• ‘এই বাংলাদেশের জন্য তো যুদ্ধ করিনি’, বর্তমান পরিস্থিতি দেখে স্বীকারোক্তি মুক্তিযোদ্ধার
    আজ তক | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • কলকাতায় বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্মরণ অনুষ্ঠানে গভীর হতাশা ও ক্ষোভের সুর। সোমবার লোকভবনে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের একাধিক মুক্তিযোদ্ধা এবং সেনা আধিকারিকরা। রাজ্যপাল ড. সি ভি আনন্দ বোস তাঁদের সংবর্ধনা দেন। ভারতের প্রতি কৃতজ্ঞতার কথা শোনা গেলেও, বাংলাদেশের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে একাধিক মুক্তিযোদ্ধার বক্তব্যে যন্ত্রণার ছাপ স্পষ্ট।

    ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত মেজর কামরুল আবেদিন। এদিন তিনি প্রকাশ্যে নিজের গভীর হতাশার কথা তুলে ধরেন। সেই সময় কুমিল্লা অঞ্চলে ভারতীয় সেনার সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছিলেন এই মুক্তিযোদ্ধা। এদিন আক্ষেপের সুরে বলেন, বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি তাঁদের সেদিনের লড়াইয়ের আদর্শের সঙ্গে কোনওভাবেই যেন খাপ খায় না। ইন্ডিয়া টুডে কে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, 'সত্যি বলতে, এখন পরিস্থিতি মোটেও ভাল নয়। আমি খুবই অসন্তুষ্ট।'

    এর পরেই তাঁর কণ্ঠে ধরা পড়ে মুক্তিযোদ্ধাদের দীর্ঘদিনের জমে থাকা বেদনা। মেজর আবেদিনের কথায়, 'অনেক সময় মনে হয়, এই পরিস্থিতির জন্য তো আমরা যুদ্ধ করিনি। তবুও আশা রাখি, একদিন না একদিন পরিস্থিতি বদলাবে।' তাঁর এই মন্তব্যে যে বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক ও সামাজিক অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন জাগতে বাধ্য, তা বলাই বাহুল্য। 

    অপর এক মুক্তিযোদ্ধা আবদুল্লাহিল সাফি অবশ্য সরাসরি সমসাময়িক রাজনীতি নিয়ে মন্তব্য করতে চাননি। তিনি বলেন, 'আমরা দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। ভারতের মাটিতেই প্রশিক্ষণ নিয়েছিলাম।' বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন উঠলে তিনি একে ‘রাজনৈতিক বিষয়’ বলে এড়িয়ে যান।

    তবে ভিন্ন সুর শোনা গেল বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর ব্রিগেডিয়ার জেনারেল লুৎফুর রহমানের বক্তব্যে। তিনি মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট এবং ভারত-বাংলাদেশ বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরেন। তাঁর বক্তব্যে উঠে আসে ১৯৭১ সালের ভয়াবহ দমন-পীড়নের স্মৃতি। তিনি বলেন, 'সেই সময় দখলদার বাহিনীর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষ, ছাত্রসমাজ একসঙ্গে লড়াই করেছিল। শেষ পর্যন্ত ভারত ও বাংলাদেশের যৌথ সামরিক অভিযানের মাধ্যমেই বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।'

    কলকাতার মাটিতে মুক্তিযুদ্ধের এই স্মরণ অনুষ্ঠান শুধু অতীতের গৌরবগাথা নয়, বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতি নিয়েও এক গভীর আত্মসমালোচনার মঞ্চ হয়ে উঠল। মুক্তিযোদ্ধাদের মুখে উঠে আসা এই যন্ত্রণাতেই নতুন করে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়েছে, কিন্তু সেই স্বপ্নের বাংলাদেশ আজ কোথায় দাঁড়িয়ে? সেই প্রশ্নের উত্তর ভাবার সময় এসেছে, বলছেন বিশ্লেষকরা।
  • Link to this news (আজ তক)