• মেলার মরশুম দ্বারিয়াপুরের ডোকরা শিল্পীরা শোপিস, গয়না তৈরিতে মগ্ন
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সংবাদদাতা, মানকর: আসন্ন মেলার মরশুমের আগে ব্যস্ততা বেড়েছে আউশগ্রামের দ্বারিয়াপুরে। এখানকার ডোকরা শিল্পের খ্যাতি শুধু এ রাজ্য নয়, দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। বোলপুরের পৌষমেলা সহ কলকাতা ও বিভিন্ন জেলার মেলায় বিক্রির জন্য তৈরি হচ্ছে হাতের বালা, লকেট, ফুলদানি সহ বিভিন্ন গয়না। 

    ‘ডোকরা গ্রাম’ দ্বারিয়াপুরের ৬০টিরও বেশি পরিবার এই শিল্পের উপর নির্ভর করে সংসার চালান। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের সময় ছত্তিশগড়ের বস্তার থেকে ডোকরা শিল্পীরা পশ্চিমবঙ্গে আসেন। তাঁদের একটি অংশ বাঁকুড়ায় বসতি স্থাপন করেন, অন্যটি দ্বারিয়াপুরে। গ্রামের শম্ভু কর্মকার ১৯৬৬ সালে ডোকরা শিল্পের জন্য রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। এর ২০ বছর পরে ১৯৮৬ সালে হারাধন কর্মকার, ১৯৮৮ সালে মটর কর্মকার ও বৈকুণ্ঠ কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান। ২০১২ সালে রামু কর্মকার রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পেয়েছেন। 

    সোমবার গ্রামে গিয়ে শিল্পীদের ব্যস্ততার ছবিই চোখে পড়ল। শিল্পীরা নিজের কাজে ব্যস্ত। বাড়ির মহিলারাও পুরুষদের সাহায্য করছেন। তাঁরা বলছেন, মেলায় বিক্রির জন্য নতুন নতুন ডিজাইনের শিল্প তৈরি করা হয়। মেলার মাধ্যমে বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে পরিচিত হওয়া যায়। বিভিন্ন জায়গার বাসিন্দাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়ে। তাঁদের চাহিদা বুঝে শিল্প তৈরি করি। তাতে শিল্প যেমন বেঁচে থাকে, আমাদেরও ভাত-কাপড় হয়। মেলায় যাওয়ার ফলে বহু মানুষ ডোকরা শিল্পের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করছেন। যা আমাদের বাড়তি পাওনা। শিল্পীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, বংশ পরম্পরায় তাঁরা ডোকরা শিল্প শিখেছেন। এখানে শিল্পের বিশেষত্ব হল কোনও ছাঁচ তাঁদের কাছে তৈরি থাকে না। তাই একটি জিনিস একবারই তৈরি হয়। আসন্ন মেলার মরশুমের জন্য নাওয়া-খাওয়া ভুলে তাঁরা জিনিস তৈরি করছেন। শিল্পী মুকুল কর্মকার, শিবশঙ্কর কর্মকাররা বলেন, বছরভর কমবেশি বাক্স, ফুলদানি থেকে শুরু করে বিভিন্ন মূর্তি, পালকি টুকটাক বিক্রি হয়। কম দাম হওয়ায় লকেটের বিক্রি বেশি হয়। তাঁরা জানান, ছোট লকেটের দাম ৫০ টাকা থেকে শুরু। হার অন্যান্য গয়না সামগ্রী ৫০০ টাকার মধ্যেই। পালকি বা অন্যান্য মূর্তি আড়াই হাজার টাকা থেকে শুরু। শিল্পীরা জানান, রথ বা মূর্তি তৈরি করতে প্রায় পনেরো দিন লেগে যায়। তবে এখন খরচ বেড়েছে। প্রধান উপকরণ পিতল ছাড়াও কয়লা, মোম ও অন্যান্য কাঁচামালের দাম অনেকটাই বেশি। সেই তুলনায় লাভ কমেছে। তাছাড়া ক্রেতারা এসে মডেলের উপর গোল্ডেন পালিশ চাইছেন। কিন্তু ডোকরা শিল্পে পালিশের বিষয় আগে ছিল না। শিল্পী শুভ কর্মকার বলেন, শীতের মরশুমে পর্যটকরা ভাল্কি মাচান, লবণধার, বোলপুর শান্তিনিকেতনে বেড়াতে আসেন। তাঁদের অধিকাংশই এখানে আসেন। অনেকে কেনাকাটাও করেন। শান্তিনিকেতন যাওয়ার পথে ডোকরা গ্রামে এসেছিলেন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়, অভিজিৎ রায়রা। তাঁরা বলেন, এখানে শিল্পের খ্যাতি বিদেশেও ছড়িয়েছে। বাজার বাড়লে শিল্পেরও লাভ হবে। 
  • Link to this news (বর্তমান)