• এসআইআরের খসড়া তালিকা প্রকাশ করল নির্বাচন কমিশন, ৫৮ লক্ষের বেশি নাম বাদ পড়ল
    বর্তমান | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • শুভঙ্কর বসু, কলকাতা: আজ, মঙ্গলবার পূর্ব নির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী সাত সকালেই প্রকাশিত হল পশ্চিমবঙ্গের খসড়া ভোটার তালিকা। শুরু হয়ে গিয়েছে নতুন ভোটারদের আবেদন গ্রহণের প্রক্রিয়া। অর্থাৎ, ২০২৬ সালের চূড়ান্ত ভোটার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্য ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করে আবেদন জানাতে পারবেন নতুন ভোটাররা। আর এই ফর্মের একটি অংশেই এসেছে বড়সড় বদল। ফর্ম পূরণের সময় আবেদনকারীকে উল্লেখ করতে হবে আধার তথ্য। পাশাপাশি, দিতে হবে একটি ঘোষণাপত্র বা ডিক্লারেশন ফর্মও। তাতে ৬ নম্বর ফর্মে আবেদনকারীর আত্মীয়ের নাম উল্লেখ করতে হবে। এছাড়া ২০০২ সালের তালিকায় থাকা কোনও ভোটারের নাম বাদ গিয়ে থাকলে, নতুন আবেদনকারী হিসেবে ডিক্লারেশন ফর্মে ওই বছরের তথ্য উল্লেখ করতে হবে।

    জানা যাচ্ছে, অফলাইন কিংবা অনলাইনে ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করতে যাওয়া সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীকে একটি অংশে লিখতে হবে তাঁর আধার নম্বর। শুধু তাই নয়, সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর যদি আধার নম্বর না থাকে, সেটাও উল্লেখ করতে হবে ফর্মে। কমিশন জানিয়েছে, আবেদনকারীর বৈধতা প্রমাণের জন্যই ৬ নম্বর ফর্মে আধার তথ্য উল্লেখ করতে বলা হয়েছে। সূত্রের খবর, নতুন আবেদন জানানোর সময় তাতে আধার তথ্য (থাকুক বা না থাকুক) উল্লেখ না করলে, পরবর্তীকালে আবেদনকারীকে শুনানির মুখোমুখি হতে হবে। এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি যে ভারতীয় হিসেবে এ দেশের ভোটার হওয়ার যোগ্য, তার সপক্ষে প্রমাণ দাখিল করতে হবে। ফলে অফলাইন বা অনলাইনে নতুন ভোটার হিসেবে আবেদনের ক্ষেত্রে ফর্মে আধার তথ্য উল্লেখ করা একরকম আবশ্যিক! 

    পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট আবেদনকারী যে বয়সের নিরিখে ভোটার হওয়ার যোগ্য, অর্থাৎ তাঁর বয়স ১৮ বছর বা তাঁর বেশি, তা প্রমাণের জন্য ফর্মে জন্ম তারিখ লেখা বাধ্যতামূলক। আর এই জন্ম তারিখের পক্ষে যে ছ’টি প্রমাণপত্র দাখিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে অন্যতম ‘আধার কার্ড’। অর্থাৎ জন্ম তারিখের প্রমাণপত্র হিসেবে ‘বার্থ সার্টিফিকেট’, ‘প্যান কার্ড’, ‘ড্রাইভিং লাইসেন্স’, ‘সরকার অনুমোদিত বোর্ডের মাধ্যমিক বা উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের সার্টিফিকেট’ এবং ‘পাসপোর্টে’র পাশাপাশি আধার কার্ডকেও স্বীকৃতি দিয়েছে কমিশন। এছাড়া আগেই বিজ্ঞপ্তি জারি করে কমিশন জানিয়েছে, অনলাইনে ৬ নম্বর ফর্ম পূরণের ক্ষেত্রে আধার আবশ্যিক। সংশ্লিষ্ট আবেদনকারীর ফোন নম্বর আধারের সঙ্গে সংযুক্ত না থাকলে তিনি অনলাইনে নতুন ভোটার হওয়ার জন্য আবেদন জানাতেই পারবেন না। ফলে অফলাইন কিংবা অনলাইন উভয় ক্ষেত্রেই নতুন আবেদন জানানোর সময় আধার তথ্য বাধ্যতামূলক করেছে কমিশন। আর এখানেই ওয়াকিবহাল মহলের প্রশ্ন, নতুন আবেদনের ক্ষেত্রে আধারের তথ্যকে বকলমে আবশ্যিক করা হলেও এসআইআরের ক্ষেত্রে কেন তাকে নির্ধারিত নথি হিসেবে গ্রহণ করা হল না? এমনকি, সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করার পরও নয়। যদিও কমিশনের মতো একটি সাংবিধানিক সংস্থার সিদ্ধান্তে সুপ্রিম কোর্ট হস্তক্ষেপ করা সত্ত্বেও মামলা চলাকালীন জ্ঞানেশ কুমাররা এই প্রশ্নের কোনও সদুত্তর দিতে পারেননি। উলটে ১২ নম্বর নথি হিসেবে আধারকে যুক্ত করলেও তার সঙ্গে আগের ১১টির একটি দাখিল করার নির্দেশনামা জারি হয়েছে নির্বাচন কমিশনের তরফে।

