চোর সন্দেহে পিটুনি আশঙ্কাজনক ৩ যুবক, রঘুনাথপুরে উত্তেজনা, গ্রেফতার ১০
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সংবাদদাতা, রঘুনাথপুর: রঘুনাথপুর মহকুমায় চোরের উপদ্রবে ত্রস্ত এলাকাবাসী। অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে চোর নিয়ে গুজব রটতে শুরু করেছে। গুজবের জেরে নিরীহ মানুষ হেনস্তার শিকার হতে পারে আন্দাজ করে আগাম সতর্কতা প্রচার শুরু করেছিল মহকুমার পুলিশ। কিন্তু তাধ সত্ত্বেও পুলিশের আশঙ্কা সত্যি হয়ে দাড়াল। শনিবার গভীর রাতে আদ্রা থেকে সাঁতুড়ির উদ্দেশ্যে বাইক নিয়ে বাড়ি ফেরার পথে তিন যুবককে চোর সন্দেহে গণপিটুনি দেওয়া হয়। রঘুনাথপুর থানার চিনপিনা গ্রামের ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। খবর পেয়ে পুলিশ গুরুতর জখম তিন যুবককে উদ্ধার করে রঘুনাথপুর সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করায়। রবিবার জখম যুবকরা লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে রঘুনাথপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক রোহেদ শেখের নেতৃত্বে পুলিশ সারাদিন ধরে দফায় দফায় অভিযান চালায়। এখনও পর্যন্ত গ্রামের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের সোমবার রঘুনাথপুর মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক তিনজনকে চারদিন পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দেন। বাকিদের জেল হেফাজতে পাঠানো হয়। ঘটনার পর থেকে গ্রাম পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। পুলিশ নজরদারি চালাচ্ছে। এলাকায় থমথমে পরিবেশ।
রঘুনাথপুর মহকুমা পুলিশ আধিকারিক জানিয়েছেন, গুজবের বিরুদ্ধে মানুষকে সচেতন করা হয়েছে। পুলিশ তৎপরতার সঙ্গে কাজ করছে। চিনপিনার ঘটনায় তদন্ত চলছে। তিনজনকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সাঁতুড়ি থানার সাধুশালতোড়া গ্রামের তিন যুবক বাইকে ওইদিন রাতে আদ্রা গিয়েছিল। অন্ধকার রাত্রে বাইক নিয়ে রঘুনাথপুর-বাঁকুড়া রাজ্য সড়ক ধরে বাড়ি ফিরছিল। চিনপিনা গ্রামের কাছে বাইকটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পড়ে যায়। নিজেদের দোষে বাইক উল্টে যায়। তাই একে অপরকে দোষারোপ করে নিজেরা তর্কাতর্কিতে জড়িয়ে পড়ে। তখনই গ্রামের মানুষ চোর সন্দেহ করে তাদের আক্রমণ করে। অভিযোগ, গ্রামের ৫০-৬০ জন পুরুষ ও মহিলা মিলে লাঠি, কুড়োল প্রভৃতি অস্ত্র নিয়ে তাদের আক্রমণ করে। উল্লেখ্য, সম্প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে রঘুনাথপুর মহকুমার রঘুনাথপুর, আদ্রা, সাঁতুড়ি, পাড়া প্রভৃতি থানা এলাকায় চোর নিয়ে গুজব রটে। গুজবের জেরে বেশ কিছু গ্রামে রাত পাহারা শুরু হয়। কিন্তু চোরেরা আসছে, চুরি করে পালাচ্ছে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু কোথায় চুরি হচ্ছে তা নিয়ে কারও কোনও উত্তর নেই। এক শ্রেণির মানুষ সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। তারা মিথ্যা প্রচার করে বেড়াচ্ছে। তাই রঘুনাথপুর মহকুমার পুলিশ বিষয়টিকে নিয়ে চিন্তা ভাবনা করে তৎপর হয়। কারণ গুজবে সাধারণ ফেরিওয়ালা, ভবঘুরে মানুষরা আক্রান্ত হতে পারেন। রঘুনাথপুর থানার তরফে একটি অডিও ক্লিপ রেকর্ড করে এলাকায় প্রচার করা হচ্ছে। সোশ্যাল মিডিয়ায় শেয়ার করা হচ্ছে। সাঁতুড়ি থানার পুলিশ ছয়টি পঞ্চায়েত এলাকায় মাইকিং করে গুজবের বিরুদ্ধে প্রচার করেছে।
অভিযোগকারী বিশ্বনাথ দাস বলেন, ওইদিন আমার ছেলে শুকদেব দাস তার দুই বন্ধু সৌমেন মণ্ডল এবং ঝুলন চক্রবর্তীর সঙ্গে আদ্রা গিয়েছিল। বাড়ি ফেরার সময় চিনপিনা গ্রামে তাদের উপর হামলা হয়। তাদের গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। মোবাইল এবং টাকা পয়সা ছিনতাই করে নেওয়া হয়। পুলিশ জানিয়েছে, মোট ১০ জনের নামে এবং ৫০ জন অজ্ঞাত পরিচয় ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সকলের বিরুদ্ধে একাধিক ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছে। বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হবে। লাগাতার অভিযান চলবে। রঘুনাথপুরের চিনপিনা গ্রামে চোর সন্দেহে গণপিটুনির ঘটনায় ধৃত দশ জন।-নিজস্ব চিত্র