য এক লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হতে পারে বলে জানাচ্ছেন তিনি। এভাবে রীতিমতো কোম্পানি খুলে বেআইনি ব্যবসা চালাতে সাহায্য করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। তার ভিত্তিতে শুক্রবার বেলুড় এলাকায় ওই সফ্টওয়্যার ডেভেলপারের বাড়িতে হানা দেন ডিইও’র গোয়েন্দারা। অফিস খোলাই ছিল। সেখান থেকে বাজেয়াপ্ত করা হয় লেনদেনের নথি, অনলাইন লটারি ও সাট্টা চালানোর জন্য তৈরি করা অ্যাপ ও ওয়েবসাইট।
তদন্তে নেমে অফিসাররা জানতে পারছেন, বছর তিনেক ধরে এই কারবার চলছে। অভিযুক্ত ডেভেলপারের সঙ্গে বেআইনি কারবার চালানো ব্যবসায়ীরা সোশ্যাল মিডিয়ার মাধ্যমেই যোগযোগ রাখত। পেমেন্ট হতো অনলাইনে। রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে তাঁর কাছে ‘অর্ডার’ আসত। ওয়েবসাইট বা অ্যাপ তৈরির পর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বও নিতেন এই ডেভেলপার। অফিস থেকে অনলাইনে সাট্টা ও লটারির কারবার চালানো একাধিক ব্যবসায়ীর নাম মিলেছে। তাঁদের জায়গায়ও তল্লাশি হবে। সেই সঙ্গে অভিযুক্ত ডেভেলপারের ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ‘ফ্রিজ’ করার জন্য উদ্যোগ নিচ্ছেন তদন্তকারীরা।