প্লেনঘাঁটি থেকে আবার উড়ুক বিমান, জোরাল দাবি উঠছে জলপাইগুড়িতে
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: জলপাইগুড়ি শহর থেকে বাংলাদেশ সীমান্ত চাউলহাটির দিকে যেতে রাস্তার পাশে আজও জ্বলজ্বল করছে বোর্ড, যাতে লেখা ‘প্লেনঘাঁটি’। নতুন প্রজন্ম না জানলেও প্রবীণদের স্মৃতিতে ধরা রয়েছে, এখান থেকেই একসময় বিমান উড়ত। সেই বিমানে চড়ে কলকাতায় যাতায়াত করতেন চা বাগানের মালিক ও ব্যবসায়ীরা। শুধু তাই নয়, এই বিমানেই রোজ সকালে কলকাতা থেকে জলপাইগুড়িতে আসত খবরের কাগজ। ১৯৫২ সালে শুরু হওয়া এই বিমান পরিষেবার অন্তর্জলিযাত্রা ঘটে ১৯৭৪-এ। এখন পাঙ্গা প্লেনঘাঁটিতে দাঁড়িয়ে ঠাহর করা মুশকিল, কোথায় ছিল সেই বিমানবন্দর? কোথায় বা ছিল রানওয়ে! চারদিকে বহু মানুষের বাস আর চাষের জমি। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের সার্কিট বেঞ্চ, সরকারি মেডিকেল কলেজ, সরকারি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের মতো প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠার সুবাদে ক্রমেই গুরুত্ব বাড়ছে তিস্তাপাড়ের শহর জলপাইগুড়ির। ফলে পাঙ্গা প্লেনঘাঁটি থেকে আবারও বিমান উড়ুক, শহরে জোরাল হচ্ছে এমনই দাবি।
বাসিন্দাদের বক্তব্য, জলপাইগুড়ি থেকে বিমান ধরতে প্রায় ঘণ্টা দু’য়েকের পথ পেরিয়ে বাগডোগরায় যেতে হয়। সেক্ষেত্রে পাঙ্গা প্লেনঘাঁটি থেকে কপ্টার বা ছোট বিমান পরিষেবা চালু হলে সুবিধা হবে অনেকটাই। চা ও পর্যটন শিল্প অনেকটাই চাঙ্গা হবে বলে মনে করেন ক্ষুদ্র চা চাষি সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক বিজয়গোপাল চক্রবর্তী। তিনি বলেন, ছোট শহরগুলির সঙ্গে বড় শহরের যোগসূত্র স্থাপনের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের যে উড়ান প্রকল্প রয়েছে, তারই আওতায় জলপাইগুড়িতে উড়ান পরিষেবা চালু করা হোক। এনিয়ে স্থানীয় সাংসদের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে দাবি জানানো উচিত।
সীমান্ত থেকে মাত্র ২০ কিমি দূরে বাংলাদেশের লালমনিরহাটে বিমানঘাঁটি তৈরিতে চীনের মদত দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থেও জলপাইগুড়িতে বিমানবন্দরের পরিকাঠামো তৈরি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন এই শহরের বাসিন্দা তথা উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান আনন্দগোপাল ঘোষ। তিনি বলেন, জলপাইগুড়ি শহর থেকে কয়েক কিমি দূরেই পাঙ্গায় বিমানবন্দর ছিল। সেখান থেকে নিয়মিত বিমান উড়ত। ওই বিমানে চেপে বড় ব্যবসায়ী এবং চা বাগানের মালিকরা কলকাতায় যাতায়াত করতেন। তাছাড়া ওই বিমানেই রোজ সকালে খবরের কাগজ আসত।
প্লেনঘাঁটি থেকে আবারও যদি ছোট বিমান কিংবা নিদেনপক্ষে কপ্টার পরিষেবা চালু করা যায়, তাহলে খুবই ভালো হয়। তাঁর সংযোজন, জাতীয় সুরক্ষার নিরিখেও জলপাইগুড়িতে বিমানবন্দরের পরিকাঠামো তৈরির প্রয়োজন রয়েছে বলে মনে করি। বিষয়টি নিয়ে যাতে কোনও বিশেষজ্ঞ কমিটিকে দিয়ে সমীক্ষা করিয়ে কেন্দ্রকে রিপোর্ট দেওয়া যায়, তার চেষ্টা করা হবে বলে জানিয়েছেন জলপাইগুড়ির সাংসদ ডাঃ জয়ন্তকুমার রায়।
পাঙ্গা প্লেনঘাঁটিতে যখন বিমান ওঠানামা করত, তখন স্কুলে পড়তেন স্থানীয় বাসিন্দা মণীন্দ্রনাথ রায়। বললেন, অনেক সময় রক্ষণাবেক্ষণের জন্য বিমান রানওয়ের পাশে রাখা থাকত। আবদার করায় একবার আমাদের কয়েকজনকে ওই বিমানে রানওয়েতে ঘুরিয়েছিলেন পাইলট। আবার প্লেনঘাঁটি থেকে বিমান উড়ুক, এমনটাই চাই। নিজস্ব চিত্র