নিজস্ব প্রতিনিধি, বারাকপুর: ২০২২ সালের ১৩ মার্চ ভরসন্ধ্যায় খুন হন পানিহাটির তৃণমূল কাউন্সিলার অনুপম দত্ত। আগরপাড়া নর্থ স্টেশন রোডে পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে গুলি করে খুন করা হয় তাঁকে। ওই খুনের মামলায় সঞ্জীব পণ্ডিত ওরফে বাপি পণ্ডিত, অমিত পণ্ডিত ও জিয়ারুল মণ্ডলকে সোমবার দোষী সাব্যস্ত করলেন বারাকপুরের তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অয়নকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়। অমিতের বিরুদ্ধে অস্ত্র আইনের ২৫ ও ২৭ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে। অনুপম দত্তকে গুলি করেছিল এই অমিত। আর খুনের ষড়যন্ত্র করেছিল বাপি। সেই ষড়যন্ত্রে জড়িত ছিল জিয়ারুলও। সাধারণ কলের মিস্ত্রি থেকে পরবর্তীকালে পানিহাটি পুরসভার ঠিকাদার হয়ে ওঠা বাপি এই মামলা থেকে বাঁচতে সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গিয়েছিল। সেখান থেকে জামিনও পেয়েছিল সে। কয়েক কোটি টাকা খরচ করে বাপি কীভাবে মামলা চালাল, তাকে টাকার জোগান কে দিল, সেই প্রশ্নও উঠেছে। এদিন তিনজনকে দোষী সাব্যস্ত করার পর অনুপম দত্তের স্ত্রী মীনাক্ষী দত্ত আদালত চত্বরে বলেন, ‘আমি চাই ওদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। কে বা কারা বাপিকে টাকা দিল, সেটাও জানতে চাই।’
বারাকপুর আদালতের এজলাস থেকে কোর্ট লক-আপে নিয়ে যাওয়ার পথে অনুপম দত্ত খুনের মূল ষড়যন্ত্রকারী বাপি পণ্ডিত দাবি করে, নেতারা তাকে ফাঁসিয়েছে। মীনাক্ষী দত্তের দাবি, কে বা কারা তাকে ফাঁসিয়েছে, তাদের নাম বাপিকেই সামনে আনতে হবে। এদিন কোর্ট চত্বরে উপস্থিত তৃণমূলের মুখপাত্র তথা পানিহাটির কাউন্সিলার সম্রাট চক্রবর্তী বলেন, ‘বাপি বিজেপির সক্রিয় কর্মী ছিল। তাই তাকে মামলার টাকা কে জুগিয়েছে, তা অর্জুন সিংই ভালো বলতে পারবেন।’ পানিহাটি পুরসভার চেয়ারম্যান সোমনাথ দে বলেন, খুনের রাজনীতি বন্ধ হোক। খুনিদের কঠোর শাস্তি দেওয়া হোক। পাল্টা বিজেপি নেতা অর্জুন সিং বলেন, এই ঘটনা তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফল। ফলে কার ষড়যন্ত্রে ওই ঘটনা ঘটেছে, তা পানিহাটির বিধায়ক বলতে পারবেন।’ তৃতীয় অতিরিক্ত জেলা দায়রা বিচারক অয়নকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছেন, আগামী বুধবার সাজা ঘোষণা হবে।
এই রায়ের কথা ঘোষণা হতেই আগরপাড়া থেকে বহু মানুষ কোর্ট চত্বরে হাজির হন। তারা মৃত্যুদণ্ডের দাবি জানান। সন্ধ্যায় আগরপাড়ায় মোমবাতি মিছিল হয়। মীনাক্ষীদেবীর দাবি, তিনি এখনও নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টে বপির হয়ে সওয়াল করেছিলেন ছ’জন আইনজীবী। তাঁদের নিযুক্ত করতে টাকা জুগিয়েছিল কে? যারা বাপি, অমিতদের বাঁচানোর জন্য টাকা দিয়েছে, তারা এখনও ধরা পড়েনি।’
এদিকে, সরকারি কৌঁসুলি সত্যব্রত দাসের দাবি, অনুপম দত্ত খুনের মূল ষড়যন্ত্রী বাপি পণ্ডিতকে কে সুপারি দিয়েছিল, প্রাণের ভয়ে তার বা তাদের নাম বলছে না সে। আইনজীবীর কথায়, এলাকায় জমি মাফিয়াদের হাত থেকে বিভিন্ন জমিকে বাঁচাতে লড়াই করছিলেন অনুপম দত্ত। তিনি বাধা হয়ে দাঁড়ানোয় তাঁকে সরাতে মরিয়া হয়ে উঠেছিল স্বার্থান্বেষী মহল। তারাই বাপি, অমিতদের এই কাজে লাগিয়েছিল। একারণেই বাপি বারেবারে বলছে, রাজনৈতিক নেতারাই তাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।