• মহারাজার মূর্তি উন্মোচনেও তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব প্রকট
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সুকান্ত গঙ্গোপাধ্যায়, কোচবিহার: মহারাজার মূর্তি উন্মোচনেও কোচবিহারে তৃণমূল কংগ্রেসের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব সামনে এল। গত সপ্তাহে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কোচবিহারে এসে ঐক্যের বার্তা দিয়ে যাওয়ার পরেও দলের অন্তর্কলহ মিটল না। সোমবার ছিল মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুরের ১১১তম জন্ম জয়ন্তী। এই দিনটিকেই মহারাজার মূর্তি উন্মোচনের দিন হিসেবে বেছে নিয়েছিল কোচবিহার পুরসভা। শহরের আমতলায় উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে এই মূর্তি বসানো নিয়ে দপ্তরের মন্ত্রী উদয়ন গুহ ও কোচবিহার পুরসভার চেয়ারম্যান রবীন্দ্রনাথ ঘোষের মধ্যে আগে থেকেই সংঘাত চলছিল। যা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীকে হস্তক্ষেপ করতে হয়েছিল। কিন্তু তারপরেও সেই বিরোধ কিন্তু মিটল না। 

    সোমবার দুপুরে মহারাজার সেই মূর্তি উন্মোচনের অনুষ্ঠান শেষ করে পুরসভার চেয়ারম্যান বেরিয়ে যাওয়ার পর আসেন দলের জেলা সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক। তাঁর সঙ্গে ছিলেন জেলা পরিষদের সহকারী সভাধিপতি আব্দুল জলিল আহমেদ ও পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মাধবচন্দ্র অধিকারী। তাঁরা মহারাজার মূর্তিতে মাল্যদান করেন। মন্ত্রী উদয়ন গুহ আসেননি। তবে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জেলাশাসক রাজু মিশ্র। এছাড়াও রবি ঘনিষ্ঠ পার্থপ্রতিম রায়, পরিমল বর্মন, খোকন মিয়াঁ সহ কোচবিহারের বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্ব। ছিলেন কুমার মৃদুলনারায়ণ, বংশীবদন বর্মন সহ আরও অনেকে। 

    পুর চেয়ারম্যান রবি ঘোষ বলেন, এদিন মহারাজা জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুরের ১১১তম জন্মদিনটি পালনের মধ্যে দিয়ে তাঁর পূর্ণাবয়ব মূর্তির উন্মোচন করা হল। আমরা মহারাজা বিশ্বসিংহ, মহারাজা হরেন্দ্রনারায়ণ, মহারাজা জিতেন্দ্রনারায়ণেরও মূর্তি স্থাপন করব। আমি এদিন অন্য কোনও বিষয় নিয়ে কথা বলতে চাই না। কার দপ্তরের সামনে মূর্তি বসানো হয়েছে, সেটা কোনও বিষয় নয়। সবটাই পুরসভার জায়গা। মন্ত্রী, সাংসদ সকলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। ১৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলার অভিজিৎ দে ভৌমিক আসবেন বলেছিলেন, কোনও কারণে হয়তো আসতে পারেননি। ভাইস চেয়ারপার্সনের নিকট আত্মীয় অসুস্থ হয়ে পড়ায় তিনি গ্রামের বাড়ি চলে যান। মন্ত্রীকে উদয়ন গুহকে আমি আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তার প্রমাণ মোবাইলে রয়েছে। প্রয়োজন হলে সেটা দেখাতে পারি। জেলা তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি অভিজিৎ দে ভৌমিক বলেন, আমরা পঞ্চানন বর্মা বিশ্ববিদ্যালয়ের বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় গিয়েছিলাম। সেখান থেকে আসতে পাঁচ মিনিট দেরি হয়ে গিয়েছে। দলে কোনও দ্বন্দ্ব নেই। এটা দলের অনুষ্ঠান নয়। মন্ত্রী নিজেও দিনহাটায় মহারাজার নামে সুইমিং পুল করেছেন। 

    অন্যদিকে, বংশীবদন বর্মন তাঁর বক্তব্যে বলেন, কোচবিহারে মহারাজার মূর্তি বসানোর যাঁরা বিরোধিতা করেন তাঁরা কোচবিহারে বসবাস করলেও কোচবিহারবাসী নন। তবে পার্থপ্রতিম রায় বলেন, এই মূর্তি বসানোর জন্য কাজ শুরুর পর কিছু মানুষ অবাঞ্ছিতভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল। এটা দুর্ভাগ্যজনক। সেসব উপেক্ষা করে এদিন মহারাজার মূর্তি উন্মোচন করা হল। যদিও মন্ত্রী উদয়ন গুহ টেলিফোনে বলেন, আমি কোনও আমন্ত্রণ পাইনি। আর যেটা পেয়েছি সেটাকে আমন্ত্রণ বলা চলে না। 

    জগদ্দীপেন্দ্রনারায়ণ ভূপ বাহাদুরের পূর্ণাবয়ব মূর্তিটি প্রায় দু’লক্ষ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। পুরসভার পক্ষ থেকে স্থান নির্বাচন করা হয় আমতলা মোড়ে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন দপ্তরের সামনে। আর সেটি বসানোর জন্য উদ্যোগ শুরু হতেই বারবার বাধা আসতে শুরু করে।
  • Link to this news (বর্তমান)