• নবীন-নীতিতে আস্থা রেখেও প্রভাব নিয়ে দ্বিধায় বঙ্গ বিজেপি
    আনন্দবাজার | ১৬ ডিসেম্বর ২০২৫
  • বিহারের মন্ত্রিসভা থেকে দেশের শাসক দলের সর্বভারতীয় কার্যকরী সভাপতি— মাত্র ৪৫ বছর বয়সে জাতীয় স্তরে আনকোরা মুখ নিতিন নবীনের এমন উত্থান ঘিরে চর্চা শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোট আসন্ন। তার আগে পড়শি রাজ্যের প্রাদেশিক রাজনীতি থেকে উঠে আসা নিতিনের পদ-প্রাপ্তি পশ্চিমবঙ্গে দলের অন্দরে কোনও প্রভাব ফেলবে কি না, তা নিয়ে নানা মত উঠে আসছে বিজেপির এখানকার নেতৃত্বের মধ্যে।

    নিতিনের পদ-প্রাপ্তির মধ্যে নির্বাচনী সাফল্য, কর্মী-সংস্কৃতির দলীয় বার্তা রয়েছে বলে মনে করছেন এই রাজ্যের বিজেপি নেতৃত্বের একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, বিহার পূর্ব ভারতের এমন একটি রাজ্য, যেখানে দল কখনও একক ক্ষমতায় সরকার গড়েনি। কিন্তু ক্রমাগত ভাল ফলের জেরে বর্তমানে আসন সংখ্যার নিরিখে সে রাজ্যের বৃহত্তম দল হয়েছে বিজেপি। তাঁদের মত, নবীনের পদ-প্রাপ্তির মাধ্যমে পূর্ব ভারতের রাজনীতিতে বিজেপির জমি শক্ত করার স্বীকৃতি মিলেছে। কার্যত বোঝানো হয়েছে, নির্বাচনী সাফল্য বিজেপিতে বয়স, স্থান, দলীয় পদমার্যাদা নির্বিশেষে স্বীকৃতিও আনতে পারে। তাই নিতিন-‘উদাহরণ’ বিধানসভা ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে একাংশের দাবি। নিতিনকে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়ে বিজেপির রাজ্য সভাপতি শমীক ভট্টাচার্যও বলছেন, “সংগ্রাম, ত্যাগ ও নিষ্ঠার রাজনীতি থেকে উঠে আসা এক জন প্রকৃত কার্যকর্তার এমন দায়িত্ব-প্রাপ্তি বিজেপির আদর্শনিষ্ঠা ও কর্মী-ভিত্তিক রাজনীতির প্রতিফলন।”

    তবে এর বিরুদ্ধ মতও রয়েছে। রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের একাংশের মতে, নিতিনের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের সরাসরি কোনও সম্পর্ক নেই। কোনও দিন এখানে দলের পর্যবেক্ষকও ছিলেন না। ফলে, তাঁর পদ-প্রাপ্তিতে এখানকার রাজনীতিতে আকাশ-কুসুম ফারাক হবে না। বরং, পশ্চিমবঙ্গে রাজনীতি করেছেন বা এই রাজ্য চেনেন, এমন কেউ ওই পদে এলে এখানে প্রভাব পড়তে পারত।

    যদিও শমীকের কথার সূত্র ধরেই রাজ্য বিজেপির এক নেতা দলে ‘প্রজন্মান্তরে’র কথা বলছেন। তাঁর মতে, “দলে সর্বভারতীয় ক্ষেত্রে প্রজন্মান্তর হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গের নবীন প্রজন্মের রাজনীতিকদের কাছে এটা বার্তা। কংগ্রেস বা সিপিএমের মতো দল এটা ভাবতেই পারে না।” বিজেপির আর এক নেতার বক্তব্য, “প্রবীণের তুলনায় নবীন প্রজন্মের প্রতিনিধিদের শেখার ক্ষমতাও অনেক বেশি। ফলে, নিতিন এই বয়সেই সরাসরি নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহদের থেকে রাজনীতি ও সংগঠনের নানা খুঁটিনাটি আরও গভীর ভাবে জানতে পারবেন।” তবে দলের কর্মী মহলে প্রশ্ন, এ রাজ্যে তৃণমূল কংগ্রেসকে হারাতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব সত্যিই ‘আম্তরিক’ কি না, বারবার নানা ঘটনায় উঠে আসা এই সংশয়ের কোনও মীমাংসা কি নিতিন দায়িত্ব নেওয়ার পরে হবে? তা ছাড়া, তৃণমূল স্তরে দলের সংগঠন তৈরি এবং নতুন প্রজন্মের নেতা-কর্মী তুলে আনা নিয়েও নানা সমস্যা বঙ্গ বিজেপির রয়েছে, যা শুধু জাতীয় স্তরে নতুন কার্যনির্বাহী সভাপতি এলে নিরসন হয় না— এমন মতও আছে কর্মীদের মধ্যে।

    বিজেপির এক সাংগঠনিক জেলার বয়সে নবীন সভাপতি মনে করছেন, “সাংগঠনিক কারণেই ব্যক্তির পরিবর্তন বিজেপিতে সামগ্রিক কোনও প্রভাব ফেলে না।” তবে তিনিও মানছেন, বিহারে দলের বিপুল সাফল্যের স্বীকৃতি এই ঘটনা। পশ্চিমবঙ্গেও যদি এমন সাফল্য মেলে, তা হলে আগামী দিনে সর্বভারতীয় স্তরে এখানকার কোনও নেতাও জায়গা করে নিতে পারেন। আবার বিজেপির এক প্রবীণ নেতার পাল্টা মত, এখানে এখন সবই ‘ভাড়া করা নেতা’। তপন শিকদার ছাড়া এই রাজ্য থেকে ক’জন নেতা সর্বভারতীয় স্তরে গুরুত্ব পেয়েছেন!
  • Link to this news (আনন্দবাজার)