৬০ বছর আগে হিমালয়ে হারানো পরমাণুচালিত যন্ত্রে শঙ্কা, গঙ্গাতেও ছড়াতে পারে তেজস্ক্রিয়তা
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নয়াদিল্লি: ৬০ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া একটি পরমাণুচালিত যন্ত্র। আর তা ঘিরেই আশঙ্কা। ঠাণ্ডা-যুদ্ধ যুগে হিমালয়ের নন্দাদেবী শৃঙ্গের কাছাকাছি হারিয়ে গিয়েছিল ওই যন্ত্র। তা এখনও বরফের নীচে চাপা পড়ে রয়েছে বলে অনুমান। আর কোনওভাবে যদি সেটি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে শুরু করে, তা ছড়িয়ে পড়বে গঙ্গাতেও। কারণ, নন্দাদেবীর হিমবাহগুলি গঙ্গার জলের অন্যতম উৎস।
আমেরিকা ও তদানীন্তন সোভিয়েত ইউনিয়নের মধ্যে ঠান্ডা যুদ্ধের আবহে ১৯৬৫ সালে পারমাণবিক কর্মসূচি শুরু করেছিল চীন। এব্যাপারে নজর রাখতে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ-র সঙ্গে হাত মিলিয়ে যৌথ উদ্যোগ নিয়েছিল ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরো (আইবি)। সেজন্য নন্দাদেবীতে পরমাণুচালিত শ্রবণ যন্ত্র বসানো হয়। এই বিশেষ যন্ত্রটি রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটরের (আরটিজি) সাহায্যে চলত। যেখানে জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হত প্লুটোনিয়াম। যন্ত্রটিতে সীমান্তের ওপারে চীনের পরমাণু পরীক্ষায় নজরদারির জন্য বিশেষ সেন্সর লাগানো ছিল। ভয়াবহ তুষারঝড়ের কারণে শৃঙ্গের কাছাকাছি যন্ত্রটি রেখে ফিরে আসেন পর্বতারোহীরা। পরের বছর, সেই এলাকায় গিয়ে আরটিজি ও তার প্লুটোনিয়াম কোর খুঁজে পাওয়া যায়নি। মনে করা হয়েছিল, ধস বা তুষারপাতের কারণে সেটি হিমবাহের বরফের নীচে চাপা পড়েছে।
আরটিজি বা রেডিওআইসোটোপ থার্মোইলেকট্রিক জেনারেটর এমন একটি যন্ত্র, যা তেজস্ক্রিয় (রেডিওঅ্যাকটিভ) পদার্থের স্বাভাবিকভাবে তৈরি হওয়া তাপ থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে পারে। যেখানে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন সম্ভব না, সেখানে আরটিজির উপর নির্ভর করতে হয় বিজ্ঞানীদের। বিস্ফোরণের কোনও আশঙ্কা না থাকলেও এটি থেকে তেজস্ক্রিয়তা ছড়াতে পারে।
গত কয়েক দশকে একাধিকবার যৌথ অভিযান চালিয়েও আরটিজিটিকে উদ্ধার করতে পারেনি ভারত ও আমেরিকা। দু’দেশের সরকারের কারও পক্ষেই বলা সম্ভব হয়নি, ঠিক কোন জায়গায় যন্ত্রটি রয়েছে। ১৯৭৮ সালের পারমাণবিক শক্তি কমিশন জানিয়েছিল, ওই এলাকার নদীগুলিতে পারমাণবিক দূষণ নেই। তবে তাদের সার্ভেতেও যন্ত্রটি কোথায় আছে, তার হদিশ মেলেনি।
নন্দাদেবীর হিমবাহের জলেই পুষ্ট ঋষি গঙ্গা ও ধৌলি গঙ্গা নদী। অলকানন্দা ও ভাগিরথীর সঙ্গে মিশেছে এই দুই নদী। যদি ওই ডিভাইসটি থেকে কোনও পারমাণবিক দূষণ ছড়ায় তবে তা ভারতের একটা বড় অংশে প্রভাব পড়বে। গত কয়েকবছরে হিমালয়ের বিভিন্ন অংশে একের পর এক বিপর্যয়ের পিছনে এই ডিভাইসটির হাত থাকতে পারে বলে মনে করেন কেউ কেউ। ২০২১ সালের চামোলি বিপর্যয়ের নেপথ্যেও ডিভাইসটি রয়েছে বলে মনে করছেন অনেকে। যদিও এখনও পর্যন্ত কোনও তেজস্ক্রিয়তা শনাক্ত করা যায়নি। ছবি ইন্টারনেট সূত্রে প্রাপ্ত