    এদিকে কমিশন সূত্রে খবর ছিল আজ, মঙ্গলবার দুপুরের মধ্যেই প্রকাশিত হবে খসড়া ভোটার তালিকা। যদিও দেখা গেল সকালেই খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশিত করেছে কমিশন। তালিকায় সংশ্লিষ্ট ভোটারের নাম রয়েছে কি না, তা অফলাইন এবং অনলাইনে দেখা যাবে। খসড়া তালিকা থেকে নাম বাদ পড়া ভোটারদের তালিকা প্রতিটি বুথ অর্থাৎ ভোটকেন্দ্রে টাঙানো থাকবে। সোমবারই বুথ লেভেল অফিসারদের কাছে খসড়া তালিকায় থাকা ভোটারদের নাম সংক্রান্ত একটি প্রাথমিক তথ্য পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। তবে ইনিউমারেশন ফর্ম পূরণ করার পরও ভোটারের নাম খসড়া তালিকায় না থাকলে, ১৫ জানুয়ারি পর্যন্ত অভিযোগ জানানোর সুযোগ পাবেন তিনি। যদিও এইসব ছাপিয়ে কৌতূহল এবং উদ্বেগের প্রথম সারিতে শুনানিতে ডাক পেতে যাওয়া বাংলার প্রায় ১ কোটি ৮৬ লক্ষ ভোটার। এবং তাদের ভবিষ্যৎ। খসড়া ভোটার তালিকায় প্রায় ৫৮ লক্ষের বেশি জনের নাম বাদ পড়েছে বলে নির্বাচন কমিশন সূত্রে খবর।  অনলাইন: নির্বাচন কমিশনের সরকারি ওয়েবসাইট 

    eci.gov.in টাইপ করে পশ্চিমবঙ্গের খসড়া তালিকা সংক্রান্ত ট্যাবে 

    ক্লিক করুন

     সিইও ওয়েস্ট বেঙ্গলের ওয়েবসাইট ceowestbengal.wb.gov.in এ গিয়ে খসড়া তালিকা সংক্রান্ত ট্যাবে ক্লিক করুন

     ইসিআই নেট অ্যাপে গিয়ে নিজের নাম এবং এপিক নম্বর দিন

     সংশ্লিষ্ট ভোটারের জেলার তথা জেলা নির্বাচনি আধিকারিকদের (ডিইও) ওয়েবসাইটে গিয়েও খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কি না, তা দেখা যাবেঅফলাইন: রাজ্যের সব বিএলওকে খসড়া তালিকার হার্ড কপি দেওয়া হবে। ভোটারেরা নিজ নিজ বুথের বিএলওর কাছে গিয়ে খসড়া তালিকায় নাম রয়েছে কি না, তা যাচাই করতে পারবেন

     আটটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিদের খসড়া তালিকা দেওয়া হবে। অর্থাৎ, বুথ লেভেল এজেন্ট মারফত খসড়া তালিকায় নাম আছে কি না, দেখতে পারবেন ভোটার

     খসড়া তালিকায় নাম থাকবে, এমন ভোটারদের তথ্য ইতিমধ্যেই বিএলও অ্যাপে পাঠানো হয়েছেনতুন ভোটারের জন্যঅফলাইন কিংবা অনলাইনে ৬ নম্বর ফর্ম পূরণ করতে হবে

    অনলাইনে আবেদনের ক্ষেত্রে আধার নম্বর দিয়ে ই-সাইন করতে হবে আবেদনকারীকে। সেক্ষেত্রে ফোন নম্বরের সঙ্গে আধার নম্বর সংযোগ থাকা ‘বাধ্যতামূলক’

    ইংরেজি কিংবা সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি ভাষায় ফর্ম পূরণ করা যাবে

    সাম্প্রতিকতম পাসপোর্ট সাইজ ছবি ফর্মে লাগিয়ে দিতে হবে

    বয়সের প্রমাণপত্র হিসেবে ফর্মে উল্লিখিত নথির একটি ‘সেলফ অ্যাটেস্ট’ করে দিতে হবে

    ঠিকানার প্রমাণপত্র হিসেবে ফর্মে উল্লিখিত যে কোনও একটি নথি সেলফ অ্যাটেস্ট করে দিতে হবে

    এছাড়াও ৬ নম্বর ফর্মের সঙ্গে একটি ঘোষণাপত্র বা ডিক্লারেশন ফর্ম সংযুক্ত করা বাধ্যতামূলক

    ইনিউমারেশন ফর্মের মতো ডিক্লারেশন ফর্মেও আবেদনকারীর আত্মীয়ের নাম সংশ্লিষ্ট অংশে উল্লেখ করতে হবে

    ভোটারের নাম কোনওভাবে বাদ চলে গিয়েছে। তিনি আবার নতুন করে আবেদন করছেন। সে ক্ষেত্রে তার নাম যদি ২০০২ সালের তালিকায় থেকে থাকে, ডিক্লারেশন ফর্মে তার উল্লেখ করতে হবে

    আধার কার্ড থাকলে সেই নম্বর উল্লেখ করতে হবে। আধার কার্ড না থাকলে সেই তথ্যও উল্লেখ করতে হবে ফর্মে
  • Link to this news (বর্তমান)