• পূর্ণকালীন নয়, নিতিন নবীনকে কেন ‘কার্যনির্বাহী’ সভাপতি করল BJP? শুধু রাজনৈতিক কারণে নয়
    এই সময় | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • লোকসভা নির্বাচনের পর থেকেই জল্পনা ছিল তুঙ্গে। অবশেষে সোমবার সব জল্পনার অবসান ঘটিয়ে বিজেপির সর্বভারতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি (Working President) হিসেবে দায়িত্ব নিলেন বিহারের দাপুটে নেতা তথা মন্ত্রী নিতিন নবীন। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে, নিতিনকে সরাসরি পূর্ণ মেয়াদের সভাপতি হিসবে নিয়োগ না করে কেন ‘কার্যনির্বাহী’ সভাপতি করা হলো? যা অন্তর্বর্তিকালীন ব্যবস্থা বলেই মনে করা হচ্ছে। রাজনৈতিক মহলে কান পাতলে উঠে আসছে একাধিক সমীকরণ। যার মধ্যে রয়েছে জ্যোতিষশাস্ত্রের বিশ্বাস থেকে শুরু করে বিজেপির কঠোর সাংগঠনিক নিয়ম।

    BJP-র গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, দলের সর্বভারতীয় সভাপতিকে মনোনীত করা হয় না। তিনি নির্বাচিত হন। বর্তমান সভাপতি জেপি নাড্ডার মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন মাসেই শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু লোকসভা নির্বাচনের কারণে তা বাড়ানো হয়।

    নাড্ডা বর্তমানে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভার সদস্যও বটে। BJP-তে আবার ‘এক ব্যক্তি, এক পদ’ নীতি মানা হয়। কাজেই, একই সঙ্গে মন্ত্রী এবং দলীয় সভাপতি পদে থাকতে পারেন না তিনি। তাই তাঁর পরিবর্তে এখনই নিতিন নবীনকে পূর্ণকালীন সভাপতি নির্বাচিত করা যেত।

    তা না করার পিছনে রয়েছে মূলত দু’টি কারণ:

    BJP-র সংবিধান অনুযায়ী, সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচনের আগে দেশের অন্তত ৫০ শতাংশ রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দলের সাংগঠনিক নির্বাচন সম্পন্ন হতে হয়। ৩৭টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মধ্যে ইতিমধ্যে ৩০টিতে এই প্রক্রিয়া শেষ করেছে। ১৪ জানুয়ারির পরে আনুষ্ঠানিক ভাবে সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতে পারে।

    এই নির্বাচন এখনই হতে পারত। তবে হিন্দু ধর্মে ‘খরমাস’ বা ‘মলমাস’-কে শুভ কাজের জন্য অনুপযুক্ত বলে মনে করা হয়। মঙ্গলবার থেকেই শুরু হচ্ছে এই মলমাস, চলবে আগামী ১৪ জানুয়ারি, মকর সংক্রান্তি পর্যন্ত। নতুন পূর্ণকালীন সভাপতি নির্বাচন এবং তাঁর নাম ঘোষণার মতো শুভ কাজটি এই সময়ে করতে চায় না BJP। তাই নিতিন নবীনকে আপাতত ‘কার্যনির্বাহী’ সভাপতি হিসেবেই নিযুক্ত করা হয়েছে।

    মজার বিষয় হলো, বিজেপির ইতিহাসে নীতিন নবীন হলেন দ্বিতীয় ‘কার্যনির্বাহী সভাপতি’। ২০১৯ সালে অমিত শাহ কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হওয়ার পরে, বর্তমান BJP সভাপতি জেপি নাড্ডাকেও একই ভাবে প্রথমে কার্যনির্বাহী সভাপতি করা হয়েছিল।

    প্রায় ৬ মাস অমিত শাহের কাছ থেকে সভাপতির কাজ বুঝে নেওয়ার পরে, ২০২০ সালের জানুয়ারিতে তাঁকে সর্বসম্মতিক্রমে পূর্ণকালীন সভাপতি নির্বাচিত করা হয়। নিতিন নবীনের ক্ষেত্রেও একই পথে হাঁটছে BJP বলে মনে করা হচ্ছে।

    ১৪ জানুয়ারি মলমাস কাটার পরে, সম্ভবত তাঁকেই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনের মাধ্যমে পূর্ণকালীন সভাপতি করা হবে।

    সূত্রের খবর, মকর সংক্রান্তির পরপরই BJP-র সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন প্রক্রিয়া শুরু হবে। প্রায় চার দিন ধরে চলতে পারে নির্বাচন। যেহেতু BJP এবং RSS নেতৃত্বের নির্বাচনে ঐকমত্য বা সর্বসম্মতিতে বিশ্বাসী, তাই ধরে নেওয়া হচ্ছে নিতিন নবীনই হতে চলেছেন জেপি নাড্ডার উত্তরসূরি। আপাতত আগামী কয়েক মাস নাড্ডার ছায়াসঙ্গী হয়ে দলের অন্দরমহলের খুঁটিনাটি রপ্ত করবেন তিনি।

    BJP-র এই কৌশলগত পদক্ষেপে বোঝা যাচ্ছে, লোকসভা নির্বাচনের পরে কোনও রকম তাড়াহুড়ো বা পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে যেতে নারাজ গেরুয়া শিবির। এখন দেখার, ১৪ জানুয়ারির পরে BJP-র শীর্ষ নেতৃত্বের আনুষ্ঠানিক রদবদল কী ভাবে সম্পন্ন হয়।

  • Link to this news (এই সময়)