• বাংলার বাড়ি পেলেন সুন্দরবনের ‘বাঘ বিধবা’রা, বাবার স্মৃতিতে বাড়ির নামকরণ ছেলেদের
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • সৌম্যজিৎ সাহা, দক্ষিণ ২৪ পরগনা: ঝড়জলে প্রতিবছরই ভাঙে বেড়ার ঘর। আশ্রয় আশপাশে থাকা হাইস্কুল বা ফ্লাড শেল্টার। বর্ষা বিদায় নিলে আবার তৈরি করতে হয় কাঁচা বাড়ি। তাঁরা জঙ্গলে গিয়ে মাছ-কাঁকড়া ধরেন। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে কাজ। ফলে সবমিলিয়ে জীবনের প্রতি মুহূর্ত অনিশ্চয়তায় ভরা। গোসাবার লাহিড়িপুরের মৎস্যজীবীদের এই বারোমাস্যা। এখানকার অনেকে বাঘের আক্রমণে প্রাণও হারিয়েছেন। তাঁদের স্ত্রীদের স্থানীয়ভাবে ‘বাঘ বিধবা’ বলার রেওয়াজ। প্রায় ১০ জনের মতো বাঘ বিধবা রয়েছেন গ্রামে। মৃত্যুর আগে তাঁদের স্বামীরা ভাবতেন পাকা ঘর তৈরি করবেন। কিন্তু পারেননি।

     বাংলার বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে স্বপ্ন সফল হয়েছে তাঁদের পরিবারের। মৃত বাবা পাকা বাড়ি করে যেতে পারেননি। তাই বা঩ড়ি তৈরির পর প্রয়াত পিতার নামে নয়া বাড়ির নামকরণ করতে চান তাঁদের সন্তানরা।

    বাঘ বিধবারা বাংলার বাড়ি পেয়েছেন। সেরকমই একজন হলেন তুলসি মণ্ডল। কোনওরকমে মাটির দেওয়াল আর খড়ের চালের নীচে দিন গুজরান করতেন তিনি। বর্ষায় জল জমলে পাশে স্কুলে গিয়ে আশ্রয় নিতেন। সেই সমস্যা মিটেছে। 

    তাঁর ছেলে নারায়ণ মণ্ডল কাজের সূত্রে কলকাতায় থাকেন। মাঝেমধ্যে গ্রামের বাড়ি যান। তিনি বলেন, ‘২০১৯ সালের ২৪ ডিসেম্বর জঙ্গলে মাছ ধরতে গিয়ে বাঘের মুখে পড়েছিলেন বাবা। গুরুতর জখম অবস্থায় হাসপাতালে নিয়ে আসতে আসতেই মারা যান। চলতি বছরের শুরুতেই বাংলার বাড়ি পেয়েছেন মা। কংক্রিটের বাড়ি বানানো হয়েছে। মা থাকছেন। বর্ষায় আগে খুবই অসুবিধে হতো। এখন কিছুটা নিশ্চিন্ত হওয়া গিয়েছে। খারাপ লাগছে নতুন পাকা বাড়ি বাবা দেখে যেতে পারলেন না। তাঁর নামে বাড়ির নাম রাখব।’

    সুশীলা মণ্ডল নামে অন্য এক বিধবার স্বামী বাঘের হামলায় মারা যান পাঁচবছর আগে। ছেলে, বউমাকে নিয়ে বেড়ার বাড়িতে দিন কাটত তাঁর। তিনিও এবছর বাংলার বাড়ি পেয়েছেন। সুশীলাদেবীর ছেলে তন্ময় মণ্ডল বলেন, ‘অনেক কষ্ট করে এই বাড়ি তৈরি করেছি। বাবা দেখে যেতে পারলে ভালো লাগত। তা হল না। তাই তাঁর স্মৃতিতেই বাড়ির নাম রাখব ভেবেছি।’ জানা গিয়েছে, গোসাবার মত কুলতলিতেও একাধিক বাঘ বিধবা বাংলার বাড়ি পেয়ে উপকৃত। সেখানেও অনেকে একাই থাকেন। সংসার চালাতে ছেলেরা ভিন রাজ্যে গিয়েছেন। তাই পাকা বাড়িতে আশ্রয় পেয়ে তাঁরা স্বস্তি বোধ করছেন।
  • Link to this news (বর্তমান)