চিকিৎসার জন্য মালয়েশিয়া গিয়ে ঠাঁই ডিটেনশন ক্যাম্পে, প্রতারকের খপ্পরে ঠাকুরপুকুরের যুবক উদ্ধার ১০ বছর পর
বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
সুজিত ভৌমিক, কলকাতা: থাইল্যান্ডের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি যুবককে ঘরে ফেরাল ঠাকুরপুকুর থানার পুলিশ। প্রায় ১০ বছর থাইল্যান্ডের ডিটেনশন ক্যাম্পে বন্দি থাকা ঠাকুরপুকুরের বাসিন্দা ওই যুবক ১০ ডিসেম্বর দেশে ফিরেছেন। বিদেশ মন্ত্রকে চিঠি লিখে কার্যত এই অসাধ্য করেছেন ঠাকুরপুকুর থানার তরুণ এক অফিসার।
ঘটনার সূত্রপাত অবশ্য ২০১৫ সালের মে মাসে। কর্মসূত্রে দিল্লি নিবাসী সাংবাদিক শুভজিৎ চন্দ্র চিকিৎসার কথা বলে বৈধ ভারতীয় ভিসা-পাসপোর্ট নিয়ে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। কিছুদিন সেখানে কাটানোর পর তিনি কম্বোডিয়ায় যান। সেখানে থাকাকালীন তিনি আর্ন্তজাতিক দালাল- চক্রের খপ্পরে পড়েন বলে পুলিশের এক সূত্র জানাচ্ছে। দালালদের দলটি তাঁকে আমেরিকায় মোটা বেতনের চাকরি পাইয়ে দেওয়ার টোপ দিয়ে, তাঁর ভারতীয় ভিসা-পাসপোর্ট সহ সমস্ত পরিচয়পত্র কেড়ে তাঁকে তাড়িয়ে দেয় বলে অভিযোগ।
এই অবস্থায় শুভজিৎ কম্বোডিয়া পুলিশের হাতে ধরে পড়ে যান। কোনও বৈধ নথিপত্র দেখাতে না পারায়, তাঁকে আটক করে সেদেশের পুলিশ। কিছুদিন সেখানে আটকে রাখার পর তাঁকে থাইল্যান্ড সীমান্তের ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’ ছেড়ে দেয় কম্বোডিয়ার পুলিশ। অবৈধভাবে সীমান্ত পেরিয়ে থাইল্যান্ডে ঢোকায় তাঁকে গ্রেফতার করে থাই পুলিশ। এবার তাঁর ঠাঁই হয় থাইল্যান্ডের ডিটেনশন ক্যাম্পের সেলে। সেখানেই কেটে যায় বছরের পর বছর।
বিদেশে পাড়ি দেওয়ার পর প্রথম দিকে ফোনে বাবার সাথে যোগাযোগ ছিল শুভজিতের। তারপর একটা দিন সেই যোগাযোগ ছিন্ন হয়ে যায়। এদিকে শুভজিতের বাবা ছেলের খোঁজে ২০১৬ সালে ঠাকুরপুকুর থানার জিডি করেন। এমনকী ছেলের খোঁজে সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপনও দেন। কিন্তু তাতে কোনও সাড়া পাওয়া যায়নি। পরিবারটি প্রায় ধরেও নিয়েছিল হয়তো ছেলে আর বেঁচে নেই! চলতি বছরের জুলাইতে শুভজিতের বাবা অনাথচন্দ্র চন্দ্র প্রয়াত হয়েছেন। বাড়িতে মা শয্যাশায়ী।
রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যাওয়া শুভজিৎকে খুঁজে দিতে চলতি বছরের ১১ নভেম্বর স্থানীয় ঠাকুরপুকুর থানার দ্বারস্থ হয়েছিল তাঁর পরিবার। এই সুবাদে ১৫ নভেম্বর বিদেশের বুকে নিখোঁজ-রহস্যের কিনারায় তদন্ত শুরু করেন ঠাকুরপুকুর থানার এক অফিসার। তিনি শুভজিতের পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে বিদেশ মন্ত্রকে চিঠি লিখেছিলেন। তাতেই অসাধ্য সাধন হয়েছে।
সদ্য দেশে ফেরা শুভজিৎ দিন দুয়েক আগে, ঠাকুরপুকুর থানায় বসে, ওই পুলিশ অফিসারকে জানিয়েছেন, ‘কলকাতা পুলিশের চিঠি পেয়ে থাইল্যান্ডের ভারতীয় দূতাবাসের অফিসার ডিটেনশন ক্যাম্প থেকে শুভজিৎকে উদ্ধার করেন। জরুরি ভিত্তিতে নথিপত্র তৈরি করে তাঁকে দিল্লির বিমানে তুলে দেওয়া হয়। থাইল্যান্ডের ডিটেনশন ক্যাম্পে তাঁর উপর নির্যাতন করা হয়নি। কিন্তু ভাষা সমস্যার জন্য তিনি তাঁর ভিসা-পাসপোর্ট কেড়ে নেওয়ার কথা বোঝাতে ব্যর্থ হন। এক দশক বিদেশের বন্দিজীবন কাটিয়ে সদ্য ঠাকুরপুকুরের ভট্টাচার্য পাড়ার বাড়িতে ফেরা শুভজিৎ এখন বেকার! একটি চাকরির দাবিতে তিনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হতে চান।