বিধান সরকার: জীবিত তৃণমূল কাউন্সিলর এসআইআর খসড়া তালিকায় মৃত! তার জেরে শ্মশানে গিয়ে হল অভিনব প্রতিবাদ। দিব্য জীবিত, অথচ খসড়া তালিকায় মৃত ডানকুনির তৃণমূল কাউন্সিলর সূর্য দে। এসআইআর নিয়ে বারবার নানা মহলে আপত্তি তোলা হয়েছিল। তা গিয়েছিল শীর্ষ আদালত পর্যন্ত। আজ, ১৬ ডিসেম্বর, এসআইআর-এর খসড়া তালিকা প্রকাশ। তা নিয়েও উত্তাল জেলা থেকে শহর। আর তারই মধ্যে এই কাণ্ড।
শ্মশানে গিয়ে প্রতিবাদ
জীবিত তৃণমূল কাউন্সিলর এসআইআর খসড়া তালিকায় মৃত! তার জেরে শ্মশানে গিয়ে হল অভিনব প্রতিবাদ। দিব্য জীবিত, অথচ খসড়া তালিকায় মৃত ডানকুনির তৃণমূল কাউন্সিলর সূর্য দে।
তুমুল হইচই
নির্বাচন কমিশনের মৃত ও স্থানান্তরিতদের তালিকায় মৃত হিসেবে নাম প্রকাশিত হয়েছে ডানকুনি পৌরসভার ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর সূর্য দে'র। যা নিয়ে তুমুল হইচই পড়েছে ডানকুনি এলাকায়।
মানুষকে হয়রান, চক্রান্ত
এদিন বাতিলের তালিকা নিজের নাম মৃত দেখার পরে নিজে পায়ে হেঁটেই কালিপুর শ্মশানে পৌঁছন তৃণমূল কাউন্সিলর সূর্য দে, সঙ্গে ছিলেন তাঁর সহকর্মীরা। সূর্যের দাবি, ইলেকশন কমিশন যখন আমাকে মৃত দেখিয়ে দিয়েছে, তখন মুখ্য নির্বাচন আধিকারিক জ্ঞানেশ কুমার এসে আমার সৎকার করুন। নির্বাচন কমিশনের এসআইআর নিয়ে তৃণমূল আগে থেকেই অভিযোগ করেছিল। তাদের দাবি ছিল, মানুষকে হয়রান করার জন্য এসব করা হচ্ছে। বৈধ ভোটারকে বাদ দেওয়ার চক্রান্ত করা হচ্ছে। আর এই ঘটনা তারই প্রমাণ।
এসআইআর প্রেক্ষিত
সুপ্রিম কোর্ট ১১ নভেম্বর, নির্বাচন কমিশনের স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন বা ভোটার তালিকার বিশেষ নিবিড় সংশোধনের নেতিবাচক ছবি তুলে ধরার জন্য বিরোধী দল, নেতা ও এনজিওদের সমালোচনা করেছে। বিরোধী পক্ষ অভিযোগ করেছে, প্রক্রিয়াটির আড়ালে নাগরিকত্ব যাচাই চলছে। এর ফলে লক্ষ লক্ষ নাগরিক তথা ভোটার তাঁদের ভোটাধিকার হারাতে পারেন।
সুপ্রিম-জবাব
প্রধান বিচারপতি-পদাধিকারী বিচারপতি সূর্য কান্ত ডিএমকে এবং পশ্চিমবঙ্গের নেতাদের উদ্দেশ্য করে বলেছিলেন-- আপনারা এমনভাবে বিষয়টা দেখাতে চাইছেন, যেন দেশে এই প্রথম ভোটার তালিকা সংশোধন হচ্ছে! আমরাও বাস্তব পরিস্থিতি জানি। একটি সাংবিধানিক কর্তৃপক্ষ এই প্রক্রিয়া চালাচ্ছে... কিছু পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকতেই পারে। সেক্ষেত্রে সেগুলি চিহ্নিত করে সংশোধন করা যেতে পারে। কিন্তু আপনারা এমনভাবে বলছেন, তাতে মনে হচ্ছে, এতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া যেন বিপন্ন হয়ে পড়ছে!
বিরোধীদের আপত্তি
ডিএমকের পক্ষে সওয়ালকারী সিনিয়র অ্যাডভোকেট কপিল সিব্বল এ বিষয়ে যুক্তি দেন, অতীতে ভোটার তালিকা সংশোধন করা হলেও সেই প্রক্রিয়া ছিল সতর্কতামূলক এবং দীর্ঘ, প্রায় তিন বছর সময় নেওয়া হত। কিন্তু এখন নির্বাচন কমিশন এটি এক মাসের মধ্যে করতে চাইছে। তিনি অভিযোগ করেন, এর ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষ ভোটার তালিকা থেকে বাদ পড়তে চলেছেন। সিব্বল বর্তমান এসআইআর-কে প্রহসনমূলক প্রক্রিয়া বলে আখ্যা দেন। তিনি নির্বাচন কমিশনের নথি তালিকায় ১ জুলাই, ২০২৫-এর তথ্য-সহ বিহার এসআইআর-এর ভোটার তালিকার নির্যাস অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়টিকে ব্যাখ্যাতীত বলে উল্লেখ করেন। তিনি প্রশ্ন তোলেন, তামিলনাড়ুর নির্বাচনের সঙ্গে বিহার এসআইআর-এর কী সম্পর্ক?
মেশিন-রিডেবল নথি?
এনজিও 'অ্যাসোসিয়েশন ফর ডেমোক্রেটিক রিফর্মস' বা এডিআর (ADR)-এর পক্ষ থেকে অ্যাডভোকেট প্রশান্ত ভূষণ মৃত এবং ভুয়ো ভোটারদের বাদ দেওয়ার জন্য ডি-ডুপ্লিকেশন সফটওয়্যার ব্যবহার এবং ভোটারদের কাছে অ্যাকনলেজমেন্ট স্লিপ দেওয়ার দাবি জানান। তিনি ২০০৩ সালের ভোটার তালিকা মেশিন রিডেবল বা মেশিন-পাঠযোগ্য করে প্রকাশেরও দাবি জানান। বিচারপতি জয়মাল্য বাগচী অবশ্য মেশিন-পাঠযোগ্য ভোটার তালিকা প্রকাশের বিষয়ে আপত্তি জানান, কারণ এটি ভোটারদের গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারে বলে তিনি মনে করেন।