উপরে জল, নীচ দিয়ে ছুটছে ট্রেন, পর্যটকদের চোখ টানে ঝাড়গ্রামের ঝাড়াগেড়িয়া জল সেতু
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্ৰাম: ঝাড়গ্রামের মাঝখান দিয়ে দক্ষিণ-পূর্ব রেলের খড়্গপুর-টাটানগর রেল লাইন গিয়েছে। পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার সময় রাধানগর পঞ্চায়েতের ঝাড়াগেড়িয়ায় রেল লাইনের উপর আস্ত একটি ক্যানেল নির্মিত হয়েছিল। তখন থেকেইজঙ্গল, বিস্তীর্ণ তৃণভূমির মাঝে ইঞ্জিনিয়ারিংয়েরএই বিস্ময়কর প্রকৌশল পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।
ঝাড়গ্রাম শহরের বামদা রেল গেটের পূবে ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার গেলেই জল সেতুর দেখা মিলবে। জেলারভৌগলিক অবস্থানের কথা মাথায় রেখে এখানে রেল লাইনের তলা দিয়ে খাল কাটা হয়নি। রেল লাইনের উপর দিয়েই আস্ত ক্যানেলটি নির্মাণ করা হয়। কংসাবতী ক্যানেলপ্রকল্পের অংশ এই জল সেতু।রেল লাইনের উপর দিয়েই ক্যানেলের জল বয়ে যায়। নীচ দিয়ে ছোটে ট্রেন। তারাফেনী নদী ব্যারেজের জল শিলদা , মালাবতী , কলাবনী , খড়্গপুর গ্ৰামীণ এলাকা হয়ে কংসাবতীতে গিয়ে পড়ে। ক্যানেলের জলেই পশ্চিম মেদিনীপুর ও ঝাড়গ্রাম জেলার বিস্তীর্ণ শুখা জমিতে ফলে ফসল।
২০২০ সালে ক্যানেল ব্রিজটির গার্ডওয়াল ধসে গিয়ে ঝাড়াগেড়িয়া ও শালুকগেড়িয়ার বিস্তীর্ণ জমি প্লাবিত হয়েছিল। বর্তমানে ক্যানেলের দু’পাশ পরিবেশ দূষণ রোধকারী জিও ব্যাগ দিয়ে মজবুত করা হয়েছে।ছিদ্র দিয়ে জল যাতে বের না হয়, তারজন্য নিয়মিত নজরদারি চলে।
রেল কর্তাদের দাবি, সারা দেশে এমন জলসেতুর নিদর্শন খুব বেশি নেই।ঝাড়গেড়িয়ার রেল ক্যানেল ব্রিজ অর্ধশতাব্দীর বেশি সময় ধরে আজও টিকেরয়েছে। ক্যানেলের জলে ঝাড়গ্রামের বিস্তীর্ণ জমি এলাকায় চলে চাষবাস। অন্যদিকে, স্থানটি জেলার অন্যতম পর্যটনস্থলও হয়ে উঠেছে।
ঝাড়াগেড়িয়ার বাসিন্দা পঞ্চাশোর্ধ গুরচরণ কর্মকারের কথায়, ছোট থেকেই ক্যানেল ব্রিজটি দেখছি। উপর দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। নিচ দিয়ে ট্রেন, মালগাড়ি দিনরাত চলাচল করে। প্রবল স্রোত নিয়ে ক্যানেলের জল বয়ে যায়।এলাকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও অদ্ভুত এই জলসেতু দেখতে পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে।
শালুকগেড়িয়া গ্ৰামের বাসিন্দা পুলক মাহাত বলেন, ক্যানেলটি গড়ার কারণে শুখা এই এলাকায় সেচের জল মিলছে।
ঝাড়গ্রাম কর্ম বিনিয়োগ দপ্তরের আধিকারিক অরুণাভ দত্ত জঙ্গলমহলের এই জেলা নিয়ে চর্চা করেন।তিনি বলেন,খালের উপর সেতু হয়। সেতুর উপর যানবাহন, মানুষজন যান। এটাই দস্তুর। কিন্তু রেল লাইনের উপর আস্ত ক্যানেল বানানো নিঃসন্দেহে বিস্ময়কর। অভিনব এই জলসেতু নিয়ে এখন বহু মানুষের আগ্ৰহ বাড়ছে। ঝাড়গ্রাম পর্যটন দপ্তরের এক আধিকারিক বলেন, নিচের রেল লাইন দিয়ে সর্বক্ষণ ট্রেন যাতায়াত করে। পর্যটকরা সতর্কতা মেনে এলাকায় যাতে ঘোরাঘুরি করেন তারজন্য বলা হচ্ছে।-নিজস্ব চিত্র