• 'চলে যান... আমি এই কেস এখন শুনব না...' কোর্টে রুদ্রমূর্তি বিচারক অমৃতা সিনহার... কেন?
    ২৪ ঘন্টা | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • জি ২৪ ঘণ্টা ডিজিটাল ব্যুরো: নিয়োগ দুর্নীতিতে কেন্দ্রীয় সংস্থাকে দিয়ে তদন্ত, প্রায় ছাব্বিশ হাজারের চাকরি বাতিল, একুশের ভোট পরবর্তী হিংসা মামলায় সিবিআই তদন্তের মতো একাধিক উল্লেখযোগ্য রায় দিয়েছে কলকাতা হাইকোর্ট (Calcutta High Court)। বিভিন্ন বিচারপতিরা যেমন কড়া হাতে নির্দেশ দিয়েছেন, তেমনই বহু সময় তাঁদের মানবিক রায়ও চোখে পড়েছে। এই হাইকোর্ট বহু কিছুর সাক্ষী। এই কোর্টের ভিতরেই অনেক কিছু ঘটে যায়, যা আগে সচরাচর আগে সামনে আসত না। তবে এখন, যেহেতু মামলার লাইভ করা হয় বিচারপতিদের বক্তব্য থেকে আইনজীবীদের সওয়াল সবই সামনে আসে। সাধারণ মানুষ সবটা দেখতে পান। ঠিক যেমন সদ্যই একটি মামলার শুনানি চলার মধ্যেই বিচারপতির ধমক খেতে দেখা গিয়েছে এক আইনজীবীকে। আর কোর্ট রুমের সেই ক্লিপই এখন ভাইরাল নেট মাধ্যমে।

    একটি মামলার শুনানি চলছিল হাইকোর্টে। বিচারপতি ছিলেন অমৃতা সিনহা। কোর্টরুম তখন নিঃস্তব্ধ। বিচারপতি বিভিন্ন নথি খতিয়ে দেখতে ব্যস্ত। অপরদিকে, আইনজীবীও নিজের সঙ্গে থাকা বিভিন্ন নথি ওলট-পালট করে দেখে প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন সওয়াল-জবাবের। সেই সময় হঠাৎ বিরক্তি প্রকাশ বিচারপতির।

    কিন্তু কী এমন হল?

    কোর্ট রুমের যে ভিডিয়োটি ভাইরাল হয়েছে, সেখানে দেখা যাচ্ছে, আইনজীবী থুতু দিয়ে নথিপত্র উল্টোচ্ছিলেন। তা দেখতে পান বিচারপতি সিনহা। তিনি এক মিনিট লক্ষ করেই সঙ্গে-সঙ্গে বলেন, 'দয়া করে থুতু দিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাবেন না। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এটা করবেন না প্লিজ।' পরক্ষণে ওই আইনজীবী বলেন, 'আমি দুঃখিত (I AM SORRY)' তারপরই বিচারপতি সিনহার প্রশ্ন, 'আপনার ব্যান্ড কোথায়? এটা কি পার্সোনাল ম্যাটার আপনার?' এখানে উল্লেখ্য, কোর্ট রুমে সওয়াল-জবাবের সময় আইনজীবীরা কোটের পাশাপাশি একটি ব্যান্ড পরে থাকেন।

    উত্তরে আইনজীবী বলেন, 'আমি ভুলে গিয়েছি।' আবার বিচারপতি সিনহা বলেন, 'চলে যান। আর আগে হাত ধুয়ে আসুন। আমি নয়ত এই কেস এখন শুনব না। আগে হাত ধুয়ে আসুন।'

    আদালতের অভ্যন্তরে ঘটে যাওয়া অনেক ঘটনা যা আগে সাধারণের সামনে আসত না, বর্তমানে মামলার লাইভ স্ট্রিমিংয়ের কারণে তা সহজেই জনগণের কাছে পৌঁছাচ্ছে। বিচারপতিদের বক্তব্য থেকে আইনজীবীদের সওয়াল পর্যন্ত সবকিছুই এখন প্রকাশ্যে আসে। ঠিক তেমনই, সম্প্রতি একটি লাইভ শুনানির ক্লিপ সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়েছে, যেখানে বিচারিক শৃঙ্খলা (judicial discipline) ও স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে এক বিচারপতিকে কড়া হাতে ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়।

    কোর্ট রুমে ঠিক কী ঘটেছিল?

    ঘটনাটি ঘটেছিল বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে একটি মামলার শুনানির সময়। আদালত কক্ষ তখন ছিল একেবারে নিঃস্তব্ধ। বিচারপতি মন দিয়ে মামলার নথি খতিয়ে দেখছিলেন, এবং একজন আইনজীবীও তাঁর সওয়াল-জবাবের প্রস্তুতি হিসেবে নিজের কাগজপত্র উল্টে দেখছিলেন।

    ঠিক তখনই বিচারক একটি অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস লক্ষ্য করেন। ভাইরাল হওয়া ভিডিওতে স্পষ্ট দেখা যায়, ওই আইনজীবী তাঁর নথির পাতা উল্টানোর জন্য লালা দিয়ে নিজের আঙুল ভিজিয়ে নিচ্ছিলেন (থুতু ব্যবহার করছিলেন)।

    বিচারপতি অমৃতা সিনহা বিষয়টি লক্ষ্য করার সঙ্গে সঙ্গেই বিরক্তি প্রকাশ করেন এবং দৃঢ়ভাবে নির্দেশ দেন:

    'দয়া করে লালা দিয়ে পৃষ্ঠা ওল্টাবেন না। এটা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এটা করবেন না প্লিজ।'

    আইনজীবী তৎক্ষণাৎ নিজের ভুল স্বীকার করে বলেন, 'আমি দুঃখিত (I AM SORRY)।'

    'হাত ধুয়ে আসুন' - বিচারকের চূড়ান্ত নির্দেশ

    এরপর বিচারপতি আইনজীবীর পেশাদারিত্ব নিয়ে আরও একটি ত্রুটি ধরেন। তিনি লক্ষ্য করেন যে ওই আইনজীবী তাঁর কোটের সাথে বাধ্যতামূলক সাদা 'ব্যান্ড' পরেননি।

    বিচারপতি সিনহা প্রশ্ন করেন, 'আপনার ব্যান্ড কোথায়? এটা কি পার্সোনাল ম্যাটার আপনার?'

    আইনজীবী জানান যে তিনি ব্যান্ড পরতে ভুলে গিয়েছেন। এরপরেই বিচারপতি আরও কঠোর হন এবং চূড়ান্ত নির্দেশ জারি করেন:

    'চলে যান। আর আগে হাত ধুয়ে আসুন। আমি নয়ত এই কেস এখন শুনব না। আগে হাত ধুয়ে আসুন।'

    লাইভ স্ট্রিমিংয়ের এই মুহূর্তটি দ্রুত সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়ে পড়ে। বিচারপতি অমৃতা সিনহার এই পদক্ষেপ আদালত কক্ষের স্বাস্থ্যবিধি, শালীনতা এবং পেশাদারিত্ব বজায় রাখার বিষয়ে একটি স্পষ্ট ও আপোষহীন বার্তা দিয়েছে। এই ঘটনা আরও একবার প্রমাণ করল যে কলকাতা হাইকোর্ট কেবল ন্যায়বিচার প্রদানেই নয়, বরং বিচারিক শৃঙ্খলা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রেও কঠোর মান বজায় রাখে।

     

  • Link to this news (২৪ ঘন্টা)