অলকাভ নিয়োগী, বিধাননগর: বহুদিনের শখ প্রিমিয়াম মডেলের গাড়ি কেনার। তাও বিদেশি ব্র্যান্ডের অরিজিনাল লোগো দেওয়া। নিজের অত রেস্ত নেই। তাই জালিয়াতির রাস্তায় হাঁটা। মোটা টাকার প্রতারণা। এক বৃদ্ধার ৯০ লক্ষ টাকা হাতিয়ে কিনলেন মার্সিডিজ। তবে বেশিদিন সুখ ভোগ হল না। পুলিশ বমাল গ্রেফতার করল সেই প্রতারককে। ধরা পড়ে পুলিশকে সাফ জানালেন, ‘স্যার বহুদিনের স্বপ্ন ছিল প্রিমিয়াম গাড়ি কেনার। তাই টাকা হাতিয়েই কিনে ফেলেছি।’ এমন গুণধর প্রতারকের নাম সুরজ রজক।
অনলাইনে বিনিয়োগের টোপ দিয়ে সাধারণত যেমন প্রতারণা হয়, এটি সেরকম ঘটনা নয়। এ ক্ষেত্রে ঘটনাটি আপাতভাবে সহজ সরল। বৃদ্ধার সরলতার সুযোগ নিয়ে বিশ্বাস অর্জন করেন প্রতারক। তারপর টাকা হাতিয়ে শুরু করেন বিলাসবহুল জীবনযাপন। প্রতারিত বৃদ্ধার বাড়ি সল্টলেকের জি সি ব্লকে। ছেলে ও মেয়ে থাকেন বিদেশে। সল্টলেকের জি ডি ব্লকের একটি ব্যাংকে তাঁর ‘এনআরআই’ অ্যাকাউন্ট আছে। অ্যাকাউন্টটি তাঁর ছেলে রক্ষণাবেক্ষণ করেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, একদিন বৃদ্ধা ব্যাংকে যাচ্ছিলেন। রাস্তায় তাঁর সঙ্গে সুরজের পরিচয় হয়। সুরজ নিজেকে অন্য একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মী বলে জানান। তারপর দিতে থাকেন বিনিয়োগ সম্পর্কিত নানা ধরনের টোপ। বৃদ্ধা তাঁকে বিশ্বাস করে সরল মনে বলেছিলেন, অনলাইনে ব্যাংকের কাজকর্ম এবং বিনিয়োগ সম্পর্কে তাঁর বিশেষ কোনও ধারণা নেই। এই সুযোগের অপেক্ষাতেই ছিলেন সুরজ। বৃদ্ধাকে তৎক্ষণাৎ জানান, একদিন তাঁর বাড়ি গিয়ে সব বুঝিয়ে আসবেন। এরপর যান বাড়িতে। নানা ধরনের বিনিয়োগ নিয়ে বোঝানো শুরু করেন। বৃদ্ধার আগ্রহ বাড়ার পর বলেন, জি ডি ব্লকের অ্যাকাউন্টে তাঁর যা টাকা জমা আছে তা নতুন একটি অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করতে। এর ফলে লাভ বেশি হবে। এর জন্য বৃদ্ধাকে কোথাও যেতে হবে না। সব ব্যবস্থা সে নিজে করে দেবে। এরপর শুরু হয় আসল খেল। বৃদ্ধার কেওয়াইসি সংক্রান্ত নথিপত্র, চেক সহ ব্যাংকের যাবতীয় কাগজপত্র নিয়ে নেন সুরজ। বৃদ্ধা কিছু না বুঝেশুনেই দিয়ে দেন। প্রতারণা সম্পর্কে অন্ধকারেই থাকেন।
সম্প্রতি তাঁর ছেলে বিদেশ থেকে সল্টলেকে বাড়ি ফেরেন। তিনি ব্যাংকে গিয়ে জানতে পারেন মায়ের অ্যাকাউন্ট থেকে ৯০ লক্ষ ১৮ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। এরপর মাকে নিয়ে পুলিশের কাছে যান। বৃদ্ধা বিধাননগর সাইবার ক্রাইম থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তদন্তে নামে পুলিশ।
তারপর জানা যায়, বৃদ্ধার নথি ব্যবহার করে সুরজ ব্যাংকে নথিভুক্ত মোবাইল নম্বর এবং ই-মেল আইডি বদলে ফেলেছিলেন। তারপর অ্যাকাউন্ট থেকে আরটিজিএস এবং সই জাল করে চেকের মাধ্যমে টাকা তুলে নেন। সে টাকা বিভিন্ন অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করেন। ইলেকট্রনিক্স তথ্য থেকে ফান্ড লেনদেনের তথ্য সামনে এসেছে। এরপর সুরজকে গ্রেফতার করা হয়। উদ্ধার হয়েছে মার্সিডিজটি। গাড়িটির আরসি স্মার্টকার্ডও বাজেয়াপ্ত হয়েছে।
পুলিশ জানিয়েছে, প্রতারণার ৯০ লক্ষের মধ্যে ৪৩ লক্ষ টাকা সরিয়ে ফেলেছিলেন সুরজ। তার মধ্যে গাড়ির জন্য খরচ করেন ১০ লক্ষ। ৪৭ লক্ষ টাকা খরচ হয়নি। তা ফ্রিজ করা হয়েছে। টাকা উদ্ধারের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।