• বাজারে খাটছে পিএফের টাকা, লাভের অঙ্কে থাবা কেন্দ্রের
    বর্তমান | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বাপ্পাদিত্য রায়চৌধুরী, কলকাতা: বেসরকারি সংস্থার কর্মীদের বেতন থেকে একটি নির্দিষ্ট অংশ কেটে সেই টাকা জমা হয় পিএফ অ্যাকাউন্টে। সেই পরিমাণ অর্থ অ্যাকাউন্টে দেয় সংস্থাও। অর্থাৎ, পুরো টাকাটাই কর্মীদের। সাধারণ মানুষের। সরকারের কাছে তাঁরা শুধুমাত্র সেই টাকা গচ্ছিত রাখেন, খানিক নিশ্চিন্ত অবসরের জন্য। কোটি কোটি গ্রাহকের থেকে আদায় করা সেই থোক টাকা বাজারে লগ্নি করে এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট ফান্ড অর্গানাইজেশন বা ইপিএফও। লগ্নি থেকে যে মুনাফা আসে, তার বৃহত্তম অংশই সুদ হিসেবে বণ্টন করা হয় সাধারণ গ্রাহকের পিএফ অ্যাকাউন্টে। এটাই নিয়ম। কিন্তু এতেও এবার ছেদ পড়তে চলেছে! পিএফ কর্তৃপক্ষ ওই লগ্নি থেকে আসা মুনাফার একটা বড় অংশ সাধারণ গ্রাহককে আর দেবে না। তা সরিয়ে ফেলা হবে একটি আলাদা ফান্ড বা তহবিলে। সোজা কথায়, সাধারণ মানুষের কষ্টার্জিত হকের টাকা আলাদা কোনও ‘অঙ্কে’ সরিয়ে ফেলবে মোদি সরকার। এই বিষয়ে ইতিমধ্যেই প্রস্তাব পেশ হয়ে গিয়েছে পিএফ সংক্রান্ত কেন্দ্রীয় অছি পরিষদে। তা চূড়ান্ত হওয়া এখন স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। সবচেয়ে বড় প্রশ্ন হল, কী উদ্দেশ্য এই তহবিলের? করোনাকালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি পিএম কেয়ার্স ফান্ড গড়ে সাধারণ মানুষের থেকে কোটি কোটি টাকা আদায় করেছিলেন। সেই টাকার অঙ্ক কত লক্ষ কোটি? তা দিয়ে কী হয়েছে? তহবিলের আয়-ব্যয়ের হিসেবই বা কী? এইসব প্রশ্নের উত্তর আম জনতা জানতে পারেনি। কারণ, তা সম্পূর্ণ অডিট সিস্টেমের বাইরে। পিএফের টাকা ‘সরিয়ে রেখে’ সেই একই পথে কেন্দ্র হাঁটবে না তো? এই প্রশ্ন রাজনৈতিক মহলে উঠতে শুরু করেছে।

    প্রতি বছরই সাধারণ গ্রাহকের থেকে আদায় করা টাকা দিয়ে পিএফ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন ঋণপত্র বা লগ্নিপত্র কেনে। আবার পুরোনো ঋণপত্র বা লগ্নিপত্রগুলি বিক্রিও করে। লগ্নি থেকে সুদ বা লভ্যাংশ বাবদ যে আয় হয় এবং পুরনো লগ্নিপত্র বেচে যে মূলধনী আমদানি হয়, তা থেকেই গ্রাহকদের পিএফ অ্যাকাউন্টে প্রতি বছর সুদ মেটায় তারা। এখন ঠিক কী করতে চাইছে ইপিএফও? তারা জানাচ্ছে, একটি ‘ইন্টারেস্ট স্টেবিলাইজেশন রিজার্ভ’ বা তহবিল গড়া হবে। সেখানে সুদ এবং লগ্নিপত্র বিক্রির লাভের টাকা একটি নির্দিষ্ট সীমা পেরিয়ে গেলে, তা আর সুদ হিসেবে গ্রাহকদের দেবে না কেন্দ্র। তা সরিয়ে রাখা হবে ওই রিজার্ভ বা তহবিলে। যুক্তি কী? আগামী দিনে সুষ্ঠু হারে সুদ দেওয়া। প্রস্তাবে বলা হয়েছে, সেই তহবিল কোনও একটি নির্দিষ্ট আর্থিক বছরের পিএফে জমা থাকা ‘করপাস’ বা মোট টাকার ১০ শতাংশ অতিক্রম করবে না। ২০২৩-২৪ অর্থবর্ষ অনুযায়ী, মোট করপাসের পরিমাণ প্রায় ২৪ লক্ষ ৭৫ হাজার কোটি টাকা। নিশ্চিতভাবে বর্তমানে অঙ্কটা আরও বেড়েছে। সেই হিসেবে সর্বোচ্চ প্রায় আড়াই লক্ষ কোটি টাকা ওই তহবিলে সরিয়ে রাখার কথা। প্রশ্ন উঠছে, এত বিপুল টাকা কেন সরিয়ে রাখা হবে? তা তো গ্রাহকেরই প্রাপ্য! তাহলে কি পিএফের সুদেও কোপ পড়বে? এই আশঙ্কা থাকছে। উপরন্তু নয়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে, গ্রাহকের সুদের হারে বিরাট ওঠানামা করানো যাবে না। বিগত পরপর তিনটি আর্থিক বছরে যে সুদ দেওয়া হয়েছে, সেই হারের সর্বাধিক এক শতাংশ কম বা বেশি সুদ দেওয়া যাবে। অর্থাৎ, তিন বছরে যদি গড় সুদের হার ৭ শতাংশ হয়, তাহলে ৮ শতাংশের বেশি সুদ সংশ্লিষ্ট বছরে দেওয়া যাবে না।
    সুদের ন্যূনতম হার বজায় রাখতে আরও একটি শর্ত দেওয়া হয়েছে প্রস্তাবে। বলা হয়েছে, বিগত তিনটি আর্থিক বছরে যে গড় মূল্যবৃদ্ধির সূচক রয়েছে (কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্স) তার অন্তত ৫০ বেসিস পয়েন্ট বা আধ শতাংশ সুদ বেশি দিতে হবে। বাস্তবে শেষ তিনটি আর্থিক বছরে সেই মূল্যবৃদ্ধির গড় হার চার থেকে পাঁচ শতাংশের মধ্যে ঘোরাফেরা করেছে। অর্থাৎ ‌এক্ষেত্রেও গ্রাহকের ভাগ্যে তেমন প্রাপ্তিযোগ নেই।
  • Link to this news (বর্তমান)