বরুণ সেনগুপ্ত: দল ছাড়ছেন প্রাক্তন মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের একসময়ের ছায়াসঙ্গী মৃন্ময় কাশ্যপী। পাশাপাশি ঘাসফুল শিবির ছেড়ে গেরুয়া শিবিরে যোগ দিতে চলেছেন তৃণমূলের উত্তর ব্যারাকপুর পুরসভার কাউন্সিলর শ্রবনী কাশ্যপী। এমনটাই খবর বিজেপি সূত্রে। জানা যাচ্ছে এরা মঙ্গলবার বিজেপির জেলা কার্যালয়ে গোরুয়া শিবিরে যোগ দেবেন।
কেন দলত্যাগ? ক্ষুব্ধ কাউন্সিলর শ্রাবনী কাশ্যপী জানান, দলে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ছেন। জন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করতে বাধা দেওয়া হচ্ছে। এলাকার উন্নয়নের দায়িত্ব পুর কাউন্সিলরের অথচ সেখানে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। দলের উপর মহলে জানিয়েও কোনও কাজ হয়নি। তাই দল ছাড়তে হচ্ছে। এবার অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করতে চলেছেন।
শ্রাবনী কাশ্যপী বলেন, ২০২২ সাল থেকে কাউন্সিলর। এখন আর দলে সেই সম্মান পাচ্ছি না। চেয়ারম্যানের কাছ থেকেও সেরকম সহযোগিতা পাইনি। আমার নিজের মনে হয়েছে মানুষকে সেরকম পরিষেবাও দিতে পারছি না। কাজে বাধাপ্রাপ্তও হচ্ছি। সততার সঙ্গে দল করতে এসেছিলাম। কিন্তু সেই সম্মানটুকুও নেই। সেই দল থেকে আর লাভ কী। তাই অর্জুন সিং ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর হাত ধরেই বিজেপিতে যোগদান করব। জঞ্জাল ফেলা নিয়ে প্রবল সমস্যা। ৩ কোটি টাকা দিয়ে জঞ্জাল ফেলার জন্য জমি কেনা হয়েছিল। সেখানে তা ফেলা হচ্ছে না। তা যদি না হয় তাহলে ওই জমি বিক্রি করে দিয়ে অন্য জায়গায় জমি কিনে সেখানে জঞ্জাল ফেলা হোক। তা না হলে মানুষ জঞ্জাল ফেলার টাকা দেবে কেন? এরকম আরও অনেক দুর্নীতি রয়েছে।
প্রায় একই কথা বললেন জ্য়োতিপ্রিয় মল্লিকের এক সময়ের ছায়াসঙ্গী মৃন্ময় কাশ্যপী। তিনি বলেন, যেভাবে দল দিন দিন দুর্নীতিতে জড়াচ্ছে তাতে দল করতে গেলে এখন এলাকার মানুষ চোর বলছেন। সেই জ্বালার হাত থেকে রক্ষা পেতে অর্জুন সিংয়ের হাত ধরে বিজেপিতে যোগদান করব।
মৃন্ময় কাশ্যপী বলেন, এই দুর্নীতি আর অসম্মান নিয়ে দল করা যায় না। কী দুর্নীতি নেই এই দলটার? পুকুর ভরাট, চাকরি বিক্রি, বালি মাফিয়াগিরি, এখন তো গুন্ডাদের হাতে দল। সমাজ বিরোধীরা এলাকা নিয়ন্ত্রণ করছে। সাধারণ মানুষ আর এই দলটাকে চাইছে না। একসম জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকের ঘনিষ্ঠ ছিলাম। কিন্তু ২০২১ সালের ভোটের পর থেকে আর তার ঘনিষ্ঠ সার্কলে নেই আমি। বুঝতে পেরেছিলাম, দল দুর্নীতিতে ডুবে গিয়েছে। তাই সরেও এসেছিলাম। ওঁর সঙ্গে ছিলাম বলে ইডির রেইড হয়েছিল বাড়িতে। কোনও কোরাপশনে জড়িত থাকলে আমিও জেলে থাকতাম। আমি নওপাড়া টাউন ওয়ানের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলাম। দলের কর্মীকে পয়সা দিয়ে চাকরি নিতে হচ্ছে, পরিস্থিতি এরকম জায়গায় পৌঁছেছে। তাই ঠিক করে ফেলেছি বিজেপিতে যোগ দেব।
তৃণমূল থেকে কেউ দলে আসছেন এমন খবর নিয়ে অর্জুন সিং বলেন, সব দল থেকেই কিছু কাউন্সিলর, কিছু কাউন্সিলর বিজেপিতে যোগ দেওয়ার জন্য আগ্রহ দেখিয়েছে। যারা জয়েন করবেন তাদের আপনারা দেখবেন। জয়েন করার পরে তথ্যগুলো আপানাদের বলব। কিন্তু একটা জিনিস দেখতে পাচ্ছি, তৃণমূলে ভাঙন ব্যাপকভাবে শুরু হয়েছে। কিছু লোক আজ দলত্যাগ করবে, কেউ পরশু করবে। আমাদের দল স্পষ্টভাবে জানিয়েছে আমাদের দলের ইডিওলজিকে বিশ্বাস করে যে কেউ আসতে পারে। শুধু সেই লোকগুলো আসতে পারবেন না যারা সরাসরি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত। সিপিএম, কংগ্রেস, তৃণমূল-সব দল থেকেই লোক আসছেন।