• মুছে গেল গান্ধীজির নামই, ১০০ দিনের কাজ এবার ‘জি-রাম-জি’
    বর্তমান | ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সন্দীপ স্বর্ণকার, নয়াদিল্লি: মহাত্মা গান্ধী নয়, পূজ্য বাপুও নয়, ১০০ দিনের কাজের নাম এবার ‘জি-রাম-জি’! সঙ্গে আবার ‘বিকশিত ভারত’ পরিচয়। দেশ-বিদেশে মহাত্মার মূর্তি পুজো করলেও সরকারি কর্মনিশ্চয়তা প্রকল্প, আইন থেকে গান্ধীর নামই মুছে দিচ্ছে মোদি সরকার। বাতিল করা হচ্ছে ‌ইউপিএ সরকারের আনা ‘মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি আইন (মনরেগা)’। পরিবর্ত হিসেবে আজ মঙ্গলবার সংসদে পেশ হবে ‘বিকশিত ভারত গ্যারান্টি ফর রোজগার অ্যান্ড আজীবিকা মিশন (গ্রামীণ) বিল’। সংক্ষেপে ‘ভিবি-জি রাম জি’। মহাত্মা গান্ধীর নাম মুছে এভাবে কৌশলে ‘রাম’ নাম জুড়ে দেওয়ায় ক্ষোভে ফেটে পড়েছে বিরোধীরা। তাই সোমবার অধিবেশন শুরুর পর বেলা ১২টা ৫০ মিনিটে লোকসভার ‘সাপ্লিমেন্টারি লিস্ট অব বিজনেসে’ বিলটি পেশ হবে বলে লিখিত ঘোষণা করেও পিছিয়ে আসতে হল মোদি সরকারকে।

    এই ইস্যুতে এদিন স্পিকার ওম বিড়লার ডাকা বিষয় উপদেষ্টা কমিটির বৈঠকেও ওঠে প্রতিবাদের ঝড়। ‘কেন বাদ দেওয়া হবে গান্ধীজির নাম?’ প্রশ্ন তোলেন তৃণমূলের কাকলি ঘোষদস্তিদার, কংগ্রেসের কে সি বেণুগোপাল, ডিএমকের দয়ানিধি মারান, এনসিপি (এসপি)র সুপ্রিয়া সুলে, শিবসেনা (উদ্ধবপন্থী) অরবিন্দ সাওয়ান্তরা। সংসদ চত্বরে প্রিয়াঙ্কা গান্ধী বলেন, ‘গান্ধীজির নামেও আপত্তি? তাছাড়া অহেতুক এই নাম পরিবর্তনে কত অপ্রয়োজনীয় অর্থ খরচ হয়, কোনও ধারণা সরকারের আছে?’ তৃণমূলের ডেরেক ও’ব্রায়েনের তোপ, ‘এটা গান্ধীজিকে অপমান! যদিও এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই। যারা গান্ধীজির হত্যাকারীকে পুজো করে, তারা তো মহাত্মার নাম মুছবেই।’

    ফলে বিলটি নিয়ে যে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রী শিবরাজ সিং চৌহান স্নায়ুচাপে ভুগছেন, তা কথা বলেই বোঝা গেল। নামবদল প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের উত্তরে ‘বর্তমান’কে তিনি বলেন, ‘দেখি মঙ্গলবার কী হয়! হনুমানজির নাম করে বিল তো পেশ করব। তারপর দেখা যাক।’ তালিকাবদ্ধ করেও কেন পেশ হল না বিলটি? সেকথা জানতে চাওয়ায় অস্বস্তি এড়াতে বললেন, ‘ছোড়িয়ে না! কাল দেখতে হ্যায়।’ প্রসঙ্গক্রমে বাংলার বকেয়া মেটানোর ইস্যুতে মন্ত্রী বলেন, ‘হো যায়েগা। বিল মে তো হ্যায়।’ নতুন বিলে বলা আছে, ভিবি-জি রাম জি আইনে পরিণত হলে মনরেগা স্বাভাবিকভাবে বাতিল হয়ে যাবে। তার আগেই মিটিয়ে দিতে হবে রাজ্যের বকেয়া। সেই মতো পশ্চিমবঙ্গের ৩ হাজার ৮২ কোটির পাশাপাশি গোটা দেশের ৯ হাজার ৪৩৯ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকাও মেটাতে হবে কেন্দ্রকে।

    গত শুক্রবার কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রকল্পটির বিকল্প দু’টি নাম নিয়ে আলোচনা হয়। একটি পূজ্য বাপু গ্রামীণ রোজগার যোজনা। অন্যটি এই ‘জি রাম জি’। তবে ‘পূজ্য বাপু’ নিয়ে সেদিনই প্রবল সমালোচনা শুরু হয়। তাই শনিবার রাতে বিলটি ছাপতে যাওয়ার সময় ‘জি রাম জি’ রাখা হয়। বিরোধীরা সমালোচনা করলে যাতে পালটা প্রশ্ন করা যায়, ‘শ্রীরামের নামেও বিরোধিতা করছেন?’ তবে বর্তমানে এটিই ছিল দেশের একমাত্র কোনও প্রকল্প, যেখানে রয়েছে মহাত্মা গান্ধীর নাম। সেটি বাদ দেওয়ার উদ্যোগে নিন্দার ঝড় বইছে। তবে সেসব অগ্রাহ্য করেই আনা হবে বিল। পাশ হবে কি না, তা অবশ্য নিশ্চিত নয়। কারণ, শীতকালীন অধিবেশনে হাতে আর সময় মাত্র তিনদিন।

    নতুন বিলে ১০০ দিনের পরিবর্তে পরিবার পিছু ১২৫ দিন কাজ হচ্ছে ঠিকই। তবে এবার প্রকল্পের খরচ বহন করতে হবে রাজ্যকেও। পশ্চিমবঙ্গ সহ সমতল রাজ্যের জন্য কেন্দ্র দেবে ৬০ শতাংশ। বাকিটা রাজ্য। ফি বছর প্রতিটি রাজ্যের জন্য বাজেট বরাদ্দ করবে কেন্দ্র। বাড়তি খরচ হলে তা বহন করতে হবে রাজ্যকেই। কৃষি মরশুমে ৬০ দিন এই আইনে কাজ হবে না। কাজ চেয়ে ১৫ দিনের মধ্যে না পেলে (আনএমপ্লয়মেন্ট অ্যালাউন্স) টাকা মেটাতে হবে রাজ্যকে। ফলে রাজ্যের উপর বাড়বে বোঝা। তাই স্রেফ নামই নয়, নতুন বিলের বহু অংশে আপত্তি বিরোধীদের। এমনকি মোদি সরকারের প্রধান শরিক টিডিপি পর্যন্ত বিলটিকে সমর্থন জানিয়েও বলছে, ‘রাজ্যের ঘাড়ে বাড়তি বোঝা চাপানোর বিষয়টি যথেষ্ট উদ্বেগজনক।’
  • Link to this news (বর্তমান)