সুন্দরীদেরও বিয়ের প্রস্তাব! ফেরাতে না পেরে প্রতারিত একাধিক রাজ্যের যুবক
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সুখেন্দু পাল, বর্ধমান: কবি গুরু সেই কবেই বলে গিয়েছেন—‘ভালোবাসার ফাঁদ পাতা রয়েছে ভুবনে...।’ এখন প্রযুক্তির ভুবনায়ন। চলছে ডিজিটাল যুগ। বদলে গিয়েছে ভালোবাসা সংজ্ঞাও। আশির কিংবা নব্বই দশকে প্রেম-ভালোবাসার পিছু পিছু চলত ভয়ভীতি। ছিল আবেগ, অনুভূতিও। পছন্দের কাউকে একটা গোলাপ দিতে হাত কাঁপত। ধড়াস করে উঠত বুকটাও। এখন এসবের কিছু বালাই নেই। ডিজিটালি ‘লাভ’ কিংবা ‘রোজ’ ইমোজি পাঠিয়ে মন পরীক্ষা। সেখানে কেউ ‘লাইক’ ইমোজি দিলেই কেল্লাফতে! ভুল করে কারও লাইকে আঙুল পড়ে গেলেও অপরপক্ষ ভেবে নেন, সব ঠিকঠাক। আর সেটাই ডেকে আনছে বিপদ। সুবেশা কোনও তরুণী যদি লাভ ইমোজি শেয়ার করে, তা হলে কোন যুবকেরই বুকের পাট্টা রয়েছে, তাকে এড়িয়ে যাওয়ার! যাওয়া যায় না বলেই ফাঁদও থাকে তৈরি। একবার সেই ফাঁদে পা দিলেই নিঃস্ব।
সাহিদ, জামিররা সুবেশা তরুণী কিংবা সুন্দরী ডিভোর্সিদের সঙ্গে প্রেম-নির্মাণের নিখুঁত চিত্রনাট্য লিখে, বিয়ের টোপ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতারিত হয়েছেন বহু ধনী মহিলাও। পুলিশের তদন্তে উঠে আসছে আবার উল্টো ছবিও। সেই ছবিতে প্রতারকের ভূমিকায় অপ্সরার মতো দেখতে সুন্দরীরা। সবাই কিন্তু ভেকধারী। কৌশল অবশ্য একই। সেই ম্যাট্রিমনি অ্যাপস। সেখানে প্রেম-ভালোবাসার অভিনয়। তারপর একদিন প্রেমিক যুবকের টাকা আত্মসাৎ করে ডিজিটালি বিলুপ্ত হয়ে যাওয়া! এভাবে কত যুবকের যে হৃদয় ভেঙেছে, অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা লুট করে নিয়েছে, তার কোনও ইয়ত্তা নেই। তদন্তকারীদের ভাষায় গ্যাংটি ‘লুটেরা দুলহন’। মেট্রোমনি অ্যাপসে গ্যাংটি সুন্দরী যুবতীদের ছবি ব্যবহার করে প্রোফাইল খুলত। সেইসব ছবি দেখে মুগ্ধ হতেন বহু যুবক। দু’একদিন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলার পর বিয়ের প্রস্তাব। অতীব সুন্দরীর প্রস্তাবে হাতুড়ি পেটা শুরু হতো বুকে। এরপর সুযোগ বুঝে দফায় দফায় টাকা আত্মসাৎ।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ‘লুটেরা গ্যাং’য়ের সদস্যরা উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা। যুবকদের পাশাপাশি কয়েকজন প্রৌঢ়াও এই গ্যাংয়ের সদস্যা। ম্যাট্রিমনি অ্যাপস দেখে কেউ বিয়ের প্রস্তাব পাঠালে ওই প্রৌঢ়ারা পাত্রীর মা পরিচয় দিয়ে যুবকদের ফোন করত। তারাই বিয়ের কথা এগিয়ে নিয়ে যেত। বেশ কিছুদিন কথা বলার পরই নানা সমস্যার কথা বলে টাকা হাতাত। মোটা অঙ্ক হাতিয়ে নেওয়ার পরই প্রোফাইল বন্ধ করে দিত। তদন্তে উঠে আসছে, গ্যাংটি বাংলা ছাড়াও উত্তরপ্রদেশ, দিল্লি সহ বিভিন্ন রাজ্যের বাসিন্দাদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। টার্গেট ছিল ৪০ পেরনো ব্যক্তিরা।
কিছুদিন আগে এই গ্যাংয়ের ককেজন সদস্যকে দিল্লি পুলিশ গ্রেফতার করে। তাদের মধ্যে এক মহিলা রয়েছে। এক পুলিশ আধিকারিক বলছিলেন, ওই গ্যাংটি এ রাজ্যেরও অনেকের টাকা হাতিয়েছে। অন্য রাজ্যের মহিলাদের থেকে তারা অন্যজনের অ্যাকাউন্টে টাকা নিয়েছে। বর্ধমানের এক বাসিন্দার অ্যাকাউন্টও তারা ব্যবহার করেছে। তার খোঁজেও পুলিশ তল্লাশি শুরু করেছে। সাহিদদের গ্যাংয়ের আরও কয়েকজন অধরা। তাদেরও পুলিশ চিহ্নিত করার চেষ্টা চালাচ্ছে। বর্ধমানের মহিলাকে প্রতারণার ঘটনায় পুলিশ সাহিদের বিরুদ্ধে সোমবার চার্জশিট জমা করেছে। পাশাপাশি বয়স্কদের সচেতন করার জন্য একটি কর্মসূচি নেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছে পুলিশ। পূর্ব বর্ধমানের পুলিশ সুপার সায়ক দাস বলেন, ‘সোশ্যাল মিডিয়ায় অপরিচিত কারও সঙ্গে বন্ধুত্ব করা ঠিক নয়। বারবার প্রচার করার পরও অনেকেই প্রতারকদের জালে জড়িয়ে যাচ্ছেন। তাতে সমস্যা বাড়ছে।’ (শেষ)।