প্রসেনজিত্ মালাকার : বীরভূমের কঙ্কালীতলা গ্রাম পঞ্চায়েতের ধলটিকুড়ি গ্রামে প্রাক্তন তৃণমূল বুথ সভাপতি মদন লোহার রহস্যমৃত্যুকে ঘিরে পরিস্থিতি ক্রমশ আরও উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। গতকাল সন্ধ্যা থেকে নিখোঁজ থাকার পর আজ সকালে ধলটিকুড়ি এলাকার মাঠে তাঁর মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। খবর ছড়িয়ে পড়তেই গোটা এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়ায়।
স্থানীয়দের নজরে আসে, মৃতদেহের কান থেকে রক্ত বেরোচ্ছে। যদিও শরীরের অন্য অংশে তেমন কোনও স্পষ্ট আঘাতের চিহ্ন নেই। এই অবস্থায় পরিবার ও এলাকার মানুষের দৃঢ় অভিযোগ, এটি কোনওভাবেই স্বাভাবিক মৃত্যু হতে পারে না। তাঁদের দাবি, পরিকল্পিতভাবে খুন করা হয়েছে মদন লোহারকে এবং এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্র রয়েছে।
খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছে শান্তিনিকেতন থানার পুলিস। তবে পুলিস দেহ উদ্ধার করতে গেলে তাতে বাধা দেন এলাকার মানুষজন ও মৃতের পরিবার। বিক্ষোভকারীদের বক্তব্য, ঘটনার সঠিক ও নিরপেক্ষ তদন্তের আশ্বাস না পাওয়া পর্যন্ত এবং দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি মানা না হলে মৃতদেহ তোলা যাবে না। তাঁদের দাবি, অতীতেও বহু ঘটনায় তদন্ত ধামাচাপা পড়ে গেছে, তাই এবার তাঁরা কোনও আশ্বাসে সন্তুষ্ট নন।
এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়েছে এবং প্রচুর মানুষ ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। পুলিস প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে ময়নাতদন্ত সহ সমস্ত দিক খতিয়ে দেখা হবে। তবে এলাকাবাসীর বিক্ষোভের জেরে এখনও পর্যন্ত মৃতদেহ উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি।
উল্লেখ্য, গত ১১ জুলাই ভাঙড়ে আততায়ীদের গুলিতে খুন হন এক তৃণণূল নেতা। নাম রাজ্জাক খাঁ। রাতে দলের মিটিং সেরে বিজয়গঞ্জ পার্টি অফিস থেকে ফিরছিলেন। পথে বিজয়গঞ্জ বাজারের কাছে তাকে গুলি করে কুপিয়ে খুন করা হয়। পুলিসের অনুমান ছিল রাস্তার পাশে ভেরিতে লুকিয়ে ছিল তিনি যে ওই রাস্তা দিয়ে ফেরেন বা ফিরবেন সে খবর আগে থেকে ছিল দুষ্কৃতীদের কাছে। ওই ঘটনা পরিকল্পিত বলেই মনে করছে পুলিস।
মৃত রজ্জাক, বিধায়ক শওকত মোল্লার ঘনিষ্ঠ। অন্যদিন তিনি সাধারণত ৭-৭.৩০টা নাগাদ বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু এদিন রাত হয়ে গিয়েছিল। সেই খবরও হামলাকারীদের কাছে আগে থেকেই ছিল বলে মনে করছে পুলিস। বাইকে তাঁর সঙ্গে পাড়ার দুই যুবক ছিল। সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল থেকে চারটে গুলির খোল উদ্বার হয়েছে। তৃণমূল নেতার বুকে গুলি করা হয়। সেই সঙ্গে মুখ, চোখ সহ একাধিক জায়গায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে কোপানো হয়। ইতোমধ্যেই রেজ্জাক খাঁয়ের বুলেটটিও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। ওই ঘটনায় দুজনকে আটক করা হয়।