• ইউজিসি জমানাও শেষ! উচ্চশিক্ষা সরাসরি কেন্দ্রের নিয়ন্ত্রণে
    বর্তমান | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সমৃদ্ধ দত্ত, নয়াদিল্লি: ২০১৪ সালে নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতাসীন হওয়ার পর প্রথম কোপ পড়েছিল পরিকল্পনা কমিশনের উপর। স্বাধীনতার পর তৈরি হলেও সেটি ছিল আদতে ১৯৩৮ সালের কংগ্রেস সভাপতি সুভাষচন্দ্র বসুর মস্তিষ্কপ্রসূত এক আর্থিক নীতিরই বাস্তব রূপ। মোদি সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর তা বাতিল করে তৈরি হয় নয়া কাঠামো, যার নাম নীতি আয়োগ। এবার ১১ বছর পর নতুন সিদ্ধান্ত! যাবতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থবরাদ্দ অথবা নীতি নির্ধারণকারী স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন বা ইউজিসি থাকবে না। সেটিও বাতিল হচ্ছে। এই কমিশনের ভাবনা ও প্রয়োগ কাদের হাত ধরে? তাঁরা হলেন মৌলানা আবুল কালাম আজাদ এবং ডঃ সর্বপল্লি রাধাকৃষ্ণণ। এখানে শেষ নয়, ২০২৬ সালে আসতে চলেছে নতুন এক বিল, ইন্ডিয়ান স্ট্যাটিস্টিক্যাল ইনস্টিটিউট সংশোধনী বিল। কলকাতার ঐতিহ্যশালী প্রতিষ্ঠানের স্বশাসিত রূপ বদলে যাবে ওই নয়া আইনে। পাশাপাশি বাতিল হয়ে যাচ্ছে প্রযুক্তি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রক সংস্থা অল ইন্ডিয়া কাউন্সিল ফর টেকনিক্যাল এডুকেশন। শিক্ষক প্রশিক্ষণ সংক্রান্ত বিধির সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ন্যাশনাল কাউন্সিল অব টিচার এডুকেশনও বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।

    ২০১৪ সালের পর থেকে ভারতের শিক্ষা, প্রশাসন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সরকারি প্রকল্প একে একে হয় বাতিল করে নতুনভাবে নির্মাণ করা হয়েছে অথবা নাম বদল করে কাঠামো পরিবর্তন হয়েছে। সেই বদল তালিকায় সোমবার যেমন যুক্ত হল মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি স্কিম, তেমনই আবার উচ্চশিক্ষা নীতিরও কাঠামো বদলের জন্য নতুন আইন আনার প্রথম পদক্ষেপ গ্রহণ করল মোদি সরকার। চলতি সংসদ অধিবেশনে লোকসভায় পেশ করা হল, বিকশিত ভারত শিক্ষা অধিষ্ঠান বিল ২০২৫। বিলের লক্ষ্য—কেন্দ্রীয় বিশ্বদ্যিালয়, কলেজ, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির বর্তমানে নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলিকে বাতিল করে দেওয়া। নতুন একটি কমিশন গঠন করা হবে। আর থাকবে তিনটি পৃথক কাউন্সিল। এটি কিন্তু ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ নয়। বরং আগামী দিনে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিচালনা তথা নীতি নির্ধারণ সংক্রান্ত যাবতীয় ক্ষমতা কুক্ষিগত থাকবে শিক্ষামন্ত্রকের হাতে। অর্থাৎ কেন্দ্রই নিয়ন্ত্রণ করবে দেশের শিক্ষা ব্যবস্থা। আর তাই বাতিল হয়ে যাচ্ছে এতদিনের বহু প্রতিষ্ঠান, যার মধ্যে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ ইউজিসি। যদিও এদিন বিরোধীদের প্রবল আপত্তিতে বিলটিকে যৌথ সংসদীয় কমিটি বা জেপিসিতে পাঠানো হয়েছে।

    নতুন যে কমিশন গঠন করা হবে, সেটির মাথায় থাকবেন একজন চেয়ারপার্সন। তাঁকে নিয়োগ করবেন রাষ্ট্রপতি। অর্থাৎ ঘুরপথে নিয়োগ করবে মোদি সরকারই। আইআইটি, এনআইটি, আইআইএস, আইআইএসইআর, আইআইএম, আ‌ইআইআইটি ইত্যাদি প্রতিটি প্রতিষ্ঠান এই একটি কমিশনের অধীনে থাকবে। এতদিন পর্যন্ত আইআইটি কিংবা আইআইএম ইউজিসির নিয়ন্ত্রণাধীন ছিল না। এবার নতুন কমিশনের আওতায় সেগুলিও চলে আসছে। বিলটি পাশ হওয়ার পর সংশ্লিষ্ট আইন কার্যকর হবে সমস্ত কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, ওপেন, ডিসট্যান্স লার্নিং, অনলাইন ও ডিজিটাল এডুকেশন সর্বত্র। জাতীয় শিক্ষা নীতির ধাঁচেই তৈরি হয়েছে নয়া আইনটি। তিনটি কাউন্সিল তৈরি করা হবে। সেগুলির অন্যতম হল নিয়ন্ত্রক কাউন্সিল, যা হবে উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলির নিয়ন্ত্রক। অনুমোদনকারী সংস্থা হবে অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিল। আর স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিল স্থির করবে উচ্চশিক্ষার গুণমান, সিলেবাস। যদিও একটি নামও ইংরেজিতে থাকবে না। রেগুলেটরি কাউন্সিলের নাম হবে শিক্ষা বিনিয়মান পরিষদ। শিক্ষা গুণবত্তা পরিষদ নাম দেওয়া হবে অনুমোদনকারী সংস্থাকে। আর স্ট্যান্ডার্ড কাউন্সিলের নাম হবে শিক্ষা মানক পরিষদ। অর্থাৎ উচ্চশিক্ষার নিয়ন্ত্রক প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের নাম হবে হিন্দি ভাষায়। আইনের নাম হিন্দিতেই উচ্চারণ করতে হবে, লিখতেও হবে। সে তামিলনাড়ুই হোক অথবা বাংলা।
  • Link to this news (বর্তমান)